গুজরাতের কোদিনারে জনসভায় অমিত শাহ। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
আর পাঁচটা হাইস্কুলের সঙ্গে নারাণপুরার সুন্দরনগরের সাংভি হাইস্কুলের ফারাক নেই। গুজরাত বা দেশের অন্য অনেক স্কুলের মতোই ভোটের সময় এই স্কুলেও পোলিং বুথ বসে।
সাদা চোখে ফারাক না থাকলেও এই স্কুল এখন ‘রাজনৈতিক তীর্থক্ষেত্র’। আটের দশকে ভোটের সময় এই স্কুলেই বিজেপির পোলিং এজেন্ট হয়ে হাত পাকানো শুরু করেছিলেন অমিত অনিল চন্দ্র শাহ। এই পাড়াতেই তখন বাস। তার পর নারাণপুরা ওয়ার্ডের দলীয় সচিব। বিজেপির সর্বশক্তিমান সভাপতি গত পাঁচ বছর এই নারাণপুরা কেন্দ্রেরই বিধায়ক। এ বার ভোটে লড়ছেন না বটে। কিন্তু রাহুল গাঁধীর কথায়, আসলে তিনিই রিমোট কন্ট্রোলে গুজরাত চালান।
এ হেন তীর্থক্ষেত্রে এসে ‘গাইড’ হিসেবে পাওয়া গেল জগদীশভাই দেশাইকে। বিজেপির নারাণপুরা শাখার সভাপতি। অমিত শাহ কী ভাবে সংগঠন গড়ে তোলেন, তার সাক্ষী। জগদীশভাই বললেন, ‘‘অমিতভাইয়ের মূল মন্ত্র হল মাইক্রো প্ল্যানিং। একেবারে ভোটার তালিকায় একটা পৃষ্ঠায় ৪০ থেকে ৪৮টা পরিবারের নাম থাকে। অমিতভাই এক একটা পৃষ্ঠার দায়িত্ব এক এক জনকে দেন। তাঁরা হলেন পেজ-প্রমুখ। তাঁদের মাথায় ওয়ার্ড-প্রমুখ। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রকে উনি বলেন, শক্তি-কেন্দ্র। তার দায়িত্বে আর এক জন প্রমুখ নেতা।’’ শুনতে শুনতে বাংলায় সিপিএমের অধুনা-বিলুপ্ত ভোট-মেশিনারির কথা মনে পড়ে।
অমিত শাহ এ বার রাজ্যসভায়। ভোটে লড়ছেন না। তাই তাঁর গড়ে বিজেপিকে ধাক্কা দিতে নারাণপুরা থেকেই ‘ঘর ঘর কংগ্রেস’-এর নামে দরজায় দরজায় প্রচার শুরু করেন রাহুল গাঁধীর দলের নেতারা। জগদীশভাই হাসেন। কংগ্রেসের ঘুম ভাঙার আগেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে অমিত শাহের প্রচার শেষ হয়ে গিয়েছিল! দীর্ঘ দিন সারখেজ-গাঁধীনগর হাইওয়ের আবাসনে ঘর নিয়েছেন। কিন্তু নারাণপুরার অলিগলি মুখস্থ।
সাধে কি আর অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণী থেকে নরেন্দ্র মোদী, ভোটের ব্যাপারে তাঁকে চোখ বুজে বিশ্বাস করতেন! বাজপেয়ী যখন গাঁধীনগর থেকে লডেছেন, অমিত শাহই সব দায়িত্বে। আডবাণী বছরের পর বছর গাঁধীনগরের সাংসদ। প্রচারের দায়িত্ব অমিত শাহর কাঁধে। মোদী গুজরাতের সাংগঠনিক সচিব হয়ে এলেন। বিশ্বস্ত অমিতই রাজ্যের বিজেপি সদস্যদের নাম-ধামের তালিকা তৈরির দায়িত্ব পেলেন।
নিজে প্রথম ভোটে লড়েছিলেন অমদাবাদেরই সারখেজ কেন্দ্র থেকে। পরপর চারবার বিধায়ক। প্রথমবার মাত্র ২৫ হাজারের ব্যবধানে জিতেছিলেন। চতুর্থবারে সেটা বেড়ে ২.৩২ লক্ষ। আসন পুনর্বিন্যাসের পর ২০১২-য় চলে আসেন পুরনো নারাণপুরায়।
শুধু দলের নেতা-কর্মীদের শুধু দায়িত্ব দেওয়া নয়। তাদের সুখ-দুঃখেও অমিত শাহ পাশে। জন্মদিন হোক কিংবা বিবাহবার্ষিকী, বাড়িতে কোনও শুভ অনুষ্ঠান বা আপদ-বিপদ, অমিত শাহর শুভেচ্ছা বা শোকবার্তার চিঠি ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবে। কার পরিবারে কী সমস্যা, সব তাঁর নখদর্পণে।
নারাণপুরা ঘুরে কাউকে জয় শাহর নামে দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন করুন। সবাই উদাসীন হয়ে তাকাবেন। যেন কিছুই শোনেননি। অমিত শাহর আতঙ্ক? মুখ খুললেই বিপদে পড়ার ভয়?
জগদীশভাই বলেন, ‘‘না। ভালবাসা। অমিতভাই সাধারণ ভাবে থাকেন। তাই বলে কি গরিব ঘরের ছেলে? ওঁর বাবা শেয়ার বাজারে লেনদেন করতেন। অমিতভাইও করেছেন। ছেলেও নিজের ব্যবসা করছে। রোজগার করছে। ও নিয়ে কেউ মাথাও ঘামায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy