Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি চান ধীবরেরা

প্রশ্নকর্তার নাম ভরতভাই মোদী। গুজরাতের পোরবন্দরের মৎস্যজীবী নৌকা মালিক সংগঠনের সভাপতি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রেমাংশু চৌধুরী
অমদাবাদ শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩৭
Share: Save:

গুজরাতের মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে করাচির জেলে বছরের পর বছর বন্দি থাকেন। নরেন্দ্রভাই মোদী পাকিস্তানের সঙ্গে একটা চুক্তি করেন না কেন?

প্রশ্নকর্তার নাম ভরতভাই মোদী। গুজরাতের পোরবন্দরের মৎস্যজীবী নৌকা মালিক সংগঠনের সভাপতি। এবং পোরবন্দরের পুরনো বিজেপি নেতা। জনসঙ্ঘের সময় থেকেই যিনি গাঁধীর জন্মস্থানে গেরুয়া শিবিরের মুখ।

গুজরাতের শেষ দফার ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তান নিয়ে কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন। গুজরাতের ভোটে কংগ্রেস ও পাকিস্তান হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু তাঁর নিজের রাজ্যেই নরেন্দ্র মোদীর পাকিস্তান-নীতি প্রশ্নের মুখে। সেই প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির অন্দরমহল থেকেই।

শুধু পোরবন্দর নয়। বেট দ্বারকা, ওখা, কচ্ছের জাখাউ, জুনাগড়ের মানগ্রোল, গির সোমনাথের ভেরাভাল—গুজরাতের প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার উপকূলে যেখানেই মৎস্যজীবীদের বাস, সেখানেই এই ক্ষোভ। ক্ষোভের কারণ, মোদীর পাকিস্তান নীতির ওঠানামার সঙ্গে গুজরাতের মৎস্যজীবীদের ভাগ্যও ঘুরপাক খাচ্ছে।

মোদী তাঁর শপথগ্রহণে নওয়াজ শরিফকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। পাকিস্তান করাচির জেলে বন্দি ভারতীয় মৎস্যজীবীদের মুক্তি দিয়েছিল। পরে দু’দেশের সম্পর্ক খারাপ হতেই ভুল করে পাকিস্তানের এলাকায় ঢুকে পড়া মাছ ধরা নৌকা আটক করা হয়েছে। জেলেদের ঠাঁই হয়েছে করাচির লানধি বা মালির জেলে। এক এক বন্দর থেকে জল-সীমানার দূরত্ব এক এক রকম। তার উপরে স্যার ক্রিক এলাকায় সীমান্ত নিয়েও বিবাদ। ফলে মাঝ সমুদ্রে কোথায় ভারতের এলাকা শেষ, কোথায় পাকিস্তানের এলাকা শুরু, তা ঠাওর করা মুশকিল। চলতি বছরেই পাকিস্তান গুজরাতের প্রায় ৪৯৮ জন মৎস্যজীবী, ৭০টি নৌকা আটক করেছে।

পোরবন্দরে দেখা মিলল মৎস্যজীবী জিতেন আদোদারার। দু’দিন আগেই নৌকা ভর্তি মাছ নিয়ে ফিরেছেন। আবার জলে নামার প্রস্তুতি চলছে। জিতেনের বক্তব্য, ‘‘দু’টন মাছ ধরা না পড়লে লাভ হয় না। আগে পাঁচ-ছ’দিন লাগত। এখন ১০-১৫ দিন জলে থাকতে হয়। জলে এত দূষণ বেড়েছে যে গভীর সমুদ্রে যেতে হয়। তখনই সীমানার গণ্ডগোল হয়। পাকিস্তানের বাহিনী একেবারে ওৎ পেতে থাকে।’’

ভরতভাইয়ের যুক্তি, ‘‘আমাদের উপকূলরক্ষী বাহিনীও পাকিস্তানের ধীবরদের আটক করে রাখে। কিন্তু তাতে লাভ কী? নরেন্দ্রভাই মোদীর সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি করে নির্দিষ্ট মাছ ধরার এলাকা চিহ্নিত করতে পারে। তা হলে দু’দেশের মৎস্যজীবীদেরই হেনস্থা কমে।’’ এই দাবি নিয়ে রাহুল গাঁধীর কাছে গিয়ে দলের তোপের মুখে পড়েছেন তিনি।

গুজরাতের প্রায় ৩৫টি আসনে কোলি, খরবা সম্প্রদায়ের মৎস্যজীবীরা খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারেন। বিপদ বুঝে তাই বিজেপিও প্রচারে নেমেছে, মোদী জমানায় পাকিস্তানের জেল থেকে দ্রুত মৎস্যজীবীদের ছাড়িয়ে আনা হচ্ছে। অক্টোবর মাসেও ৬৮ জন মৎস্যজীবী করাচির জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু তথ্য বলছে, তাঁরা প্রায় ৩ বছর করাচির জেলে বন্দি ছিলেন। রাজকোটের বিজেপি মুখপাত্র রাজু ধ্রবর অবশ্য দাবি, ‘‘মৎস্যজীবীরা বিজেপির সঙ্গে ছিলেন, বিজেপির সঙ্গেই থাকবেন। ওঁরা জানেন, যদি কিছু করার থাকে, নরেন্দ্র মোদীই করবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE