গণপিটুনি সেই যুবককে। ফাইল চিত্র।
যে দেশে নীরব মোদীরা সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি করেও আইনের নাগাল এড়িয়ে যেতে পারেন, সেই দেশেই ‘ভাত চুরি’র অভিযোগ উঠলে আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে পিটিয়ে মারা হয় যুবককে!
‘ভাত চুরি’র অভিযোগে এক আদিবাসী যুবককে গাছে বেঁধে গণপিটুনি দিতে দিতে মেরে ফেলা হল। গণপ্রহারের সেল্ফিও তুললেন অনেকে। কেরলের আত্তাপাড়ি জেলার ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম মধু (৩০)। মানসিক ভারসাম্য হীন। বনে-বাদাড়েই তিনি ঘুরে বেড়াতেন। কোনও দিন খাবার জুটলে খেতেন, না পেলে ভুখা পেটেই দিন গুজরান হত। ন’মাস তিনি ঘরছাড়া।
আরও পড়ুন: মুখ্যসচিব ‘নিগ্রহ’! কেজরীর বাড়িতে হানা দিল দিল্লি পুলিশ
বৃহস্পতিবার আত্তাপাড়ি এলাকার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে। এক আদিবাসী যুবককে গাছে বেঁধে মারা হচ্ছে, এমনটাই দেখা গিয়েছে সেই ভিডিওয়। মারের চোটে যত কাতর হচ্ছেন আদিবাসী যুবক, উত্তেজনা-উল্লাস ততই বাড়ছে তাঁকে ঘিরে জড়ো হওয়া ভিড়টার মধ্যে। ভিডিওয় তেমনও দেখা গিয়েছে। যারা মারধর করছিল, তাদের কেউ কেউ ভিডিও করছিল। আবার কেউ ওই যুবকের সামনে দাঁড়িয়ে নির্বিকারে সেল্ফি তুলছিলেন! পরে জানা যায়, বেধড়ক মারধরের পর মধুকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। গুরুতর জখম মধুকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ, তখন তাঁর রক্তবমি শুরু হয়। তার পরেই মৃত্যু হয়।
ছেলের মৃত্যুর খবরটা মা মল্লির কাছে যখন পৌঁছয়, তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতেই বলে চলেন, ছেলেটা বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেশ তো জীবন কাটিয়ে দিচ্ছিল। যা পেত, তাই খেত। মনকে অন্তত এটা বলে আশ্বস্ত করতে পারতাম যে ছেলেটা তো বেঁচে আছে। কিন্তু ওকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হল!
কেরল পুলিশের ডিজি লোকনাথ বেহরা অপরাধীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “চুরির ঘটনা ঘটলেও অপরাধীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া উচিত জনগণের। আইনকে হাতে নেওয়া কখনওই উচিত নয়।” পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “পিটিয়ে হত্যা করার মতো ঘটনা কেরলের সমাজের সঙ্গে খাপ খায় না। যদিও দেশের অন্যান্য প্রান্তে এমন ঘটনা আকছার ঘটছে! এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক একটা ঘটনা। সংযত হওয়া উচিত মানুষের।”
কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চান্ডি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, “এমন ভয়ানক ঘটনা ঘটার পরেও কেন পুলিশ দেরি করছে? তারা কি কাউকে ভয় পাচ্ছে? যত দ্রুত সম্ভব কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।”
আরও পড়ুন: এখনও পর্যন্ত নীরবের কী কী বাজেয়াপ্ত হল জানেন?
কেরল বিধানসভার বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালা আবার বলেছেন, “রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এই ঘটনা গোটা কেরল সমাজের অপমান।” পালাক্কড়ের বাম সাংসদ এম বি রাজেশ ফেসবুকে লিখেছেন, “আত্তাপাড়ির এই গণপিটুনি সত্যিই বেদনাদায়ক। কেরলকে উত্তর ভারত বানাবেন না। এটা কেরলের গণতান্ত্রিক এবং বিচারবোধের উপর আক্রমণ।”
প্রখ্যাত লেখক ও সমাজকর্মী সারা জোসেফ ফেসবুকে জানিয়েছেন, “এটা মালয়ালি সমাজের একটা নিষ্ঠুর মুখ। বুভুক্ষু এবং গরিবদের প্রতি এমন আচরণে সত্যিই ভীত, সন্ত্রস্ত। ছেলেটি শুধু ভাত চুরি করেছিল, তা-ও নিজের খিদে মেটাতে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy