Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কুয়াশায় হোঁচট খাচ্ছে রাজধানীও

কুয়াশায় একই লাইনে পিছনে পিছনে এত বেশি ট্রেন দাঁড়িয়ে যাচ্ছে যে, নিত্যদিনই ট্রেন-জট হচ্ছে। কুয়াশা কাটার পরে সেই জট ছাড়তে ছাড়তেই ট্রেন-পিছু গড়ে দেরির মাত্রা বেড়ে হচ্ছে পাঁচ থেকে ছ’ঘণ্টা। ট্রেন-সফরে হয়রানি বাড়ছে যাত্রীদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৩
Share: Save:

শীতকালে ‘লেট’ বা দেরির মাত্রা কমাতে রেল-কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই অনেক ট্রেন বাতিল করে দিতেন। কিন্তু তাতে হয়েছে উল্টো বিপত্তি। আয় গিয়েছে কমে। তাই এ বছর ট্রেন বাতিলের হার অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে দুর্গতি বেড়েছে রেলের যাত্রীদের।

কুয়াশায় একই লাইনে পিছনে পিছনে এত বেশি ট্রেন দাঁড়িয়ে যাচ্ছে যে, নিত্যদিনই ট্রেন-জট হচ্ছে। কুয়াশা কাটার পরে সেই জট ছাড়তে ছাড়তেই ট্রেন-পিছু গড়ে দেরির মাত্রা বেড়ে হচ্ছে পাঁচ থেকে ছ’ঘণ্টা। ট্রেন-সফরে হয়রানি বাড়ছে যাত্রীদের।

মঙ্গলবারেও কুয়াশার জন্য দিল্লি থেকে ছাড়া হাওড়া ও শিয়ালদহমুখী বেশির ভাগ ট্রেনই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৫-৬ ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছেছে। এবং দেরির তালিকায় রাজধানী, দুরন্ত, শতাব্দী এক্সপ্রেস ছাড়াও ছিল দূরপাল্লার গোটা দশেক মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন। মাঝরাস্তায় দীর্ঘ সময় ট্রেন আটকে থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ তুঙ্গে ওঠে। অনেকেরই নির্ধারিত কর্মসূচি বিপর্যস্ত হয়ে যায়।

এমনিতেই ট্রেন-সংখ্যার তুলনায় লাইন অনেক কম। তার উপরে কয়েক বছর ধরে প্রচণ্ড দূষণের দরুন বেড়ে চলেছে কুয়াশা-ধোঁয়াশার দাপট। এই সব মিলিয়েই উত্তর ভারত দিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করাটা এখন যাত্রীদের কাছে কার্যত বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দূরপাল্লার কোনও কোনও ট্রেন কখনও কখনও গন্তব্যে পৌঁছতে ৭-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরি করছে।

রেল সূত্রের খবর, গত ৬০-৭০ বছরে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে ৫২৪ শতাংশ। ওই বিপুল সংখ্যক যাত্রী পরিবহণের জন্য ট্রেনের কামরাও বাড়ানো হয়েছে প্রায় ২৪৯ শতাংশ। কিন্তু রেললাইন বৃদ্ধির হার মাত্রই ২৩ শতাংশ। ফল যা হওয়ার, তা-ই হচ্ছে। কুয়াশায় বাধা পেয়ে পরের পর দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ট্রেন। লাইনে তৈরি হচ্ছে ট্রেন-জট। পরিকাঠামোর এতই অভাব যে, কুয়াশা কেটে গেলেও দ্রুত গতিতে ট্রেন চালিয়ে সময়ের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এক রেলকর্তা বলেন, ‘‘কুয়াশা ও জটের প্রভাব বেশি উত্তর ভারতের মোগলসরাই থেকে নয়াদিল্লি পর্যন্ত। ফি-বছরই যেন বেড়ে চলেছে কুযাশার উপদ্রব। এ বছর ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই কুয়াশায় নাজেহাল রেল।’’ গত কয়েক বছরে কুয়াশার চরিত্রবদল নিয়ে আবহবিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদদের একাংশ দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণকে দায়ী করছেন। তাঁদের ব্যাখ্যা, কুয়াশার সঙ্গে ধূলিকণা মিশে যাওয়ায় তা অনেক বেশি গাঢ় হচ্ছে এবং এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকছে।

এই অবস্থায় কুয়াশার বাধা এড়িয়ে ট্রেন চালাতে নতুন প্রযুক্তি ছাড়া আর কোনও উপায় দেখছেন না রেলকর্তারা। কিন্তু বিমান পরিবহণ কর্তৃপক্ষের কাছে কুয়াশা ভেদ করে বিমান নামানোর প্রযুক্তি থাকলেও রেলের হাতে তেমন প্রযুক্তি এখনও আসেনি। ফলে কুয়াশা উপেক্ষা করে যাত্রীদের দেরি ও ভোগান্তির সমস্যা মেটানোর যাবতীয় আশা কুয়াশাতেই আচ্ছন্ন বলে জানাচ্ছেন রেলকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE