Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
National News

সংঘর্ষবিরতিতে নারাজ সেনা,  চাপে মেহবুবা

কাশ্মীরে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ে একতরফা সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করতে রাজি নয় সেনাবাহিনী। তাদের মতে, পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনগুলিও হিংসা থামাতে রাজি হলে তবেই এই পরিকল্পনা সফল হবে। তা না হলে উপত্যকার পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা সেনা কর্তাদের।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৮ ০৫:১২
Share: Save:

কাশ্মীরে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ে একতরফা সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করতে রাজি নয় সেনাবাহিনী। তাদের মতে, পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনগুলিও হিংসা থামাতে রাজি হলে তবেই এই পরিকল্পনা সফল হবে। তা না হলে উপত্যকার পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা সেনা কর্তাদের। সংঘর্ষবিরতি নিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি রাজনৈতিক ভাবেও অনেকটাই চাপে পড়েছেন বলে মনে করছেন রাজনীতিকেরা।

সম্প্রতি কাশ্মীরে পাথরের ঘায়ে এক পর্যটকের মৃত্যুর পরে সর্বদল বৈঠক ডাকেন মেহবুবা। তার পরেই রমজান ও অমরনাথ যাত্রার আগে উপত্যকায় জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ে একতরফা সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করতে কেন্দ্রকে অনুরোধ করে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দলগুলি। উদাহরণ হিসেবে অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের আমলে জঙ্গিদের সঙ্গে একতরফা সংঘর্ষবিরতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তারা। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের সঙ্গেও সংঘর্ষবিরতি সমঝোতা করতে পেরেছিল বাজপেয়ী সরকার। তাতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল কাশ্মীরে। অনেক সময়েই সেই সমঝোতা নিয়ে কৃতিত্ব দাবি করেছেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও মেহবুবার বাবা প্রয়াত মুফতি মহম্মদ সইদ।

কিন্তু এ বার এখনও পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। উল্টে এ নিয়ে মেহবুবার সমালোচনাই করেছে তাঁর জোটসঙ্গী বিজেপি। উপ-মুখ্যমন্ত্রী কবীন্দ্র গুপ্তের মতে, জঙ্গি সংগঠনগুলি যদি সংঘর্ষবিরতির ডাক দেয় তবেই তা বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মন্তব্য, ‘‘জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে খুব সাবধানে চলা উচিত। সন্ত্রাসের মোকাবিলা সেনাবাহিনীকে করতেই হবে।’’ সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়তও প্রশ্ন তোলেন, অভিযান বন্ধ করলে যদি জঙ্গিরা সেনা, রাজনীতিক বা পুলিশের উপরে হামলা চালায় তখন কী হবে? ফলে মেহবুবা বাবার পথে চলতে চেষ্টা করলেও এখন অনেকটাই কোণঠাসা বলে মনে করছেন রাজনীতিকেরা।

আজ সেনার তরফে জানানো হয়েছে, এ ক্ষেত্রে সংঘর্ষবিরতির কথা প্রযোজ্য নয়। কারণ, পাক সেনার সঙ্গে ভারতীয় সেনার লড়াই চলছে না। পাক মদতে পুষ্ট জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনা ও অন্য বাহিনী। সে ক্ষেত্রে সেনা অভিযান বন্ধ করার পদ্ধতির নাম ‘নন-ইনিশিয়েশন অব কমব্যাট অপারেশনস’ বা ‘নিকো’।

সেনা কর্তারা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত খাতায় কলমে এ নিয়ে কোনও প্রস্তাবই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে আসেনি। স্থানীয় রাজনীতির তাগিদে উপত্যকার নেতারা এই প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী নেপাল সফর থেকে ফিরে এলে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর।

সেনা অফিসারেরা জানিয়েছেন, ২০০০ সালে ‘নিকো’ চালু হওয়ার আগে কাশ্মীরে ৫০৬ জন জঙ্গি নিহত হয়েছিল। লড়াই থেমে থাকার সময়ে তা ৪৬১ জনে নেমে আসে। কিন্তু ‘নিকো’ উঠে যাওয়ার পরে ২০০১ সালে ১৪২১ জন জঙ্গি নিহত হয়। ২০০২ সালে নিহত হয় ১৫২০ জন। ২০০৩ সালে আবার এই সংখ্যাটি নেমে আসে ১৩৯১ জনে। সেনা অফিসারদের মতে, এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে সংঘর্ষবিরতির সময়ে জঙ্গিরা নিজেদের সংগঠন ঢেলে সাজিয়েছিল। তাদের সংখ্যাও বে়ড়েছিল। পরে অভিযান শুরু হওয়ায় নিহত জঙ্গির সংখ্যা বেড়েছে। সেনার মতে, ওই লড়াই থামার সুযোগেই জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা ও সংসদে হামলার জন্য প্রস্তুতি নিতে পেরেছিল জঙ্গিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE