Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই কি ডাল রফতানি অবাধ

এ দেশে ডালের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন হয় না। খুব ভালো চাষ হলেও বছরে ১৮০ লক্ষ টন ডাল উৎপাদন হয়।

নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২১
Share: Save:

ডালের রফতানিতে ১০ বছরের পুরনো নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।

সরকারের যুক্তি, গত মরসুমে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ডাল উৎপাদন হয়েছে। চাষিরা যাতে ভালো দাম পান, সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, গুজরাতের ভোটের আগে ব্যবসায়ী ও বড় সংস্থাগুলিকে ফায়দা পৌঁছে দিতেই কি এই সিদ্ধান্ত?

এ দেশে ডালের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন হয় না। খুব ভালো চাষ হলেও বছরে ১৮০ লক্ষ টন ডাল উৎপাদন হয়। কিন্তু বাজারে চাহিদা ২২০ থেকে ২৫০ লক্ষ টনের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। প্রতি বছরই বিদেশ থেকে ডাল আমদানি করে সে অভাব মেটাতে হয়। সে কারণেই ২০০৬-’০৭ থেকে সব রকম ডালের রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তা হলে রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হল কেন? আজ মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্তের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘২০১৬-’১৭ মরসুমে রেকর্ড পরিমাণ ডাল উৎপাদন হয়েছে। যার পরিমাণ ২২৯.৫ লক্ষ টন। রফতানির বাজার খুলে দিলে চাষিরা ভালো দাম পাবেন। আরও বেশি জমিতে ডাল চাষে উৎসাহ পাবেন।’’

কিন্তু সর্বভারতীয় কৃষক সভার যুগ্ম সম্পাদক বিজু কৃষ্ণনের প্রশ্ন, ‘‘চাষিদের কাছে কোথায় ডাল রয়েছে? ডাল তো রয়েছে ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা হিমঘরে ডাল মজুত করেছে। প্রথম সারির শিল্প সংস্থাগুলি খাদ্যশস্যের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এতে তাদেরই ফায়দা হবে। চাষিরা সরকারের বেঁধে দেওয়া ন্যূনতম সহায়ক মূল্য, কুইন্টাল প্রতি ৫০৫০ টাকাই পাচ্ছেন না। খুব বেশি হলে কুইন্টালে ৩৮০০ টাকা মিলছে। অথচ কর্নাটক, তেলঙ্গানার মতো রাজ্যে সরকারি হিসেবেই চাষের খরচ সহায়ক মূল্যের থেকে বেশি।’’

বস্তুত, ‘অল ইন্ডিয়া পাল‌সেস অ্যান্ড গ্রেনস অ্যাসোসিয়েশন’-এর মতো ব্যবসায়ী সংগঠনই গত কয়েক মাস ধরে ডালে রফতানি অবাধ করার দাবি জানিয়ে আসছে। সেই দাবি মেনেই সেপ্টেম্বর মাসে তুর, উরদ, মুগের মতো কিছু ডালে রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল। আজ সব রকম ডালেই রফতানির দরজা খুলে দেওয়া হল।

প্রশ্ন হল, ফের দেশের বাজারে ডালের দাম বাড়লে কী হবে? কৃষ্ণন মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গরিবদের কাছে ডালই হল প্রোটিনের প্রধান উৎস। তাই এর চাহিদাও বছর বছর বাড়ছে। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই প্রথমে অতিবৃষ্টি, পরে খরার ধাক্কায় অড়হর ডালের দাম প্রতি কেজিতে ২০০ টাকা ছুঁয়েছিল। রাহুল গাঁধী ‘হরহর মোদী, অড়হর মোদী’ বললে কটাক্ষ করেছিলেন। তার পর আমদানি বাড়িয়ে, চাষিদের জন্য ডালের দাম বাড়িয়ে মজুতের পরিমাণ বেড়েছে। ফের সেই পরিস্থিতি হলে কী হবে? বিশেষত, ২০১৭-’১৮-র চলতি মরসুমেও ডালের উৎপাদনে সরকারের লক্ষ্য ২২৯ লক্ষ টন। যা দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। সরকারের যুক্তি, খাদ্য-গণবণ্টন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সচিবরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখবেন। চাষিরা রফতানি বাজারে ভালো দাম পেয়ে আরও ডাল চাষে উৎসাহিত হলে, ধীরে ধীরে আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে। আন্তর্জাতিক বাজারের মান অনুযায়ীও কৃষকরা চাষ করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi রাহুল গাঁধী
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE