Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ধ্বংস করা হচ্ছে জেএনইউ-কে: রোমিলা

জেএনইউ প্রতিষ্ঠার পরেই প্রথম যে শিক্ষকেরা সেখানে যোগ দিয়েছিলেন, রোমিলাদেবী তাঁদের অন্যতম। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য গোপালস্বামী পার্থসারথির জীবন নিয়ে একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে আজ গিয়েছিলেন তিনি।

রোমিলা থাপার।

রোমিলা থাপার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৪:০৭
Share: Save:

বিরাট মিছিল হয়েছে শুক্রবারই। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যাকে তুলে ধরা সেই মিছিলে পুলিশি দমন-পীড়নের অভিযোগও উঠেছে। এই ঘটনার পরে আজ নিজের আশঙ্কাটা সরাসরি প্রকাশ করেই ফেললেন ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার। বললেন, ‘‘জেএনইউ-কে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। এতে হয়তো বিস্ময়ের কিছু নেই।’’

জেএনইউ প্রতিষ্ঠার পরেই প্রথম যে শিক্ষকেরা সেখানে যোগ দিয়েছিলেন, রোমিলাদেবী তাঁদের অন্যতম। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য গোপালস্বামী পার্থসারথির জীবন নিয়ে একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে আজ গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘অনেক যত্ন নিয়ে গড়া হয়েছিল জেএনইউ-কে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে তার তুলনা হত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু ডিগ্রি দেওয়া নয়, প্রশ্ন তুলতে শিখিয়ে জ্ঞানবৃদ্ধি করা। সেই ভাবনাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটাকেই ভেঙে ফেলা।’’

মোদী জমানায় একের পর এক ঘটনায় জেএনইউ-এর সংস্কৃতির উপরে আঘাত হানা হচ্ছে বলে লাগাতার অভিযোগ উঠছে। ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকে পড়ুয়াদের ‘দেশদ্রোহী’ বলে গ্রেফতার করার ঘটনাও ঘটেছে। যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত জেএনইউ-এর অধ্যাপক অতুল জোহরির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না হওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন পড়ুয়া ও শিক্ষকদের একাংশ। গত কাল সংসদ যাত্রার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। আইএনএ মার্কেটের সামনে বিক্ষোভকারীদের আটকায় দিল্লি পুলিশ। চলে লাঠি ও জলকামান। অভিযোগ, সেখানে পুলিশের হাতে নিগৃহীতা হন দুই মহিলা সাংবাদিক। প্রতিবাদে আজ ফের মিছিল করেছেন পড়ুয়া ও সাংবাদিকেরা।

পুলিশের ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ কেন্দ্রও। জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার স্টেইনমিয়ার আজ দিল্লিতে। তাঁর সফর চলাকালীন এমন ঘটনা ভাল ভাবে নেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। আজ পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়ককে দ্রুত পরিস্থিতি সামলানোর নির্দেশ দেন তিনি। এর পরেই দফায় দফায় ক্ষমা চায় দিল্লি পুলিশ। সাংবাদিকদের উপরে হামলা ও যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দু’দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমার আশ্বাসও দেওয়া হয়।

তাতে অবশ্য বিক্ষোভ থামেনি। আজ সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন দুপুর ৩টে নাগাদ দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। ক্ষমা চেয়ে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মধুর বর্মা বলেন, ‘‘বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে চিত্রসাংবাদিকদের গুলিয়ে ফেলার জন্যই ওই দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে।’’ সাংবাদিকদের ধর্নায় বসার বদলে তাঁর সঙ্গে কফি খেতে অনুরোধ করেন মধুর। সূত্রের খবর, এমন ‘লঘু’ মন্তব্যেও অসন্তুষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

শেষ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয় পুলিশকর্তাদের। সাংবাদিকদের অভিযোগ, বিদ্যাসাগর সিংহ নামে এক পুলিশ অফিসার কাল এক মহিলা সাংবাদিককে প্রথমে মারধর ও পরে প্রকাশ্যে যৌন নিগ্রহ করেছেন। অন্য এক মহিলা সাংবাদিককে কী ভাবে মহিলা পুলিশেরা মারধর করে, জামাকাপড় ছিঁড়ে, ক্যামেরা কেড়ে নিয়েছেন— সেই ছবি ও ভিডিও তুলে ধরা হয়। দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র দীপেন্দ্র পাঠক বলেন, ‘‘ভিজিল্যান্স শাখার প্রধানকে তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে। তবে সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র দেখানো উচিত ছিল।’’ সাংবাদিকেরা জানান, পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও তাঁদের রেয়াত করেনি পুলিশ। অনেকের প্রশ্ন, সাংবাদিকদের বিক্ষোভকারী বলে গুলিয়ে ফেলার যুক্তি দিচ্ছে পুলিশ। কিন্তু তার মানে কি এই যে, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করতে বাধা নেই?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE