Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গ্রামের মেয়েদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ফুটবলার রূপান্তি

নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েটি বাবাকে হারান ছোট বেলায়। কয়েক বছর পরে মাওবাদীরা তাঁর দাদাকে গুলি করে মারে। দাদাই ছিল তাঁর ফুটবল খেলার প্রেরণা।

কোচ দীপকের সঙ্গে রূপান্তি। রাঁচীতে। নিজস্ব চিত্র

কোচ দীপকের সঙ্গে রূপান্তি। রাঁচীতে। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
রাঁচী শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০২:১২
Share: Save:

মাওবাদীরা তাঁর দাদাকে খুন করেছে। চোখের সামনে তিনি দেখেছেন কী ভাবে গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জঙ্গি-প্রশিক্ষণ দিতে তুলে নিয়ে যায় মাওবাদীরা। দেখেছেন কী ভাবে গ্রামের মানুষ মাওবাদীদের বন্দুকের মুখে উপার্জনের টাকা তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।

লাতেহারের জঙ্গল ঘেঁষা প্রত্যন্ত গ্রাম ধোতি মাওবাদীদের ‘গড়’ নামেই পরিচিত ছিল। জেলার আর পাঁচটা মাওবাদী অধ্যুষিত গ্রামের থেকে ধোতি এখন কিন্তু অনেকটাই আলাদা। ছবিটা পাল্টাচ্ছেন গ্রামেরই বছর কুড়ির এক মেয়ে, ফুটবলার রূপান্তি মুণ্ডা। রূপান্তি তাঁর কোচ দীপক টানাভগতের সঙ্গে মিলে গ্রামেই খুলে ফেলেছেন ফুটবল কোচিং সেন্টার। গ্রামের কচিকাঁচাদের ফুটবল শেখাচ্ছেন তিনি।

সম্প্রতি রাঁচীতে এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন রূপান্তি। সঙ্গে ছিলেন কোচও। শহুরে মানুষদের রূপান্তি শোনান অনেক কথা, ‘‘আমাদের গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া সে ভাবে পৌঁছয়নি। গ্রামের মেয়েদের তো অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যায়। অনেক মেয়ে পাচারও হয়ে যায়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সেই মেয়েদের আত্মবিশ্বাসী করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখাই!’’

নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েটি বাবাকে হারান ছোট বেলায়। কয়েক বছর পরে মাওবাদীরা তাঁর দাদাকে গুলি করে মারে। দাদাই ছিল তাঁর ফুটবল খেলার প্রেরণা। রূপান্তি বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় ফুটবল টুর্নামেন্টের বিজয়ীদের টাকার বদলে ‘খাসি’ দেওয়ার রেওয়াজ আছে। আমি দল গড়ে গ্রামে গ্রামে ‘খাসি টুর্নামেন্ট’ খেলে বেড়াতাম।’’ দাদার মৃত্যুর পর ভেবেছিলেন সব শেষ। তবে দাদার কথা মনে পড়লেই ফুটবলার হওয়ার জেদ তাঁর আরও বেড়ে যেত।

আরও পড়ুন: বিজেপিতে এসেই কু-কথা নরেশের

সেই জেদ থেকেই ঠাঁই করে নিয়েছেন অনূর্ধ্ব উনিশের ঝাড়খণ্ড মহিলা দলে। খেলতে খেলতেই পৌঁছে গিয়েছেন নরওয়ের রাজধানী অসলোতেও। রূপান্তি বলেন, ‘‘আমার খেলা দিল্লির এক সংস্থার নজরে পড়ে। ওদের মাধ্যমেই আমি নরওয়ে যাই।’’ স্কটল্যান্ডের হোমলেস ওয়ার্ল্ড কাপ ফাউন্ডেশন নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বের ৬০টি দেশের দল নিয়ে হোমলেস ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপের আয়োজন করে। গত বছর তার আসর বসে অসলোয়। রূপান্তি বলেন, ‘‘আমাদের দল ওই টুর্নামেন্টে অষ্টম হয়েছিল।’’

রূপান্তির সাফল্যে গর্বিত গ্রাম। কোচ দীপকের কথায়, ‘‘ও আমাদের গ্রামের গর্ব। গ্রামের মেয়েদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে একা রূপান্তিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE