Advertisement
E-Paper

স্বভাব-মৌন মনমোহন মুখর হলেন সংসদে, মোদী রইলেন নীরব

সূর্য আজ পশ্চিমে ওঠেনি। উঠতেই পারত। কারণ মৌনই যাঁর স্বভাব বলে বরাবর জানা, সেই মনমোহন সিংহ আজ রাজ্যসভায় মুখর হলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৫

সূর্য আজ পশ্চিমে ওঠেনি। উঠতেই পারত। কারণ মৌনই যাঁর স্বভাব বলে বরাবর জানা, সেই মনমোহন সিংহ আজ রাজ্যসভায় মুখর হলেন। চোখা চোখা বাক্যবাণ ছুড়লেন নরেন্দ্র মোদীকে লক্ষ করে।

নোট-বিতর্কে নরেন্দ্র মোদীকে বিঁধতে অনেক দিন ধরেই মনমোহন-তাসটি খেলতে চাইছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কারণ তিনি কেবল ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী নন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর, অর্থনীতির সম্মানিত শিক্ষক। অতএব আজ প্রধানমন্ত্রী যখন রাজ্যসভায় উপস্থিত, সেই সময়ই বাকি বিরোধী দলের সম্মতিতে মনমোহন সিংহকে প্রথম বক্তা হিসেবে এগিয়ে দিয়ে মোদী-বিরোধী আন্দোলনে আরও শান দিল কংগ্রেস।

এবং সেই সুযোগ কাজে লাগালেন মনমোহন। লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের হারের পর নিয়মিত সংসদে এলেও তাঁকে খুব কমই মুখ খুলতে দেখা দিয়েছে। এক বার একটি প্রাইভেট মেম্বার বিলে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ওইটুকুই। অনেক দিন পর আজ বেনজির ভাবে আক্রমণাত্মক মনমোহনের গলায় ছিল প্রত্যয়ের সুর। নোট বাতিলের প্রসঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধে তিনি বললেন, এটি ‘পর্বতপ্রমাণ অব্যবস্থা’, এর ফলে সাধারণ মানুষের ওপর সংগঠিত লুঠ চালানো হয়েছে, আইনকে কাজে লাগিয়ে তাঁদের যা ছিল কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সরাসরি মোদীকে উদ্দেশ করে তিনি বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি জানতে চাই, এমন একটি দেশের নাম বলতে পারেন, যেখানে মানুষকে ব্যাঙ্কে জমানো নিজের টাকা তুলতে দেওয়া হয় না?’’ টাকা তোলা নিয়ে প্রতিদিন যে ভাবে নিয়ম বদলানো হচ্ছে, সেটি প্রধানমন্ত্রীর দফতর, অর্থ মন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মর্যাদাকে খাটো করে বলে অভিযোগ করেছেন মনমোহন।

সরকারের ভিতরেই আশঙ্কা রয়েছে, নোট বাতিলের বড় রকমের প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। এই আশঙ্কার জায়গাতেই আজ আঘাত হানলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। জানালেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে আর্থিক বৃদ্ধির হার কমপক্ষে ২ শতাংশ কমে যাবে। যাঁরা এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করছেন, মনমোহন তাঁদেরও একহাত নেন। বলেন, ‘‘যাঁরা মনে করেন এর ফলে স্বল্পমেয়াদে ভোগান্তি হলেও দীর্ঘমেয়াদে সুরাহা আসবে, তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিই অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনস-এর উক্তি— দীর্ঘমেয়াদে আমরা সকলেই মারা যাব!’’ মোদী স্বাভাবিক অবস্থা ফেরার জন্য ৫০ দিন সময় চেয়েছেন দেশবাসীর কাছে। মনমোহনের বক্তব্য, ৫০ দিন সময়ও গরিবদের পক্ষে দুর্বিষহ। ইতিমধ্যে ৬০-৬৫ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উচিত এখনই সঠিক পদক্ষেপ করা।

এমনিতেই শিল্পমহলে আশঙ্কা বাড়ছে। অর্থনীতিতে বিশ্বাসযোগ্য মুখ মনমোহন সিংহের এ হেন আক্রমণাত্মক বক্তব্যে দেশের অর্থনীতিতে যাতে আরও আঁচ না পড়ে, তার জন্য দ্রুত আসরে নামেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, ‘‘মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে নোট বাতিলের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যাঙ্কের হাতে আরও টাকা আসবে। এনপিএ-তে ধুঁকতে থাকা ব্যাঙ্কগুলি কৃষি ও সামাজিক ক্ষেত্রে আরও বেশি অর্থ সাহায্য করতে পারবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’’ জেটলির যুক্তি— সরকার

দায়িত্বশীল বলেই নিরন্তর পরিবর্তন আনছে। আর যে সরকার কাজ করে, তাদের উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। ইউপিএ সরকার নীতিপঙ্গুত্বের কারণে কড়া পদক্ষেপের সাহসই জোটাতে পারেনি।

তবে কংগ্রেসের মতে, মনমোহনকে দিয়ে মোদীকে আক্রমণ আসলে মাস্টারস্ট্রোক। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক বিষয়ে মনমোহন সিংহের যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে। এখনকার প্রধানমন্ত্রীর মতো কান্না বা নাটকে বিশ্বাসী নন তিনি। অল্প কথা বলেন। কিন্তু যা বলেন, তাতে ধার রয়েছে।’’

সরকারের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছেন এনডিএ-র শরিক শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। তিনি বলেন, ‘‘মনমোহন সিংহের মতো প্রতিষ্ঠিত অর্থনীতিবিদের কথা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।’’ এখানেই না-থেমে তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ কোনও এক জন ১২৫ কোটি জনতার হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ব্রিটেন আলাদা হওয়ার সময় জনমতের পর সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে পদ ছাড়তে হয়েছিল। এখানেও সে রকম সমীক্ষা হওয়া দরকার। এ দেশেও কি তেমন পরিণতি হবে?’’

Manmohan Singh Questioned Modi Parliament Demonetisation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy