প্রতীকী ছবি।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে নিজের ফেক প্রোফাইল খুলেছিলেন। তার পর বেছে বেছে সুন্দরী মেয়েদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেন। এ ভাবে ফেসবুকে বন্ধুর তালিকা বাড়িয়ে ফেলেছিলেন বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক বছর চৌত্রিশের আকাশ চৌধরি।
এর পর সেই সব মহিলাদের প্রোফাইল থেকে ছবি নিয়ে তাঁদের নামেই ফেক প্রোফাইল তৈরি করে ফেলতেন তিনি। না এখানেই শেষ নয়। তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে উঠে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কী করতেন সেই ফেক প্রোফাইল বানিয়ে?
তদন্তকারী অফিসাররা জানাচ্ছেন, মহিলাদের সেই ফেক প্রোফাইল থেকে আবার পুরুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতেন। সঙ্গে চ্যাটিং, মেসেজ আদান-প্রদানও চলত। এ ভাবেই ধীরে ধীরেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর পর্ব শুরু হত। এক বার ফাঁদে ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে! সেই রাস্তাও তৈরি করে ফেলেছিলেন আকাশ।
সেই সব মহিলাদের ফেক প্রোফাইল থেকে পুরুষদের প্রলোভিত করতেন। না, এমনি নয়, অবশ্যই টাকার বিনিময়ে। চ্যাটিংয়ের জন্য এক রকম টাকার রেট। দেখা করার জন্য আলাদা রেট। এ ভাবেই টাকার রেটগুলো ঠিক করে রেখেছিলেন। আর সব ক্ষেত্রে পুরো টাকাটাই অগ্রিম হিসাবে নিয়ে নেওয়া হত। বলা হত, টাকাটা মোবাইলের ই-ওয়ালেটে পেমেন্ট করে দিতে হবে।
অনেক পুরুষই এই ফাঁদে পা দিয়ে টাকা দিয়েছেন। মুম্বইয়ের এক ব্যবসায়ী যেমন ৭০ হাজার টাকা আকাশের ই-ওয়ালেটে দেন। এক তদন্তকারী অফিসার তেমনটাই জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ফেক প্রোফাইল তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সংস্থার জুতো, ঘড়ি, জামাকাপড়-সহ নানা প্রোডাক্টের প্রোমোশনের কাজও করতে শুরু করেন।
দিল্লি পুলিশের শীর্ষ আধিকারিক চিন্ময় বিসওয়াল জানান, আদতে বিহারের বাসিন্দা আকাশ এই ব্যবসার জন্য গুরুগ্রামে বেশ গুছিয়ে বসেছিলেন। বিহার থেকে পুরো পরিবার নিয়ে এসেছিলেন। বাড়ির সামনে বাবা-ছেলে মিলে একটা বড়সড় দোকান খুলে ফেলেন। আর সেই দোকানের আড়ালেই ফেক প্রোফাইলের ব্যবসা চালাতেন আকাশ। ২০১৬-য় এই কাজে নামেন তিনি। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই বেশ ফুলে-ফেঁপে ওঠে তাঁর ব্যবসা। তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যাও ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়।
ফেক প্রোফাইলের বিষয়টা প্রথম নজরে আসে দিল্লির লাজপতনগরের এক মহিলার। তিনি দেখেন তাঁর নামেই ইনস্টাগ্রামে একটি ফেক প্রোফাইল বানানো হয়েছে। আর সেই প্রোফাইলকে ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রোডাক্টের প্রোমোশন করা হচ্ছে! সঙ্গে সঙ্গে তিনি পুলিশে অভিযোগ জানান। তদন্তে নামে পুলিশের সাইবার সেল। তখনই খোঁজ পাওয়া যায় আকাশের।
তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, শুধু ফেক প্রোফাইল তৈরিই নয়, ফেসবুকের মহিলা বন্ধুদের ভয় দেখিয়ে তাঁদের আরও ছবি পাঠানোর হুমকি দিতেন। ছবি না দিলে তাঁদের ছবি পর্ন সাইটে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও শাসানি চলত বলে এক মহিলা অভিযোগ করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর সেই শাসানির সামনে অনেকেই আত্মসমর্পণ করে ছবি পাঠিয়ে দিতেন। আর সেই সুযোগকেই কাজে লাগাতেন আকাশ।
এই ঘটনায় জড়িতে সন্দেহে আকাশকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তি আইন লঙ্ঘন, প্রতারণা, অনলাইনে মহিলাদের সম্মানহানি, ফেক প্রোফাইল তৈরি, ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় এবং অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ-সহ একাধিক ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, জেরায় আকাশ প্রথম দিকে এই ঘটনার কথা অস্বীকার করলেও পরে মেনে নেয়। বিসওয়াল জানান, প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে, সুন্দরী মহিলাদের সঙ্গে চ্যাটিং ও বন্ধুত্বের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ১০-২০ জন পুরুষকে প্রতারিত করেছেন আকাশ। সাইবার সেল আরও তদন্ত করে দেখছে, আকাশ ওই মহিলাদের ছবি কোনও পর্ন সাইটে ব্যবহার করেছেন কি না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy