Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

তিন দশকের অপেক্ষা শেষ, বায়ুসেনার অন্তর্ভুক্ত তেজস

ভারতীয় বায়ুসেনা আজ সম্পূর্ণ নতুন মাইল ফলকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ‘তেজস’। ভারতের নিজের তৈরি এই যুদ্ধবিমান আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেওয়া হচ্ছে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে।

ভারতের তৈরি লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট ‘তেজস’।

ভারতের তৈরি লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট ‘তেজস’।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ১১:৪১
Share: Save:

ভারতীয় বায়ুসেনা আজ সম্পূর্ণ নতুন মাইল ফলকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ‘তেজস’। ভারতের নিজের তৈরি এই যুদ্ধবিমান আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেওয়া হচ্ছে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে। ফরাসি যুদ্ধবিমান মিরাজ-২০০০-এর সমান সক্ষমতা রয়েছে এই ভারতীয় লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্টের, বলছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

রাশিয়া থেকে আনা মিগ যুদ্ধবিমানগুলি বাতিল করে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। ১৯৭১-এর যুদ্ধে হালকা ওজনের মিগ যুদ্ধবিমানগুলির ভরসাতেই পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করেছিল ভারত। কিন্তু মিগের প্রযুক্তি অনেক পুরনো। তার চেয়ে অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান এখনকার যুদ্ধবিগ্রহে ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া মিগ বিমানগুলি অনেক পুরনো হয়ে যাওয়ায় বার বার দুর্ঘটনার সম্মুখীনও হচ্ছিল। তাই মিগের সবক’টি স্কোয়াড্রনকেই ধাপে ধাপে বসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আশির দশকে। রাজীব গাঁধীর আমলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ভারতেই তৈরি করা হবে মিগের বিকল্প লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট। অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সেই নির্মীয়মান যুদ্ধবিমানেরই নাম দেন তেজস।

যে লক্ষ্য নিয়ে ভারত এই লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট তৈরি করা শুরু করেছিল, সময় এগনোর সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু সেই লক্ষ্যও বদলেছে। প্রযুক্তি যত অত্যাধুনিক হয়েছে, তেজসের সক্ষমতাও তত বারই বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে বায়ুসেনা। ফলে অনেক বার নকশা বদল হয়েছে এই যুদ্ধবিমানের। নির্মাতা সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডই (হ্যাল) জানিয়েছে সে কথা। অবশেষে ‘তেজস’-এর নির্মাণ শেষ। তিন দশক আগে কাজ শুরু করে এত দিন পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে তেজসকে তুলে দেওয়া হচ্ছে— এ নিয়ে সমালোচনা রয়েছে কোনও কোনও স্তরে। কিন্তু হ্যাল এবং বায়ুসেনা, দু’পক্ষই কিন্তু মোটের উপর উচ্ছ্বসিত। কারণ মিগ যুদ্ধবিমানের বিকল্প হিসেবে তেজসের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। যখন নির্মান কাজ শেষ হল, তখন দেখা যাচ্ছে, মিগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী ফাইটার জেট তৈরি করেছে হ্যাল। বিশ্বখ্যাত ফরাসি যুদ্ধবিমান মিরাজ-২০০০-এর সমান সক্ষমতা পেয়ে গিয়েছে দেশে তৈরি এই যুদ্ধবিমান।

ভারতের সুখোই-৩০এমকেআই এবং মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমানকেই সবচেয়ে বেশি ডরায় যে কোনও প্রতিপক্ষ বিমানবাহিনী। এই দুই যুদ্ধবিমান একটি করে স্কোয়াড্রনই গোটা পাক বিমানবাহিনীকে চূর্ণ করতে সক্ষম— দাবি করেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ভারতের নিজের তৈরি তেজস সেই মিরাজ-২০০০ ফাইটারের সমান সক্ষমতা অর্জন করায় বায়ুসেনা স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত। চিনের তৈরি জেএফ-১৭ ফাইটারের চেয়ে ভারতের তেজস যে কয়েক যোজন এগিয়ে, তাও মেনে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল।

তেজস ফাইটারে যা যা রয়েছে:

• অত্যাধুনিক ইজরায়েলি মাল্টি-মোড রেডার, যা প্রতিপক্ষের যুদ্ধবিমান বা ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়ে সতর্ক করে দেয় অনেক আগে থেকেই।

• ডার্বি আকাশ-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র, যা দৃষ্টিসীমার বাইরের লক্ষ্যবস্তুকেও খুঁজে নিয়ে নির্ভুল আঘাত হানতে পারে। বিশ্বের অন্যতম সেরা যুদ্ধবিমান রাফাল-ও এই ডার্বি মিসাইলই ব্যবহার করে।

• অত্যাধুনিক লেসার ডেজিগনেটর এবং টার্গেটিং পড, যা বহু উঁচু থেকেও ভূপৃষ্ঠে থেকে যে কোনও লক্ষ্যবস্তুতে অভ্রান্ত হামলা চালায়।

আরও পড়ুন: ভারত-ইজরায়েল যৌথ মিসাইল মাঝ আকাশেই গুঁড়িয়ে দিল লক্ষ্যবস্তুকে

তেজসের অন্যান্য বিশেষত্ব:

• কার্বন কম্পোজিট দিয়ে এর কাঠামো তৈরি হওয়ায় এই যুদ্ধবিমান অত্যন্ত হালকা।

• তেজস প্রতিপক্ষের এলাকায় হানা দিলেও রেডারে তার হদিশ পেতে অনেকটা সময় লেগে যায়।

• ঘণ্টায় ১৭৩০ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারে তেজস।

• মাঝা আকাশে উড়তে উড়তেই জ্বালানি ভরতে সক্ষম এই ফাইটার জেট।

• খুব ছোট রানওয়ে থেকে ওঠানামা করতে সক্ষম তেজস।

বায়ুসেনায় আনুষ্ঠানিক অন্তর্ভুক্তির আগে অন্তত তিন হাজার বার পরীক্ষামূলক উড়ান হয়েছে তেজসের। হ্যাল সূত্রের খবর, ২০০১ সাল থেকে শুরু হওয়া সেই পরীক্ষামূলক উড়ান প্রক্রিয়ায় এক বারও দুর্ঘটনার মুখে পড়েনি তেজস। পৃথিবীতে এই মুহূর্তে লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট গোত্রের যত ফাইটার রয়েছে, তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে ঠাঁই পেতে চলেছে তেজস, আত্মবিশ্বাসী বায়ুসেনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

LCA Tejas Indian Air Force Induction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE