Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ইন্দ্রকুমারী উচ্চতর বালিকা বিদ্যালয়

গণিতে মুরগির ঠ্যাং মেশান বড়দি

১৯৪৪ সালে অবিভক্ত কাছাড় জেলার ছোট মহকুমা ছিল হাইলাকান্দি। ইন্দ্রকুমারী উচ্চতর বালিকা বিদ্যালয় সে বছরই স্থাপিত হয়। তার পর হাইলাকান্দিতে বহু বিদ্যালয় গড়ে উঠলেও ইন্দ্রকুমারী আজও তার স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে এগিয়ে চলেছে।

উজ্জ্বল। হাইলাকান্দি শহরের চৌমাথায় অবস্থিত ইন্দ্রকুমারী উচ্চতর বালিকা বিদ্যালয় ভবন। ছবি: নিজস্ব চিত্র

উজ্জ্বল। হাইলাকান্দি শহরের চৌমাথায় অবস্থিত ইন্দ্রকুমারী উচ্চতর বালিকা বিদ্যালয় ভবন। ছবি: নিজস্ব চিত্র

ঋতা চন্দ
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৭ ০৩:১২
Share: Save:

১৯৪৪ সালে অবিভক্ত কাছাড় জেলার ছোট মহকুমা ছিল হাইলাকান্দি। ইন্দ্রকুমারী উচ্চতর বালিকা বিদ্যালয় সে বছরই স্থাপিত হয়। তার পর হাইলাকান্দিতে বহু বিদ্যালয় গড়ে উঠলেও ইন্দ্রকুমারী আজও তার স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে এগিয়ে চলেছে।

আমি যখন এই বিদ্যালয়ে পড়ি, তখন সেটা ছিল শুধু উচ্চতর বিদ্যালয়। তখনও উচ্চতর মাধ্যমিক হয়নি। চতুর্থ থেকে দশম পর্যন্ত প্রতি শ্রেণিতে দুটো করে শাখা ছিল। জীবনের সবচাইতে সুন্দর সময় বোধ হয় কৈশোর। তাই হৃদয় জুড়ে আজও বেঁচে আছে ফেলে আসা সেই সব দিনের অজস্র স্মৃতি।

প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন ঊষা পুরকায়স্থ। অসামান্য ব্যক্তিত্ব ও আভিজাত্য ছিল তাঁর কথাবার্তা, ব্যবহারে। কলকাতায় পড়াশোনা দিদিমণির। চাকরি সূত্রে হাইলাকান্দিতে এসেছিলেন। থাকতেন স্কুলের গার্লস হোস্টেলে। আমি তাঁকে প্রথম দেখি চতুর্থ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার দিন। সাধারণ জ্ঞানের মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। আমার ডাক পড়লে তাঁকে দেখে যেন সমস্ত জ্ঞান উবে গেছে। গুরুগম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলেন— ‘আট পনেরোয় কত?’ উত্তরটা ঠোঁটে এসে গিয়েছিল। কিন্তু বলতে পারলাম না। তোতলাতে লাগলাম। সময় না দিয়ে দ্বিতীয় প্রশ্ন করলেন, ‘একটা মুরগির চারটি ঠ্যাং হলে চারটি মুরগির কটা ঠ্যাং?’ আগের উত্তর বলতে পারিনি বটে, এ বার মরিয়া হয়ে বলেই ফেললাম— ‘ষোলটা’। তিনি বললেন ‘ঠিক আছে, তুমি যেতে পারো’।

বাড়িতে গিয়ে ঘটনার পুরো বিবরণ দিলাম। দিদিদের হাসিতে আমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। একের পর এক প্রশ্ন— ‘মুরগির আবার চারটে ঠ্যাং হয় নাকি? মুরগি দেখিসনি কখনও?’

পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। দীপা দিদিমণি হলে পায়চারি করছিলেন। হঠাত ‘ও মাগো’ বলে আমার পাশেই বসে পড়লেন। দেখলাম তাঁর গোড়ালিতে একটা সূঁচ বিধে রয়েছে। সে দিন সকালে কোনও ক্লাসের সেলাই পরীক্ষা ছিল। কারও হাত থেকে হয়তো সূঁচ পড়ে গিয়েছিল। তাড়াতাড়ি আমি সেটা টেনে বের করলাম। খুব খুশি হলেন দিদিমণি। তিনি বললেন ‘ও আমার মেয়ে তো, তাই কত মায়া!’ স্কুল-পরবর্তী জীবনে তাঁর মৃত্যুর খবর জেনে কেঁদেছিলাম। খবরের কাগজে দীপ্তি দিদিমনির মৃত্যুর খবর পড়েও চোখের জল ফেলেছিলাম। একই ভাবে ঊষাদির মৃত্যুর খবরে স্বজন হারানোর বেদনা বোধ করি।

আমাদের সময় স্কুলে বিদ্যুৎ ছিল না। প্রতিটি ক্লাসঘরে ছাদ থেকে লম্বা কাঠে জড়ানো লাল কাপড় ঝুলত। একজন করে মহিলা বসে টানত। হাওয়া প্রায় লাগতই না। আমরা টিফিনের সময় কাড়াকাড়ি করে সেই দড়ি টানতাম।

যখন ক্লাস টেন-এ পড়ি, তখন স্কুলে বৈদ্যুতিক পাখা আসে। পাখার জন্য আলাদা ফি চালু হল। মাথাপিছু চার আনা। স্কুলের ফি ছিল মাসে দু-টাকা। এক পরিবারের দু’জন পড়লে একজনের ফি অর্ধেক মকুব। আরও একটি বিষয়, আমাদের ব্যাচের ছাত্রীরা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উঠে গিয়েছিলাম। গোটা অসমেই সে বছর এমনটা ঘটেছিল। ১৯৭২-এ অসমের বিদেশি বিতাড়ন আন্দোলনের জেরে দীর্ঘদিন স্কুল হয়নি। এই সেভেন-হীন ব্যবস্থা কয়েক বছর চালু ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indra Kumari Girls High School Study Hailakandi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE