Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ইজরায়েলের সঙ্গে মৈত্রীতে কাঁটা ইরান

ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সদ্যসমাপ্ত পাঁচ দিনের ভারত সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। কিন্তু কূটনীতিকদের অনুমান, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় একে তরতাজা রাখতে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হবে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০২
Share: Save:

সাইবার সন্ত্রাস থেকে জলসম্পদ উন্নয়ন। প্রতিরক্ষা থেকে উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন কৃষি ব্যবস্থা। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সদ্যসমাপ্ত পাঁচ দিনের ভারত সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। কিন্তু কূটনীতিকদের অনুমান, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় একে তরতাজা রাখতে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হবে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে।

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইজরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সৌহার্দ্যের এক নতুন পথ সন্ধান করেছেন নরেন্দ্র মোদী। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে রাজনৈতিক মান্যতা দিতে মোদী প্যালেস্তাইনকে বাদ দিয়ে প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত জুলাই মাসে সোজা চলে গিয়েছেন ইজরায়েল। ছ’মাসের মধ্যেই পাল্টা সফরে চলে এসেছেন নেতানিয়াহু। বহু গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের সঙ্গে এখনও কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই ইজরায়েলের। তাদের পক্ষে ভারতের মত একটি দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিজ্ঞাপন তুলে ধরা লাভজনক। এমনটা নয় যে তা ভারতের কাছেও লাভজনক নয়। তাই লাগাতার তিন বছর ধরে এই দ্বিপাক্ষিক দৌত্যে সম্পর্কটি নিয়ে প্রত্যাশা এবং আন্তর্জাতিক নজর দু’টিই বেড়েছে। কিন্তু সেইসঙ্গে এ বার প্রশ্ন উঠছে, নয়াদিল্লির পক্ষে কতদূর পর্যন্ত মসৃণ রাখা সম্ভব এই যাত্রাপথ?

গত বছর প্যালেস্তাইনকে অগ্রাহ্য করলেও আগামী মাসে কিন্তু সে দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন মোদী। রাজনীতিকদের মতে, গুজরাত নির্বাচন পরবর্তী অধ্যায়ে এবং লোকসভা নির্বাচনের আগের এই সঙ্কটকালীন সময়ে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি ইতিবাচক বার্তা দেওয়াটা অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ছে মোদীর। কিন্তু মোদীর ঘরোয়া বাধ্যবাধকতা থাকলেও ইজরায়েল তাঁর এই আসন্ন প্যালেস্তাইন সফরকে স্বভাবতই প্রসন্নতার সঙ্গে দেখছে না।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে তেহরানও। ইজরায়েল ইরানকে নিজেদের পক্ষে সবচেয়ে বিপজ্জনক রাষ্ট্র বলেই মনে করে। গত কয়েক বছর ধরেই ইরানের উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য সক্রিয় তারা। ভারতকেও এই উদ্যোগে সামিল করার জন্য চেষ্টার ত্রুটি করছে না নেতানিয়াহু সরকার। কিন্তু ঘটনা হল ইরানকে সামান্যতম অবহেলা করা ভারতের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। শক্তিসম্পদের ক্ষেত্রে ইরান ভারতের অন্যতম ভরসা। তাছাড়া পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তান তথা মধ্য এশিয়ায় পৌঁছানোর প্রবেশদ্বারও (চাবাহার বন্দর) বটে।

সমস্যা রয়েছে চিনকে নিয়েও। ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা যতই বাড়ুক না কেন, চিনই হল এশিয়ায় ইজরায়েলের বৃহত্তম বাণিজ্য শরিক। বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রশ্নে দু’দেশের বন্ধন এতটাই জোরদার যে এই নেতানিয়াহুই সে দেশে গিয়ে সম্প্রতি বলে এসেছেন, চিন আর ইজরায়েলের মধ্যে ‘স্বর্গীয় বিবাহ’ ঘটেছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এই একই কথা তিনি ভারত-ইজরায়েল সম্পর্ক নিয়েও বলেছেন ঠিকই। কিন্তু চিন-ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা সম্পর্কের জোরালো কামান যে আজ বাদে কাল ভারতের দিকে ঘুরবে না, এতটা নিশ্চিত হতে পারছে না সাউথ ব্লক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE