Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জেলে ফেরার আগে নার্সকে নিয়ে ছাদনাতলায়

জেল থেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল। আর হাসপাতালে নার্সের প্রেমে পড়ে একেবারে ছাদনাতলায়। এ বার ছাদনাতলা থেকে দু’দিনের মধ্যে ফের ফেরত যেতে হবে জেলে।

কমলকিশোর ও নিরু শান্তি। বিয়ের অনুষ্ঠানে। — নিজস্ব চিত্র।

কমলকিশোর ও নিরু শান্তি। বিয়ের অনুষ্ঠানে। — নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
রাঁচি শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:০৭
Share: Save:

জেল থেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল। আর হাসপাতালে নার্সের প্রেমে পড়ে একেবারে ছাদনাতলায়। এ বার ছাদনাতলা থেকে দু’দিনের মধ্যে ফের ফেরত যেতে হবে জেলে। আজসু-র প্রাক্তন বিধায়ক কমল কিশোর ভগতের প্রেমকাহিনি হিন্দি সিনেমার গল্পকেও হার মানায়।

গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস প্রার্থীকে হারিয়ে লোহারডাগা থেকে বিধায়ক হন কমলকিশোর ভগত। কিন্তু ২২ বছর আগে ১৯৯৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরের এক চিকিৎসককে খুনের চেষ্টার মামলায় এ বছরের জুন মাসে তার সাত বছরের সাজা ঘোষণা করে ঝাড়খণ্ড হাইর্কোট। তাতে তিনি বিধায়ক পদ হারান। জেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে রিমসে ভর্তি করা হয়। এর পর তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট তাঁর বেল মঞ্জুর করে ও রিভিউ পিটিশনে তাঁর সাজা সাত বছর থেকে কমিয়ে পাঁচ বছর করে। সেই সঙ্গে সাত অক্টোবর তাকে ফের আদালতে আত্মসমর্পণ করে পাঁচ বছরের সাজা কাটতে জেলে যেতে নির্দেশ দেয় কোর্ট।

কিন্তু রিমসে ভর্তি থাকাকালীনই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল অন্য দিকে। কমলকিশোর রিমসে ভর্তি ছিলেন ভিআইপি কটেজে। সেই কটেজে তাঁকে সেবা শুশ্রূষার ভার পড়ে নার্স নিরু শান্তির ওপর। কমলকে ওষুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে সব কিছুই অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে করছিলেন নিরু। মাসখানেক ধরে নিরুর সেবাযত্নেই মন টলে যায় কমলের। নিরুকে জীবনসঙ্গিনী করার প্রস্তাব দেন তিনি।

কমলকিশোরের পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাজনীতিই হল কমলের ধ্যানজ্ঞান। ৪৬ বছর বয়সে বিয়ে করার সময় পায়নি কমল। তাহলে কী হাজতবাসের নিঃসঙ্গতাই কি কমলের জীবনের জীবনসঙ্গিনীর প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দিল? নিজের বিয়ে নিয়ে কিছু বলতে খুবই লাজুক কমলকিশোর। তিনি জানতেন তাঁকে ফের জেলে ফেরত যেতে হবে। তবু মন মানেনি। বিয়ের প্রস্তাব দিয়েই ফেলেন নিরুকে। কমলকিশোর বলেন, ‘‘কী করে সব হয়ে গেল জানি না।’’

কমলকিশোর এই রকম রাখঢাক করে বললেও আজসু-র প্রেসিডেন্ট সুদেশ মাহাতো বলেন, ‘‘হাসপাতালে বসেই কমলকিশোর নিরুর কথা জানান। বলেন মন দিয়ে ফেলেছি। বিয়ে করতে চাই। কর্মীদের কী মত? আমরা বলি, এটা নির্বাচনে লড়তে যাচ্ছেন, যে দলের মতামত নিচ্ছেন? মেয়েটি যদি রাজি থাকে তাহলে বিয়ে করে ফেলুন।’’

কমলের বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেননি নিরু। কমলও আর অপেক্ষা করেনি। ফের জেলে যাওয়ার আগে রবিবার বিয়ে করে ফেললেন নিরুকে। সুদেশবাবু বলেন, ‘‘লোহারডাগায় বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। ধুমধাম করে আদিবাসী প্রথায় বিয়ে হল কমলের। প্রচুর খাওয়াদাওয়া হল।’’

কাল, বুধবার আবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে ফিরে যেতে হবে কমলকে। তার পর আবার পাঁচ বছরের বিচ্ছেদ। কমলকিশোর জানেন না জেল থেকে বেরোনোর পরে রাজনীতিতে তার ভবিষ্যৎ কী হবে? তবে একটা সুন্দর সাংসারিক জীবন যে তার জন্য অপেক্ষা করে আছেই, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত কমল। আর সেই সুখস্বপ্নেই কেটে যাবে তাঁর পাঁচ পাঁচটা বছর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE