Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মমতার চিন সফর সঠিক, বলছে দিল্লি

দলাই লামার অরুণাচল সফর নিয়ে ভারতকে লাগাতার তোপ দাগছে চিন। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে চিনা লগ্নি টানতে মাও জে দংয়ের দেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিকই করেছেন বলে মনে করছে মোদী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রক।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪২
Share: Save:

দলাই লামার অরুণাচল সফর নিয়ে ভারতকে লাগাতার তোপ দাগছে চিন। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে চিনা লগ্নি টানতে মাও জে দংয়ের দেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিকই করেছেন বলে মনে করছে মোদী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রক।

অরুণাচল নিয়ে বিবাদ, ভারতের এনএসজি সদস্যপদ পাওয়ায় আপত্তি, পাকিস্তানকে সামরিক-আর্থিক মদত, রাষ্ট্রপুঞ্জে মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপে বাধা— গত ক’বছরে বেজিং-দিল্লি সংঘাত কম হয়নি। সম্প্রতি ভারতকে বেনজির হুমকি দিয়ে চিন বলেছে, সীমান্ত সমস্যা সমাধানের পথে কালো ছায়া ফেলবে দলাই লামার সফর। কিন্তু কূটনীতিকরা জানাচ্ছেন, এ সবের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে গুলিয়ে ফেলেনি চিন। বরং এ দেশে চিনের লগ্নি ক্রমশ বাড়ছে। দিল্লি মনে করছে, সেই লগ্নি নিজের রাজ্যে টানার চেষ্টায় নেমে ঠিক কাজই করছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীদের বিদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক দিল্লি সফরে মমতার প্রস্তাব শুনেই তাঁর চিন সফরে সম্মতি দিয়ে দেয় মোদী সরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, কোন দেশ ভারতে কত বেশি লগ্নি করছে, সেই হিসেবে ২০১১-তে চিন ছিল ৩৫তম স্থানে। ২০১৪-য় চিন ২৮তম স্থানে উঠে আসে। ২০১৬ সালে একলাফে ১৭-য়। এ দেশের চিনের লগ্নি বৃদ্ধির হারই সব থেকে বেশি। ২০১৬-য় চিন থেকে ১০০ কোটি ডলার লগ্নি এসেছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রকের দাবি। পাঁচ বছর আগে যার পরিমাণ ছিল ১০ কোটির একটু বেশি। খুব শীঘ্রই চিন ভারতে লগ্নিকারী প্রথম দশটি দেশের তালিকায় উঠে আসবে বলে মনে করছে দিল্লি। ভারতও চিনের লগ্নিতে পাঁচিল তোলেনি। চিনা লগ্নির জন্য দরজা খুলে দিয়েছে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-য়।

মমতা জানিয়েছেন, রাজ্যে তিনি মূলত উৎপাদন শিল্প, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প ও কৃষিতে চিনা লগ্নি টানতে চান। বাণিজ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, এ দেশে চিনের লগ্নি সবথেকে বেশি আসছে গাড়ি শিল্পে। তার পরেই রয়েছে ধাতু নির্ভর শিল্প। মোবাইলের মতো বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি এবং কারখানার যন্ত্রাংশ তৈরিতেও লগ্নি করছে চিন। চিনের আধ ডজন স্মার্টফোন সংস্থা এ দেশে কারখানা তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গও সেখানে সাফল্য পেতে পারে বলে আশাবাদী দিল্লির কর্তারা।

রাজ্যে তিন দশকের কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ঘটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মমতা। যে সিপিএম এক পা এগোনোর আগে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির দিকে তাকিয়ে থাকত, সেই পার্টির নেতৃত্বই এখন তৃণমূলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। মমতা চান চিনা সংস্থার লগ্নিতে রাজ্যের উন্নয়ন করতে। কিন্তু তারা কি এ রাজ্যে লগ্নিতে উৎসাহিত হবে? বাণিজ্য মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্যে লগ্নির সুযোগ-সুবিধে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই লগ্নিকারীদের সামনে তুলে ধরবেন। প্রথম দিকে চিনা সংস্থাগুলি শুধু গুজরাতেই

লগ্নি করত। কারণ চিনের সঙ্গে গুজরাতের লগ্নির সুযোগ-সুবিধের মিল রয়েছে। ধীরে ধীরে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, অন্ধ্র, তামিলনাড়ুতেও চিনারা লগ্নি করছেন। সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ জুড়তেই পারে। চিনের কুনমিং প্রদেশের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee China
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE