Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সুন্দরবন রক্ষায় ঢাকাকে নিয়ে অভিযানে দিল্লি

উপগ্রহ থেকে সুন্দরবনের পশ্চিমবঙ্গের দিকের যে ছবি রাজ্য বন দফতরের রিমোট সেন্সিং বিভাগ তুলেছিল, তাতে দেখা যায়— চারিদিকে ঘন বনাঞ্চল, মাঝখানটা ফাঁকা।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৭ ০৪:১৩
Share: Save:

তিস্তা এবং স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে শোরগোলের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে দুয়োরানি হয়ে ছিল সুন্দরবনের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার প্রকল্পটি। ৬ বছর আগে এই নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ চুক্তিপত্রে সইটুকুই শুধু করেছে। অথচ উপগ্রহ চিত্রে স্পষ্ট, ঘন বনাঞ্চলের মাঝে বৃক্ষহীন টাক বেড়েই চলেছে।

সরকারি সূত্রে খবর, এ বার ঢাকা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পাশে নিয়ে সুন্দরবন বাঁচাও অভিযানে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করতে কেন্দ্রের তরফ থেকে বলা হয়েছিল ‘অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ (ওআরএফ)-কে। সম্প্রতি তারা কেন্দ্রকে সেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এই রিপোর্টের প্রস্তাবগুলিকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক এবং বিভাগগুলির মধ্যে সমন্বয় করে কাজ শুরু করে দিতে চাইছে কেন্দ্র। ঢাকার সঙ্গেও শীঘ্র আলোচনা শুরু হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে।

রিপোর্টে যে বিষয়গুলিকে দু’দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে— তার মধ্যে রয়েছে ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, অবাধ মিষ্টি জলের সরবরাহ, লবনাক্তটা ম্যানেজমেন্টস এবং ভূবৈচিত্রের মানচিত্র তৈরির মতো বিষয়গুলি। দু’দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়া এই বিষয়ক যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি কার্যত ঠুঁটো হয়ে রয়েছে। তাদের নতুন করে সক্রিয় করে তোলা হচ্ছে। সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি পরামর্শদাতা কমিটি গড়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে, যারা ওয়ার্কিং কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলবে।

আরও পড়ুন: দায় কার? রেলের মধ্যেই চলছে দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপ

গত কয়েক বছরে উপগ্রহের মাধ্যমে জলাভূমির ছবি পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, সুন্দরবনের পশ্চিম অংশ দিয়ে যে সব নদী আগে সাগরে মিশত, সেগুলির অধিকাংশ হয় হারিয়ে গিয়েছে, না হয় সেগুলির জল ধারণ ক্ষমতা এতই কমে গিয়েছে যে বদ্বীপের মাটি তাতে ভিজছে না। বদ্বীপের মাঝখানে মিষ্টি জল পৌঁছচ্ছে না। সমুদ্রের জোয়ার ভাটার জন্য নোনা জল ভেজাচ্ছে পুরো বনাঞ্চলই। ধীরে ধীরে সুন্দরবনের পশ্চিম দিকের জঙ্গলে নুনের ভাগ অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। আর তাতেই সুন্দরী গাছ বাড়তে পারছে না। মিষ্টি জলের সরবরাহ না-বাড়ালে এই গাছ বাঁচানো যাবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে গোটা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে।

উপগ্রহ থেকে সুন্দরবনের পশ্চিমবঙ্গের দিকের যে ছবি রাজ্য বন দফতরের রিমোট সেন্সিং বিভাগ তুলেছিল, তাতে দেখা যায়— চারিদিকে ঘন বনাঞ্চল, মাঝখানটা ফাঁকা। যেন টাক পড়ে গিয়েছে। সুন্দরবনের শতকরা ২৫ ভাগ পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। বাকি ৭৫ ভাগ বাংলাদেশে। দেখা যাচ্ছে ও পারের সুন্দরবনে গত কয়েক বছরে সুন্দরী গাছ কমেছে শতকরা ৭৬ ভাগ, গেঁও গাছ কমেছে শতকরা ৮০ ভাগ। সমস্যাটা এ-দিকের মতোই। বালেশ্বর, পশুর ছাড়া আর যে সব নদী সুন্দরবনে মিষ্টি জল সরবরাহ করত, হয় সেগুলির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে, কিংবা অন্য কোনও কারণে তারা মিষ্টি জলের সরবরাহ পাচ্ছে না।

কী ভাবে এই সমস্যা মেটানো যায়, বিশেষজ্ঞ দল সেটাও দেখবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Dhaka Sundarbans সুন্দরবন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE