Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

যৌথ কমিটিতে জমি অধ্যাদেশ

কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের আপত্তিতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের দ্বিতীয় জমি অধ্যাদেশটিও এ যাত্রায় পাশ হল না। সেটিকে সংসদীয় যৌথ কমিটির কাছে পাঠিয়ে দিল সরকার। আর শীতঘুমের পথে বিলের সেই যাত্রার প্রাক্-মুহূর্তে আজ ফের সংসদে আক্রমণাত্মক হলেন রাহুল গাঁধী।

লৌহপুরুষের পাশে। দিল্লিতে বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী ও লালকৃষ্ণ আডবাণী। ছবি: পিটিআই।

লৌহপুরুষের পাশে। দিল্লিতে বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী ও লালকৃষ্ণ আডবাণী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ০৩:০৫
Share: Save:

কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের আপত্তিতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের দ্বিতীয় জমি অধ্যাদেশটিও এ যাত্রায় পাশ হল না। সেটিকে সংসদীয় যৌথ কমিটির কাছে পাঠিয়ে দিল সরকার। আর শীতঘুমের পথে বিলের সেই যাত্রার প্রাক্-মুহূর্তে আজ ফের সংসদে আক্রমণাত্মক হলেন রাহুল গাঁধী। সম্প্রতি মোদী সরকারকে ‘স্যুট-বুটের সরকার’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন রাহুল। আজ প্রধানমন্ত্রীর নাম না করলেও তীব্র শ্লেষ হেনে রাহুল বলেছেন, ‘‘আগে চোর রাতের অন্ধকারে সিঁদ কেটে বা জানলা দিয়ে ঢুকত। এখন আসে দিনের আলোয় স্যুট-বুট পরে। তবে স্যুট-বুটের কাজ হতে দেব না!’’

শাসক দলের কৌশল স্পষ্ট। যে হেতু দুই সভা মিলিয়ে শাসক জোটের সাংসদ সংখ্যাই বেশি, তাই যৌথ কমিটিতেও তাদের প্রতিনিধিত্ব বেশি থাকবে। ফলে সরকার পক্ষের সুপারিশই প্রাধান্য পাবে। এর পর কমিটির সুপারিশ সংসদে পেশ করে বিলটি ফের পাশ করানোর চেষ্টা করবে সরকার। লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সেখানে সরকারের সংকট নেই। রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই বটে। কিন্তু বিল যৌথ কমিটি ঘুরে আসার পর বিরোধীদের কাছে বিশেষ বিকল্প প্রস্তাব থাকবে না। যদি রাজ্যসভায় বিল পরাস্ত হয়, সে ক্ষেত্রে যৌথ অধিবেশন ডেকে সেটি পাশ করিয়ে নেওয়া যাবে।

দলীয় সূত্র বলছে, সনিয়া-রাহুল বিলক্ষণ বুঝছেন, এডিএমকে, বিজেডি বা তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে শাসক দল। সম্প্রতি মোদীর পশ্চিমবঙ্গ সফরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সৌজন্যের আবহই বজায় ছিল (যৌথ সংসদীয় কমিটিতে তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়)। গত কাল এডিএমকে নেত্রী জয়ললিতা আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় বেকসুর খালাস পাওয়ার পর তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মোদী।

পরিস্থিতি আঁচ করেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক রাজনৈতিক আক্রমণ জিইয়ে রাখতে চাইছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। রাহুল-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘লোকসভা ভোটের ঠিক পরে অনেকে ধরে নিয়েছিল, বিল পাশ করানো এখন সরকারের হাতের মোয়া! সে দিক থেকে জমি অধ্যাদেশ দু-দু’বার গোঁত্তা খেয়ে যৌথ কমিটির কাছে যাওয়াটাই সরকারের কাছে বড় ধাক্কা এবং সামান্য হলেও কংগ্রেসের রাজনৈতিক জয়। এর পর সরকার অনড় থাকলে তো আরও বড় আন্দোলনের রাস্তা খোলাই থাকছে।’’

আজ লোকসভায় রাহুল বলেন, ‘‘এনডিএ সরকার এসেই জমি বিলকে খুন করেছে। প্রথম কুড়ুলটা মেরেছে ঠিক গলার ওপর।’’ এ কথা বলতে গিয়ে হাত নিজের ঘাড়ে রাখেন অমেঠির সাংসদ। বলেন, ‘‘জমি অধিগ্রহণের আগে কৃষকদের সম্মতি নেওয়ার শর্তটাই তুলে দিয়েছে (কেন্দ্র)। তার পর সেই লাশ যখন নেতিয়ে পড়েছে, তখন দ্বিতীয় কোপ মেরেছে।’’ এ কথা বলে ফের ডান দিক থেকে বাঁ দিকে হাত চালিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘সরকার যে সংশোধনী বিল এনেছে, তাতে জমি অধিগ্রহণের ফলে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন, কতটা হলেন— সেই সমীক্ষাও করা হবে না। এবং এর পরেও তৃতীয় বার কুড়ুল মেরে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, অনন্তকাল ধরে প্রকল্প শুরু না হলেও কৃষকের কাছে জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।’’ অর্থ মন্ত্রকের তথ্য তুলে রাহুল বলেন, ‘‘দেখা যাচ্ছে, মাত্র আট শতাংশ প্রকল্প জমি অধিগ্রহণের অভাবে আটকে আছে। সরকারের আসল উদ্দেশ্য, জলের দরে পুঁজিপতিদের হাতে বিপুল জমি তুলে দেওয়া।’’

রাহুলের পাল্টা রবার্ট বঢরার জমি-বিতর্কের খোঁচা দিয়ে বিজেপি নেতাদের একাংশ বলেছেন, ‘‘গরিব মানুষ স্যুট-বুট পরলে এত আপত্তি কেন? ওটা তো রাহুলের জামাইবাবু পরেন!’’ আজই বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গত এক বছরে সরকার কী ভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের সফল রূপায়ণ করেছে, ইউপিএ-র চেয়ে কত ভাল কাজ করছে— তা তুলে ধরতে হবে। সম্প্রতি রাহুল অভিযোগ করেছিলেন, ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ হয়ে তাঁর নির্বাচন কেন্দ্র অমেঠিতে ফুড পার্ক প্রকল্প খারিজ করে দিয়েছে সরকার। আজ কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘রাহুল কৃষকদের জন্য নয়, প্রোমোটারের জন্য ফুড পার্ক গড়তে চেয়েছিলেন।’’ অন্য দিকে অমেঠিতে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, ‘‘রাহুল দেশোদ্ধার করতে চলেছেন, কিন্তু নিজের কেন্দ্রেই ওঁর দেখা নেই।’’ চ্যালেঞ্জটা স্মৃতিকে ছুড়েই রাহুল পাল্টা বলেন ‘‘আশা করি উনি অমেঠিতে ফুড পার্ক ফিরিয়ে দেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE