রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে মমতা কেমন? আত্মজীবনীতে অকপট প্রণব। —ফাইল চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচরণে ‘অপমানিত’ হয়েছেন তিনি, কিন্তু মমতা এমন মানুষ, যাঁকে ‘অবজ্ঞা করা সম্ভব নয়’। মন্তব্য প্রণব মুখোপাধ্যায়ের।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। সেই আত্মজীবনীতেই প্রণববাবু জানিয়েছেন, নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের এক বৈঠক ছেড়ে কী ভাবে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কী ভাবে মমতা চক্রান্তের অভিযোগও তুলেছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে। তবে সপ্রশংস কলমে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মূল্যায়ন, মমতা আজ যেখানে পৌঁছেছেন, তা সম্পূর্ণ তাঁর নিজেরই কৃতিত্ব।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি নিজের লেখায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘জন্ম বিদ্রোহী’ আখ্যা দিয়েছেন। নিজের রাজনৈতিক জীবনকে নির্ভীক এবং লড়াকু মনোভাব নিয়ে গড়ে তুলেছেন মমতা। লিখেছেন প্রণববাবু। সেই প্রসঙ্গেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, মমতার রাজনৈতিক সাফল্য ‘তাঁর নিজের লড়াইয়ের ফল’।
আরও পড়ুন: তালিবান হানার মধ্যেই কাবুলে দৌত্য ডোভালের
১৯৯২ সাল। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসে অভ্যন্তরীণ ডামাডোল চরমে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে হবেন? সাংগঠনিক নির্বাচনের মাধ্যমে হবেন? নাকি সর্বসম্মত ভাবে হবেন? এ নিয়ে তখন জোর টানাপড়েন প্রদেশ কংগ্রেসে। প্রণববাবুকে মধ্যস্থতা করতে বলেছিলেন পি ভি নরসিংহ রাও। তেমনই এক মধ্যস্থতার বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বলে প্রণববাবু লিখেছেন, ‘‘সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে সব পর্যবেক্ষণ ছিল, তা নিয়ে আলোচনার জন্য আমি সে বছর শীতকালে তাঁকে একটা বৈঠকে ডাকলাম। বৈঠক চলাকালীন হঠাৎ তিনি প্রচণ্ড রেগে গেলেন এবং বললেন, আমি এবং অন্য নেতারা তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছি। তার পর তিনি সাংগঠনিক নির্বাচনের দাবি তুললেন এবং বললেন, তিনি সব সময়ই নির্বাচনের পক্ষে যাতে তৃণমূলস্তরের কর্মীরাও নিজেদের মতামত জানাতে পারেন।’’ প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং অন্য কয়েক জন নেতা নিজেদের পছন্দের লোকেদের মধ্যে দলীয় পদগুলি বিতরণ করতে চান বলেই সাংগঠনিক নির্বাচন ভেস্তে দিতে চাইছেন— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনই অভিযোগ করেছিলেন। লিখেছেন প্রণববাবু। মমতার ‘ভয়ঙ্কর সব অভিযোগ এবং প্রতিক্রিয়া দেখে স্তম্ভিত’ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি, প্রণববাবু জানিয়েছেন এ কথাও।
আরও পড়ুন: প্রণবের মুখে তারিফ মোদীর
সাংগঠনিক নির্বাচন না করে সমঝোতার মাধ্যমে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি এবং অন্যান্য পদাধিকারী নির্বাচনের যে প্রস্তাব রাখা হয়েছিল দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের তরফে, মমতা সেই প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন বলে প্রণব মুখোপাধ্যায় লিখেছেন। তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম এবং অসম্মানিত ও অপমানিত বোধ করেছিলাম।’’ কিন্তু মমতা সম্পর্কে প্রণববাবুর স্নেহসিক্ত মূল্যায়ন, মমতার আচরণের ‘‘ব্যাখ্যা করা কঠিন, কিন্তু তাঁকে অবজ্ঞা করা কঠিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy