ভারতে আইএস হামলা রুখতে ১২টি রাজ্যের সঙ্গে মিলে পাঁচ দফা যৌথ রণকৌশল রচনা করল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব এল সি গয়ালের নেতৃত্বে আজ বারোটি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশের ডিজি-কে নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল দিল্লিতে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য দিল্লির বৈঠকে যেতে পারেননি পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রসচিব ও ডিজি। রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে হাজির ছিলেন ডিজি(আইবি) বাণীব্রত বসু এবং রেসিডেন্ট কমিশনার আর ডি মীনা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরো ও গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র)-এর কর্তারাও বৈঠকে ছিলেন।
ইতিমধ্যেই ভারতকে নিশানা করার কথা ঘোষণা করেছে আইএস। ইন্টারনেটে আইএসের ভাবধারা প্রচার করছেন অনেক শিক্ষিত ভারতীয় মুসলিম যুবক। ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর হয়ে লড়তে পশ্চিম এশিয়াতেও গিয়েছেন বেশ কয়েক জন। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আজ যৌথ রণকৌশল রচনা করল কেন্দ্র।
কী সেই রণকৌশল? এক, এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে যা তথ্য এসেছে, তাতে আইএসের ভাবধারা প্রচার হচ্ছে মূলত সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। তাই স্থির হয়েছে, শুধু কেন্দ্র নয়, রাজ্যের পুলিশও ইন্টারনেটে এই ধরনের কার্যকলাপের উপরে নজর রাখবে।
দুই, কী ভাবে এই নজরদারি চলবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। স্থির হয়েছে, রাজ্য পুলিশকে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিভিন্ন রাজ্যে যে সব অফিসার এই কাজ করবেন তাঁদের নাম চেয়েছে কেন্দ্র।
তিন, আইএসে যোগ দিতে উৎসাহী পঁচিশ জন যুবককে এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আশঙ্কা, সংখ্যাটি আরও বেশি। এই ধরনের যুবকদের খোঁজে রাজ্যগুলিকে আরও তৎপর হতে বলেছে কেন্দ্র।
চার, কোনও যুবক আইএসের ভাবধারায় প্রভাবিত হলেই তাঁকে গ্রেফতার করতে রাজি নন কেন্দ্রের কর্তারা। ইতিমধ্যেই তেলঙ্গানা ও মহারাষ্ট্রে বেশ কিছু যুবককে বুঝিয়ে পশ্চিম এশিয়ায় আইএসের হয়ে লড়তে যাওয়া থেকে নিরস্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাই রাজ্য পুলিশও যাতে চট করে গ্রেফতার না করে সেই বিষয়ে সতর্ক করেছে কেন্দ্র। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই যুবকদের উপরে প্রথমে নজর রাখবেন গোয়েন্দারা। প্রয়োজনে তাঁদের বোঝানো হবে। পরিবারের লোকজনকেও বোঝানো হবে যাতে যুবকরা বিপথগামী না হয়।
পাঁচ, আইএসের হামলা রুখতে রাজ্যগুলিকে আরও সতর্ক থাকতে বলেছে কেন্দ্র। নজরদারি রাখা হবে বিমানবন্দরগুলিতেও। এখন আইএসে পাঁচ জন ভারতীয় যুবক সক্রিয় বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে ছ’জন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ওই জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছেন বলেও গোয়েন্দা সূত্রে খবর। তাঁদের গতিবিধির উপরে নজর রাখতে গুপ্তচর সংস্থা র-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আইএস মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার কী কী পদক্ষেপ করতে চায় আজ রাজ্যগুলিকে তা জানানো হয়েছে। এর পরে এ নিয়ে রাজ্যগুলি নিজেদের মত জানাবে।
সুষমাকে তোপ মণীশের
লিবিয়া থেকে অপহৃত চার ভারতীয় অধ্যাপকের মধ্যে দু’জনের মুক্তির পর টুইটারে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ লিখেছিলেন, ‘‘দু’জনকে মুক্ত করতে পেরে আমরা খুশি! বাকিদেরও ছাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’’
এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই শনিবার বিদেশমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি। তাঁর পাল্টা টুইট, ‘‘ভারত কি আইএস-এর সঙ্গে ব্যবসা করছে? তা হলে ইরাক থেকে অপহৃত পঞ্জাবের ৫৭ জনের কী হল?’’ মণীশ জানিয়েছেন, দুই ভারতীয়ের মুক্তিতে খুশি তিনি। বাকিদের মুক্তির জন্যও প্রার্থনা করছেন। তবে এ বিষয়ে যে ভারত সরকার সাফল্যের দাবি করছে, এখানেই আপত্তি তাঁর। মণীশের মন্তব্যকে দায়িত্বহীন বলে ভর্ৎসনা করেছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র নলিন কোহলি বলেছেন, ‘‘নাগরিকদের জন্য কেন্দ্র কিছু করলে কংগ্রেস কেন অখুশি হয়?’’ বুধবার লিবিয়ার সিরতে থেকে দেশে ফেরার পথে অপহৃত হয়েছিলেন চার জন। শুক্রবার সন্ধেয় তাঁদের মধ্যে দু’জন মুক্তি পান। মুক্ত লক্ষ্মীকান্ত আর বিজয় কুমার কর্নাটকের। অন্ধ্রপ্রদেশের গোপীকৃষ্ণ আর বলরাম এখনও নিখোঁজ। তাঁদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে আজ বিদেশমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয়। সুষমাকে লিখেছেন, ‘‘লক্ষ্মীকান্ত আর বিজয়কুমারকে ফেরানোর জন্য কেন্দ্রকে অভিনন্দন। তবে বাকি দু’জনের জন্যও চিন্তিত।’’ আজই জানা গিয়েছে, হায়দরাবাদের বলরামের পৈতৃক ভিটে আসলে তেলঙ্গানার শ্রীকাকুলামে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy