Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পরিকাঠামোয় বিপুল লগ্নির প্রতিশ্রুতি

পাঁচ বছরে ৩,৫০০ কোটি ডলার। ভারতের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিল জাপান। কথা দিল, নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের বুলেট ট্রেন প্রকল্পে আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার। প্রতিরক্ষা, হাইওয়ে, স্বাস্থ্য পরিষেবা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চুক্তি সই করল দুই দেশ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সূর্যোদয়ের দেশে প্রথম সফরে মোদীও জানিয়ে এলেন, সেখানকার লগ্নি প্রস্তাবকে দ্রুত ছাড়পত্র দিতে বিশেষ টিম গড়বেন তিনি।

হাতে হাত। সৌজন্য বিনিময়ে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী। নরেন্দ্র মোদী এবং জাপানের শিনজো আবে। ছবি: পিটিআই

হাতে হাত। সৌজন্য বিনিময়ে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী। নরেন্দ্র মোদী এবং জাপানের শিনজো আবে। ছবি: পিটিআই

সংবাদ সংস্থা
টোকিও শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪৯
Share: Save:

পাঁচ বছরে ৩,৫০০ কোটি ডলার।

ভারতের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিল জাপান। কথা দিল, নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের বুলেট ট্রেন প্রকল্পে আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার। প্রতিরক্ষা, হাইওয়ে, স্বাস্থ্য পরিষেবা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চুক্তি সই করল দুই দেশ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সূর্যোদয়ের দেশে প্রথম সফরে মোদীও জানিয়ে এলেন, সেখানকার লগ্নি প্রস্তাবকে দ্রুত ছাড়পত্র দিতে বিশেষ টিম গড়বেন তিনি। যার উপর সরাসরি নজরদারি থাকবে তাঁর দফতরের।

এর আগে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জাপানে একাধিক বার এসেছেন মোদী। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কও যথেষ্ট উষ্ণ। এই পরিস্থিতিতে এ দিন অন্তত লগ্নি প্রস্তাবে মোদীর ঝুলি ভরে দিয়েছে জাপান। বৈঠকের পর শিনজো আবের দেশ জানিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে ভারতে মূলত পরিকাঠামো উন্নয়নে ৩,৫০০ কোটি ডলার ঢালবে তারা। যার একটা বড় অংশ আসবে তাদের বিদেশি উন্নয়ন সহায়তা (ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স) তহবিল থেকে। পাঁচ বছরে এ দেশে দ্বিগুণ হবে জাপানি সংস্থাগুলির বিনিয়োগের অঙ্কও।

আবে জানিয়েছেন, ভারতে উন্নত প্রযুক্তির পরিকাঠামো, স্মার্ট সিটি নির্মাণ, গঙ্গা-সহ বিভিন্ন নদীর সাফাই অভিযান ইত্যাদি প্রকল্পে টাকা ঢালবে তাঁর দেশ। এ ছাড়াও জাপানি লগ্নি যেতে পারে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ, উৎপাদন শিল্প, অপ্রচলিত শক্তি, কর্মী-দক্ষতা বৃদ্ধি, কৃষি ও খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প, হিমঘর, গ্রামোন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে। তা ছাড়া, আমদাবাদ-মুম্বইয়ের মধ্যে অতি দ্রুত গতির বুলেট ট্রেন চালানোর সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখার কাজ দ্রুত শেষ করতে চায় দুই দেশ। তাড়াতাড়ি মিটিয়ে ফেলতে চায় পশ্চিম পণ্য করিডর, দিল্লি-মুম্বই শিল্প করিডর এবং চেন্নাই-বেঙ্গালুরু শিল্প করিডরের কাজও। যে কারণে বৈঠক শেষে টোকিও-ঘোষণায় বলা হয়েছে, উৎপাদন শিল্প এবং পরিকাঠামোকে দ্রুত ঢেলে সেজে সকলের জন্য উন্নয়নের যে সাহসী স্বপ্ন মোদী দেখছেন, তাকে আরও ব্যাপক এবং পোক্ত সমর্থন দিতে চান আবে।

জাপানে এসে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও পোক্ত করতে মোদী মন্দির কিংবা বৌদ্ধ মঠে গিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু পাখির চোখ করেছেন পরিকাঠামোয় বিপুল জাপানি বিনিয়োগকেই। যে কারণে এই সফরে আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান গৌতম আদানি, ভারত ফোর্জের সিএমডি বাবা কল্যাণী, এয়ারটেল কর্ণধার সুনীল মিত্তল, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের এমডি-সিইও ছন্দা কোছর, আদি গোদরেজের মতো শিল্পপতিদের সঙ্গে নিয়েছেন তিনি। আর এ দিন জাপানে লগ্নির সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে ভারতকে তুলে ধরেছেন পুরোদস্তুর বিপণনের ঢঙে।

মোদীর দাবি, খারাপ সময় কাটিয়ে ইতিমধ্যেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ভারতের অর্থনীতি। যার ইঙ্গিত স্পষ্ট চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি ৫.৭ শতাংশে পৌঁছে যাওয়ার মধ্যে। তিনি বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, ক্ষমতায় এসে মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে কী ভাবে একটি গতিশীল, চিন্তাশীল এবং সংস্কারমুখী প্রশাসন তৈরি করতে চেষ্টা করেছেন তাঁরা। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেছেন রেলে ১০০% বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দেওয়ার কথা। টেনে এনেছেন, বিমা ও প্রতিরক্ষায় বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ। জাপানি শিল্পপতিদের সামনে জানিয়েছেন, কী ভাবে বিভিন্ন বিনিয়োগ-প্রস্তাব দ্রুত খতিয়ে দেখে তাকে ছাড়পত্র দিতে এক-জানালা ব্যবস্থার উপর জোর দিচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, “শিল্প ও সরকারের তালমিল থাকা যে কত জরুরি, তা খুব ভাল ভাবে বুঝতে পারি আমি।” আর তার পরেই তাঁর প্রতিশ্রুতি, জাপানি লগ্নি প্রস্তাব দ্রুত খতিয়ে দেখতে বিশেষ টিম তৈরি করার।

এমনিতেই এ দেশে অন্যতম বৃহৎ অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগ আসে সূর্যোদয়ের দেশ থেকে। তার উপর সেই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই সে দেশে মোদীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির মসনদে বসার পর মোদীর প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য হওয়ার কথা ছিল জাপানই। কিন্তু তখন পিছিয়ে গিয়েছিল সেই সফর। অনেকের মতে, মোদী তখন মনে করেছিলেন, পরিস্থিতি কিছুটা গুছিয়ে নেওয়ার পর সেখানে গেলে, সাফল্যের দিক থেকে ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছতে পারে জাপান সফর। উৎপাদন শিল্প ও পরিকাঠামোয় মোটা অঙ্কের জাপানি লগ্নি টানাকে প্রথম থেকেই পাখির চোখ করেছিলেন তিনি। শিল্পমহলের এক বড় অংশের মতে, সেই কাজে তিনি যথেষ্ট সফল। যেমন, ছন্দা কোছরই বলছেন, আগামী দিনে বাড়তি কয়েকশো কোটি ডলার জাপানি বিনিয়োগ ভারতে আসার সম্ভাবনা।

এই বিপুল লগ্নি প্রতিশ্রুতির কতটা সত্যিই কতটা বাস্তবায়িত হবে? এর উত্তর দেবে সময়ই।

জাপান থেকে প্রাপ্তি

• পরিকাঠামো, স্মার্ট সিটি-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে ৩,৫০০ কোটি ডলার লগ্নি

• দ্বিগুণ হবে জাপানি সংস্থার বিনিয়োগও

• বুলেট ট্রেন চালু করতে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা

• গঙ্গা সাফাইয়ে সাহায্যের আশ্বাস

• প্রতিরক্ষা, অপ্রচলিত শক্তি, হাইওয়ে, স্বাস্থ্য পরিষেবা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি

• পরিকাঠামো লগ্নি সংস্থা আইআইএফসিএল-কে ঋণ

• পণ্য ও শিল্প করিডরের কাজ দ্রুত শেষ করতে উদ্যোগ

কথা দিল ভারতও

• জাপানি লগ্নি প্রস্তাব দ্রুত খতিয়ে দেখে ছাড়পত্র দিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীনে বিশেষ টিম

• সেখানে থাকার আহ্বান দুই জাপানি প্রতিনিধিকেও

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

infrastucture indian infrastructure investment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE