লোকসভায় জিএসটি বিল পেশ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির। ছবি: পিটিআই।
ধ্বনি ভোটের মাধ্যমে পাশ হয়ে গেল জিএসটি বিল।
দেশের কর ব্যবস্থায় বড়সড় বদল আনার জন্য চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে পণ্য ও পরিষেবা কর বা জিএসটি ব্যবস্থা চালু করতে চায় কেন্দ্র। তার জন্য অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ বুধবার লোকসভায় চারটি বিল পেশ করেন এবং তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। সেই আলোচনার মাধ্যমেই এ দিন অর্থমন্ত্রীর পেশ করা চারটি বিল পাশ হয়ে যায়।
জিএসটি ব্যবস্থা চালু করার জন্য এত দিন যে পদ্ধতিতে ভারত সরকার এগিয়েছে, তা ভারতীয় আইনসভার কাছে একটি সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা বলে এ দিন মন্তব্য করেন জেটলি। বিল পেশের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী লোকসভায় উপস্থিত ছিলেন। বিল পাশের আগে লোকসভায় কী হয়েছিল জেনে নিন:
অরুণ জেটলির কথায়:
• আমরা আইন প্রণয়ণের মাধ্যমে একটা ব্যবস্থা তৈরি করছি যা কেন্দ্রে ও রাজ্যে এক সঙ্গেই কাজ করবে, সেই কারণেই জিএসটি একটি সম্পূর্ণ অন্য রকম বিল। পরোক্ষ কর ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের অধিকার এমন একটা যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্থার হাতে আমরা হস্তান্তর করতে চলেছি, যা ভারতে এই প্রথম বার তৈরি হয়েছে এবং যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েই অংশগ্রহণ করবে।
• এই প্রক্রিয়াকে সুপারিশ এবং সর্বসম্মতি ভিত্তিক করে তুলতে ইতিমধ্যেই জিএসটি কাউন্সিলের ১২টি বৈঠক হয়েছে।
• বর্তমানে পরোক্ষ কর ব্যবস্থা যে ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, আর সে ভাবে হবে না। নতুন তৈরি হওয়া যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্থা জিএসটি কাউন্সিল এই ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
অরুণ জেটলির বিভিন্ন মন্তব্যকে খণ্ডন করে বিরোধীরা। ইউপিএ জমানার কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস সাংসদ এম বীরাপ্পা মইলির মন্তব্য, ‘‘আপনারা আজ যা পেশ করেছেন, তা কোনও যুগান্তকারী বিষয় নয়, একটা খুবই ছোট পদক্ষেপ।’’ জেটলির মন্তব্যকে অনেকগুলি ক্ষেত্রেই খণ্ডন করেছেন তিনি।
বীরাপ্পা মইলির কথায়:
• লাগামছাড়া মুনাফা আটকাতে যে আইন প্রণয়নের সংস্থান জিএসটি বিলে রাখা হয়েছে, তা প্রয়োজনের অতিরিক্ত কঠোর।
• জিএসটি আইনের বর্তমান ভাষায় একটা মৌলিক পরস্পর বিরোধিতা রয়েছে। জিএসটি কাউন্সিলের মূল ধারণার মধ্যেই বিরোধের আভাস রয়েছে, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ধারণায় বিরোধের আভাস রয়েছে।
• আজ আমরা তাড়াহুড়ো করছি এবং আমরা এও মেনে নিচ্ছি যে অনেক দিন আগেই জিএসটি চালু হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু পাঁচটি আলাদা আলাদা করের হার ধার্য হওয়ার ফলে এই বিলটির অবনমন ঘটেছে।
• উদ্দেশ্য মহৎ, কিন্তু যে বিল আনা হয়েছে, তাতে কর বিকৃতির চেষ্টা হবে, নৈরাজ্যের সৃষ্টি হবে এবং কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু হবে।
জিএসটি বিতর্কের শুরু থেকেই এ দিন সংসদে হাজির ছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। ছিলেন রাহুল, জ্যোতিরাদিত্যরাও। ছবি: পিটিআই।
কী কী বিল পেশ হয়েছিল?
• কেন্দ্রীয় পণ্য ও পরিষেবা কর বিল, ২০১৭ (সিজিএসটি)
• সংযুক্ত পণ্য ও পরিষেবা কর বিল, ২০১৭ (আইজিএসটি)
• কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পণ্য ও পরিষেবা কর বিল, ২০১৭ (ইউটিজিএসটি)
• পণ্য ও পরিষেবা কর বিল (রাজ্যের জন্য ক্ষতিপূরণ) বিল, ২০১৭ (জিএসটি)
এই বিলগুলি অর্থ বিল হিসেবে পেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ লোকসভায় বিলগুলিকে পাশ করালেই চলবে। রাজ্যসভায় পাশ না হলেও অসুবিধা নেই। লোকসভায় সরকারের যে গরিষ্ঠতা রয়েছে, তাতে বিল পাশ করাতে অসুবিধা হয়নি।
এ বার বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভায় ‘রাজ্য পণ্য ও পরিষেবা কর বিল, ২০১৭’ বা এসজিএসটি পাশ করানোর কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: নার্সিংহোম নিয়ে একই পথে মোদী
প্রস্তাবিত জিএসটি ব্যবস্থা এক নজরে:
• কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত জিএসটি কাউন্সিল করের হার স্থির করবে। সিজিএসটি, এসজিএসটি এবং আইজিএসটি অনুযায়ী এই হার স্থির করা হবে।
• সিজিএসটি এবং এসজিএসটির হার কখনওই ২০ শতাংশের বেশি হবে না। আইজিএসটির হার ৪০ শতাংশের বেশি হবে না।
• জিএসটি চালুর ফলে রাজ্যগুলি যে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে, তা মেটাতে কিছু কিছু পণ্য ও পরিষেবার উপর সেস বসানো হবে।
• যে সব ব্যবসায় বাৎসরিক টার্নওভার ৫০ লক্ষ টাকার মধ্যে, সেগুলির ক্ষেত্রে পণ্য বা পরিষেবার সরবরাহের উপর কর না বসিয়ে সরাসরি মুল টার্নওভারের উপর অভিন্ন হারে কর বসানোর সংস্থান থাকছে।
১ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে নতুন আর্থিক বছর। মোদী সরকার চায় ওই দিন থেকেই গোটা দেশে চালু হয়ে যাক জিএসটি ব্যবস্থা। বুধবার সেটি পাশ হওয়ার ফলে ১ জুলাই থেকে জিএসটি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy