খুচরো গুনে রোজ পয়সা মেটান অটোর। সংসার চলে পড়শির থেকে ধারদেনা করে। কিন্তু আয়কর দেন ৩ লক্ষ টাকার।
পেশায় প্রপার্টি ডিলার হলেও জীবনযাত্রায় ছাপোষা। দেখে বোঝার উপায় নেই, তাঁর ঝুলি থেকেই বেরিয়ে আসতে পারে কাঁড়ি কাঁড়ি কালো টাকা। প্রায় ১৪ হাজার কোটি।
কয়েক মাস আগে মোদী সরকার একটি প্রকল্প চালু করে, যাঁর কাছে যত কালো টাকা আছে ঘোষণা করতে হবে। ধাপে ধাপে কর, জরিমানা দিয়ে পাওনা-গণ্ডা মিটিয়ে দিতে হবে। সেই প্রকল্প বন্ধের মাত্র আধ ঘণ্টা আগে মোদীর রাজ্য গুজরাতেই মহেশ শাহ নামের এই প্রপার্টি ডিলার ঘোষণা করেন, তাঁর কাছে রয়েছে ১৩,৮৬০ কোটি টাকা। টনক নড়ে আয়কর দফতরের। খবর পৌঁছয় মোদী, অরুণ জেটলির কানেও। মোদী নির্দেশ দেন, মহেশকে যেন রেয়াত করা না হয়।
৩০ নভেম্বরের মধ্যে কর জমা দেওয়ার ছিল। কিন্তু সে সব না দিয়ে মহেশ হঠাৎ উধাও। শনিবার আত্মপ্রকাশ করেন এক চ্যানেলে। দাবি করলেন, সব টাকাই কোনও না কোনও নেতা বা ব্যবসায়ীর। তাঁর কাছে টাকাগুলি রাখা হয়েছে মাত্র। টেলিভিশন দেখে আয়কর দফতর সেখান থেকেই তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। জেরা করেও কারও নাম বেরিয়ে আসেনি।
গুজরাতে যে হার্দিক পটেল আন্দোলন করে বিজেপির ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি এর মধ্যে টুইট করে দাবি করেন, সব টাকা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের। আসরে নামেন অরবিন্দ কেজরীবালও। প্রশ্ন তোলেন, সত্যি হলে অমিত শাহ জবাব দিন। জবাবে বিজেপি পাল্টা প্রশ্ন তোলে, এ টাকা যদি বিজেপিরই কারও হতো, তা হলে বিজেপিরই রাজ্যে বিজেপিরই আয়কর দফতর এতটা সক্রিয় হতো কি? নিজেদের বাঁচাতেই কি বিরোধীরা আগেভাগে বিজেপি নেতাদের দিকে তোপ দাগছেন?
কিন্তু এই সব চাপানউতোরে যে উত্তর এখনও মেলেনি, সেটা হল যে ব্যক্তি নিতান্ত সাদামাটা ঘরে থাকেন, জীবনযাপন সাধারণ— তাঁর এত কালো টাকা কোথা থেকে এল? হাওয়ালার টাকা কি খাটাচ্ছিলেন তিনি?
আয়কর দফতর যে ৬৭ হাজার কোটি কালো টাকার হিসেব দিয়েছে, তাতে রাখা হয়নি মহেশ শাহর অর্থ। যেমনটি রাখা হয়নি মুম্বইয়ে আব্দুল রেজ্জাক মহম্মদ সঈদ ও তাঁর পরিবারের আরও চার জনের দু’লক্ষ কোটি টাকার কালো টাকা। কারণ আয়কর দফতরের মনে হয়েছে, এঁদের ঘোষণায় কোনও গলদ আছে।
মুম্বইয়ের আব্দুল রেজ্জাকের বাড়ির যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, সেটিও সাধারণ একটি কো-অপারেটিভ সোসাইটি। তালা বন্ধ। ওই নামে সেখানে কেউ থাকেন বলেও জানেন না প্রতিবেশীরা। তার পাশে মহেশ শাহকে অন্তত খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু জেরার মুখে তিনি যে ভাবে রোজ নিজের বক্তব্য পাল্টাচ্ছেন, তাতে উত্তরের থেকে আরও বেশি প্রশ্নের জন্ম হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের নজর থেকে তাঁকে বাঁচাতে পুলিশের পোশাক পরিয়ে লুকিয়ে মেয়ের বাড়ি পাঠানো হয়েছে, কিন্তু তবু উত্তর মেলেনি।
আয়কর দফতরের তদন্তকারী অফিসার পি সি মোদীর মতে, ‘‘আপাতত মহেশকে প্রাথমিক জেরা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কারও নাম বলেননি। শুধু বলেছেন, পয়সার বদলে কমিশন পেতেন।’’
কারা কমিশন দিলেন, অনুসন্ধান এখনও জারি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy