Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
National

তখ্‌ত ফিরে পেতে ফের দলিত মুলুকে পা বহেনজির

তিলক, তরাজু অউর তলোয়ার, ইনকো মারো জুতা চার। ভুল। এ কত পুরনো স্লোগান! আমি না কি টিকিট বিক্রি করছি? ভুল ভুল। আমার দল না কি নড়বড়ে? নেতারা সব ছেড়ে চলে যাচ্ছেন? ভুল ভুল ভুল। দলই যদি নড়বড়ে, তাহলে টিকিট বিক্রি নিয়ে মারামারি কেন?

আগরার জনসভায় মায়াবতী।- নিজস্ব চিত্র।

আগরার জনসভায় মায়াবতী।- নিজস্ব চিত্র।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
আগরা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৬ ২০:৩০
Share: Save:

তিলক, তরাজু অউর তলোয়ার, ইনকো মারো জুতা চার।

ভুল। এ কত পুরনো স্লোগান!

আমি না কি টিকিট বিক্রি করছি?

ভুল ভুল।

আমার দল না কি নড়বড়ে? নেতারা সব ছেড়ে চলে যাচ্ছেন?

ভুল ভুল ভুল। দলই যদি নড়বড়ে, তাহলে টিকিট বিক্রি নিয়ে মারামারি কেন?

পরের লাইনটি মন দিয়ে শোনো। আকাশে থুতু ছেটালে আকাশ ময়লা হয় না, থুতু নিজের গায়েই এসে পড়ে।

তিনি অনন্যা। দলিত শক্তির প্রতীক। নিজেই বলেন, দলিত-পিছিয়ে পড়া শ্রেণি তাঁকে শুধু ‘বহেনজি’ ডাকে না, তাঁকে ‘দেবী’ বলেও মানে। মঞ্চে একটি বিশাল কলেবরের সোফাকে সিংহাসন বানানো হয়েছে। বাকি নেতারা পিছনের ছোট ছোট চেয়ারে কোনও রকমে ঠেসেঠুসে। হাতের ছোট্ট ভ্যানিটিটি রেখে সেই সিংহাসনেই দু’হাত ছড়িয়ে দেবীর মতো বসলেন।

ভোটের এত আগে ‘বহেনজি’ মায়াবতী কখনও প্রচার শুরু করেননি। কিন্তু এ বারে রাজনৈতিক জীবনের সবথেকে কঠিন লড়াইটি লড়তে হচ্ছে। যে ভোটব্যাঙ্কে এ বারে থাবা বসাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর দল। পঞ্চমবার লখনউয়ের সিংহাসনে বসার জন্য এ বারে তাঁর তুরুপের তাস দলিত ও সংখ্যালঘু ভোট। তাই ভোটের দামামা বাজানোর জন্য প্রথম সভাটি বেছে নিয়েছেন তথাকথিত ‘দলিত রাজধানী’ আগরাকে। যার চারপাশে সংখ্যালঘুর বাসও বিস্তর। ভিড় হওয়া না পর্যন্ত বসে থাকলেন লখনউতে। মঞ্চে এলেন দু’ঘন্টা পরে। কারণ, এই ভিড় আর উন্মাদনাই তাঁর শক্তি প্রদর্শনের মূলধন। মাস কয়েক আগে এই আগরাতেই যে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ দলিতদের জড়ো করতে না পারায় সভা বাতিল করেছিলেন। আগামী এক মাসে ফি-হপ্তায় একটি করে সভা করবেন মায়াবতী।

কিন্তু ভোট প্রচার নিয়ে এত তাড়না আগে কখনও দেখা যায়নি তাঁর। এ বারে দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক মাস ধরে সত্যিই তাঁর ভিত নড়বড়ে হয়েছে। বেশ কিছু তাবড় নেতা তাঁর দল ছেড়েছে। দলিত বাড়িতে ভোজ সেরে অমিত শাহ তাঁর ভোটব্যাঙ্কেও চিড় ধরাচ্ছেন। একসময় উচ্চবর্ণকে গাল পেড়ে মায়াবতী যে স্লোগান দিতেন, সেটিও সুকৌশলে ছড়িয়ে দিচ্ছেন গো-বলয়ের সবথেকে বড় রাজ্যে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ‘বহেনজি’র জিয়নকাঠি বিজেপিরই এক প্রাক্তন নেতা দয়াশঙ্কর সিংহের তাঁর প্রতি কুকথা। আর দেশজুড়ে দলিত-নিগ্রহের ঘটনা।

আজ প্রায় এক ঘন্টার বক্তৃতার সিংহভাগ জুড়ে বিঁধলেন নরেন্দ্র মোদী আর মোহন ভাগবতকে। দশ মিনিটের সাংবাদিক সম্মেলনই হোক বা এক ঘন্টার জনসভা- বরাবর লিখেই আনেন নিজের বক্তৃতা। আজও তার অন্যথা হয়নি। আর সেই লিখিত বক্তৃতায় কংগ্রেসের উচ্চবর্ণের ভোট টানার ঝোঁক আর অখিলেশের আমলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে খোঁচা থাকলেও আগাগোড়া নিশানায় ছিল বিজেপি আর আরএসএস। সদ্য গতকাল এই আগরাতেই সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত বলে গিয়েছিলেন, হিন্দুদের আরও বেশি সন্তান করতে আইনে বাধা কোথায়? আক্রমণের লক্ষ্য অবশ্যই সংখ্যালঘু।


মায়াবতীর সভায় এক বিএসপি সমর্থক। রবিবার, আগরায়।- নিজস্ব চিত্র।

হাতে যেন কুড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা মায়াবতীর। যে দলিত ও সংখ্যালঘু ভোটে তিনি সওয়ার হতে চাইছেন, বিজেপি আর আরএসএস যেন সেই অস্ত্রই তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছে একে একে। এই সুযোগে বিজেপি-আরএসএসকে নিশানা করে উত্তরপ্রদেশের লড়াইটা বিজেপি বনাম বহুজন সমাজ পার্টিতে নিয়ে যেতে চাইছেন দলের সুপ্রিমো। বললেন, “আরএসএসের প্রধান হিন্দুদের সন্তান বাড়াতে বলছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী কী তাঁদের মুখে রুটি দিতে পারবেন? সংখ্যালঘু ও দলিতদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। মোদীর নিজের রাজ্যেও। মোদী আরএসএসেরই এজেন্ডা পালন করছেন। দলিত নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সহানুভূতি চাই না। দু’বছরে কোনও প্রতিশ্রুতিও তো পালন করতে পারেননি নরেন্দ্র মোদী। শুধু হিন্দু ভোটকে একজোট করার বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দলিত ভোট টানতে চাইছেন। আর সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে যোগসাজশ করে হিন্দু ও মুসলমান ভোট ভাগাভাগি করতে চাইছেন। উভয়েই তাই দাঙ্গা করায়।”

কিন্তু বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, যোগসাজশ বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টির নয়। জোট মায়াবতী ও কংগ্রেসের। মায়াবতী দলিত ও সংখ্যালঘু ভোট চান, আর শীলা দীক্ষিতকে সামনে রেখে কংগ্রেস উচ্চবর্ণের। একসময় ‘তিলক তরাজু…র স্লোগান দিয়ে উচ্চবর্ণের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন মায়াবতী। পরে সামাজিক রসায়ন করে স্লোগান বদলে বলেছিলেন, ‘হাতি নেহি গণেশ হ্যায়, ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ হ্যায়’। কিন্তু সেই রসায়ন ধরে রাখতে পারেননি। ফের তাই নিজের কোর ভোটব্যাঙ্কেই ভর করেছেন। বিজেপি সরকার শুধু দলিতদের সহানুভূতি দেখায় না। আজও পঞ্জাবের গো-রক্ষা দলের প্রধান সতীশ কুমারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর যে দয়াশঙ্কর সিংহের কথা বলছেন মায়াবতী, তাঁকে দল তখনই বের করে দিয়েছে। মায়াবতীর কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- দলিত-মুসলিম ভোটেই নজর মায়ার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mayawati Meeting BSP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE