Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বেতন বাড়াও-২

বাজার আগুন, সাংসদরা হিমশিম সংসার চালাতে

সংসদের খাবারের জন্য ভর্তুকি নিয়ে বিতর্কের রেশ এখনও মেটেনি। এর মধ্যেই বেতনবৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন সাংসদরা। তা-ও আবার একেবারে দ্বিগুণ! ফলে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে বিতর্ক। সাংসদদের দাবি, এক ধাক্কায় মাইনে বাড়াতে হবে একশো শতাংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৫
Share: Save:

সংসদের খাবারের জন্য ভর্তুকি নিয়ে বিতর্কের রেশ এখনও মেটেনি। এর মধ্যেই বেতনবৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন সাংসদরা। তা-ও আবার একেবারে দ্বিগুণ! ফলে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে বিতর্ক।

সাংসদদের দাবি, এক ধাক্কায় মাইনে বাড়াতে হবে একশো শতাংশ। প্রাক্তন সাংসদদের পেনশন ৭৫ শতাংশ বাড়ানো-সহ বিভিন্ন দাবিতেও সরব হয়েছেন তাঁরা।

‘জয়েন্ট কমিটি অন স্যালারি অ্যান্ড অ্যালাওয়েন্স অব মেম্বার অব পার্লামেন্ট’-এর পক্ষ থেকে সম্প্রতি ৬০ দফার সুপারিশ পত্র পেশ করা হয়েছে সরকারের কাছে। সেখানে বেতনবৃদ্ধির পাশাপাশি সার্বিক বেতন হার পর্যালোচনার কথাও বলা হয়েছে। একটি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘২০১০-এর পর সাংসদদের মাইনে বাড়েনি। তাঁরা সরকারি কর্মচারীদের মতো ডিএ-ও পান না।’’ পাঁচ বছরে বাজার অগ্নিমূল্য হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন কমিটির অনেক সদস্য।

বিজেপি সাংসদ যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন এই কমিটির সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, প্রাক্তন সাংসদকেও দেশের মধ্যে ২০ থেকে ২৫টি বিনামূল্যে বিমানযাত্রার কোটা দিতে হবে। এ ছাড়া বর্তমান সাংসদদের এক জন সফরসঙ্গীকে প্রথম শ্রেণির রেল টিকিট দেওয়া, দৈনিক ভাতা বাড়ানো (বর্তমানে যা ২০০০ টাকা), ছেলে-মেয়ে এবং নাতি-নাতনিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থার মতো বিষয়গুলিও সুপারিশে রয়েছে।

তবে কারও কারও মতে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে এই একশো শতাংশ বেতনবৃদ্ধির দাবি খাপ খায় না। আবার ‘পেটে খিদে মুখে লাজ’— মনোভাবও রয়েছে অনেকের। ঘরোয়া ভাবে অনেক সদস্যই (ভুল বার্তা যাওয়ার ভয়ে নাম প্রকাশে নারাজ) জানাচ্ছেন, এই অগ্নিমূল্যের বাজারে সাংসদদের বর্তমান বেতন (মাসে ৫০ হাজার টাকা) নাম মাত্র। পরিবার নিয়ে দিল্লির মতো ‘খরুচে’ শহরে থাকতে গেলে এই টাকায় মাসের

তিন সপ্তাহও গড়ায় না। তা ছাড়া, অনেক পদস্থ আমলার বেতনও এর চেয়ে বেশি।

তৃণমূলের লোকসভার নেতা তথা এই সংসদীয় বেতন কমিটির অন্যতম সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই দাবি দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সচিব পদের বেতন এবং সাংসদের বেতনের মধ্যে ফারাক থাকা উচিত নয়। প্রোটোকল অনুযায়ী সাংসদ সচিবের থেকে উচ্চপদমর্যাদা সম্পন্ন। মন্ত্রিসভার সচিবের বেতন বর্তমানে মাসে ৮০ হাজার টাকা। এক জন সাংসদের বেতন ৫০ হাজার।’’ কমিটিরই আর এক সদস্য বিজেপি সাংসদ সি পি ঠাকুর খোলাখুলিই বলছেন, ‘‘সাংসদদেরও দায়দায়িত্ব থাকে। তাঁরা প্রথম শ্রেণিতে রেলসফর করলে সঙ্গে কাউকে নিতে পারেন না। এটা সমস্যার।’’ তাঁর মতে, ‘‘দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। বর্তমান মাইনেতে চালানো শক্ত।‌’’

অন্য রকম ভাবনার মানুষও আছেন। যেমন সিপিআইয়ের প্রাক্তন সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু যতটা বেতন বাড়ানোর জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে, তা বড্ড বাড়াবাড়ি। মনে রাখতে হবে দেশের ৩০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন। দেশও আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।’’

কিন্তু বেশি বেতন পেলেও দেশের কথা ভেবে তা ফিরিয়ে দেবেন— এমন নেতা কি আছেন? তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘আমাদের নেত্রী কখনও কোনও সরকারি পদের বেতন নেন না। এটা আমাদের সামনে পথনির্দেশিকার মতো।’’ কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ অনুসরণ করে সাংসদেরাও বেতন নেন না এমনটা নয়। ফলে বর্ধিত বেতন পেলে কি ডেরেক নেবেন না? তাঁর জবাব, ‘‘বিষয়টি প্রস্তাবের পর্যায়ে রয়েছে। কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। এখনই মন্তব্য করতে চাই না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE