দিল্লি থেকে ফেরার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী। - নিজস্ব চিত্র
১০০০ টাকার নোট বাজার থেকে তুলে নিলেও কিছু দিন ৫০০ টাকার নোটটা বাজারে চলতে দিন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে এই আবেদন রাখলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ মমতা বলেন, ‘‘দেশজুড়ে হয়রানি বেড়েই চলেছে। কৃষকেরা বীজ কিনতে পারছেন না। খরিফ শস্যের চাষের সময় চলে এসেছে। কিন্তু চাষির কাছে টাকা নেই। পশ্চিমবঙ্গ, অসমের চা শ্রমিকরাও মজুরি পাচ্ছেন না। হাজারো গ্রামে ব্যাঙ্ক নেই, এটিএম নেই। সেখানকার মানুষ ‘প্লাস্টিক মানি’র কী বোঝেন?’’
মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘সরকারের ১০০০ টাকার নোট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক। কিন্তু ২০০০ টাকার নোট নিয়ে মানুষ কোথায় যাবে?’’ সরকারকে তাঁর পরামর্শ, ‘‘৫০০ টাকার পুরনো নোট চালু রাখা হোক। পাশাপাশি, নতুন নোটও বাজারে ছাড়া হোক। যত ক্ষণ নতুন ৫০০ টাকার নোট বাজারে পর্যাপ্ত না-আসছে, তত দিন পুরনো নোট চলতে দেওয়া হোক। একই সঙ্গে ১০০ টাকার নোটের জোগানও বাড়ানো হোক।’’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘সমস্যাটা সাধারণ মানুষের। সেই সমস্যা নিজের চোখে বাংলায় দেখেছি। সেই জন্য ব্যাঙ্কক সফর বাতিল করে দিল্লি এসেছি।’’ আজ কলকাতা যাওয়ার আগে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘৭২ ঘণ্টায় সরকার বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করুন। যদি সরকার রবিবারের মধ্যে এ প্রস্তাব মেনে নেয়, ভাল। প্রয়োজনে সোমবার দিল্লি আসতেও রাজি আছি। কলকাতা থেকে দিল্লি তো মাত্র দু’ঘণ্টা লাগে!’’ গতকাল রাতে মমতা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী কাল গভীর রাত পর্যন্ত অরুণ জেটলি ও অর্থ মন্ত্রকের অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার ‘রোলব্যাক’ করবে না। কিন্তু বিরোধী নেতাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। বেঙ্কাইয়া নায়ডু সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছেন, অর্থমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী দু’জনেই মমতার সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত। দিদি যখন দিল্লিতে, তখন কেন তিনি বৈঠকে বসছেন না? অরুণ জেটলি তৃণমূল সাংসদদের বলেছেন, ‘‘কেজরীবাল আর দিদি আমাদের কাছে এক নন। কেজরীকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। সংসদেও আপের কোনও শক্তি নেই। কিন্তু মমতার এত সাংসদ, তৃণমূল একটা বড় সংসদীয় শক্তি। ওদের দায়িত্বও তো বেশি। কেন আলোচনায় বসতে চাইছেন না মমতা?’’
মমতা বিজেপি নেতাদের আজ বলেছেন, ‘‘আমরা আলোচনায় বসতে চাই না, এমন নয়। কিন্তু বিজেপি সিদ্ধান্তে বদল আনবে না, শুধু দেখা করবে। এতে একটা ‘মিডিয়া ইভেন্ট’ হবে। বাস্তবে কাজ হবে না।’’ মমতার কথায়, ‘‘মোদী সরকারকে বুঝতে হবে, নাটক করে কোনও লাভ নেই। আমাদের কোনও ব্যক্তিগত কর্মসূচি নেই। আমরা চাই বিরোধী শিবির ঐক্যবদ্ধ হোক। মানুষের দুর্দশা দূর হোক। আমি সমাধানের একটা প্রস্তাব দিলাম। সরকার যদি মেনে নেয়, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।’’
মমতা আজ নোট বদলের সামগ্রিক বিরোধিতাও করেননি। তবে বলেছেন, ‘‘আজ একটা ঘোষণা, কাল আর একটা ঘোষণা। কখনও বলা হচ্ছে ৪ হাজার টাকা তোলা যাবে। কখনও সাড়ে ৪ হাজার, কখনও তা নামিয়ে আনা হচ্ছে দু’হাজারে। রোজ নতুন নতুন ঘোষণা। ঘোষণা হচ্ছে, তবে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।’’ রাতে ঘোষণা করা হয়, আগামিকাল, শনিবার, ব্যাঙ্ক খোলা থাকবে শুধু তাদের নিজেদের গ্রাহকদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য। অন্য ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের জন্য নয়। যা শুনে টুইটে মমতার প্রতিক্রিয়া, ‘‘আবার একটা খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত। সরকারকে জানাতে হবে, তাদের ভাণ্ডারে কি নোটের জোগান কম রয়েছে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy