Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National

চুড়ি বেচে পড়াশোনা, রমেশ এখন আইএএস

মহারাষ্ট্রের শোলাপুর জেলার মহাগাঁও গ্রামের লোকজন রমেশ ঘোলাপকে রামু নামেই ডাকত। সাইকেল সারাই করতেন রামুর বাবা। সংসারে বেশি টাকা দিতে পারতেন না। তার উপর আবার নেশাগ্রস্তও ছিলেন। রামুর মা বিমলা দেবী গ্রামে চুড়ি বিক্রি করতেন। তাঁকে সাহায্য করত ছোট্ট রমেশ।

নিজের অফিসে আইএএস রমেশ ঘোলাপ। ছবি: সংগৃহীত।

নিজের অফিসে আইএএস রমেশ ঘোলাপ। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৭ ১১:৫৮
Share: Save:

মহারাষ্ট্রের শোলাপুর জেলার মহাগাঁও গ্রামের লোকজন রমেশ ঘোলাপকে রামু নামেই ডাকত। সাইকেল সারাই করতেন রামুর বাবা। সংসারে বেশি টাকা দিতে পারতেন না। তার উপর আবার নেশাগ্রস্তও ছিলেন। রামুর মা বিমলা দেবী গ্রামে চুড়ি বিক্রি করতেন। তাঁকে সাহায্য করত ছোট্ট রমেশ। এই ভাবেই গোটা পরিবারের দিনযাপনের খরচ জুটত। মহাগাঁওতেই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে, পরবর্তী শিক্ষার জন্য বরশিতে কাকার কাছে চলে এসেছিল কিশোর রমেশ।

স্কুলে ভাল পড়াশোনা করে শিক্ষকদের গুড বুকে প্রথম থেকেই নাম তুলে ফেলেছিল ছোট্ট রামু। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দেওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে মৃত্যু হয় রামুর বাবা গোরখ ঘোলাপের। বাবাকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য বাড়ি ফেরার টাকাটা পর্যন্ত ছিল না রামুর কাছে। পাড়া পড়শির সাহায্যে অবশেষে সে এসে পৌঁছয় বাড়িতে বাবার অন্ত্যোষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন করতে।

স্কুলে ফেরত এসে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিয়ে ৮৮.৫ শতাংশ নম্বর পায় রামু। ভর্তি হয় ডিপ্লোমা এডুকেশনে। বৃত্তি পাওয়া রামুর এই একটা কোর্সই ছিল সাধ্যের মধ্যে। ২০০৯ সালে একটি ছোট্ট স্কুলে শিক্ষক হিসাবে তাঁর নতুন জীবনের শুরু।


মা এবং স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে রমেশ ঘোলাপ।

তবে রামুর স্বপ্ন ছিল- ‘এ গানের শেষেই আছে ভোরের আকাশ’। ছোট থেকে দূর থেকে তহশিলদারদের দেখতেন আর ভাবতেন, নিজেও একদিন তহশিলদার হবেন। ছোট্ট রামুর ধারণা ছিল, তহশিলদার হলেই তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সমস্ত সমস্যাকে হেলায় হারাতে পারবেন। স্বপ্ন সফল করতে প্রয়োজন ছিল টাকার। ঝুঁকি নিয়ে ধার করে পুণে পাড়ি দেন স্বপ্নের সন্ধানে। শুরু হয় ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি।

যদিও ইউপিএসসি নিয়ে তেমন কোনও ধারণাই ছিল না তাঁর। পুণেতেই অতুন লান্ডে নামে এক শিক্ষকের সংস্পর্শে আসেন রামু। তিনিই তাঁকে ঘষে মেজে তৈরি করে দেন ইউপিএসসি-র জন্য। স্কলারশিপের টাকা তো ছিলই। কিন্তু তাতেও খরচ বাগ মানছিল না। খরচ সামলাতে পোস্টার বানাতে থাকেন পড়ার ফাঁকে ফাঁকে। তা বিক্রি করে হস্টেল ফি আর খাওয়াদাওয়ার খরচ উঠে আসত। ২০১০ সালে প্রথম বারের ইউপিএসসি পরীক্ষা আশানুরূপ ফল হল না। হতাশ না হয়ে চলল আরও পরিশ্রম। পরের বার গোটা দেশে ইউপিএসসিতে ২৮৭ র‌্যাঙ্ক করলেন রমেশ। কিছু দিনের মধ্যেই এমপিএসসি-রও ফলাফল বেরোয়। শিক্ষক থেকে পুণের বন্ধুবান্ধব— সক্কলকে তাক লাগিয়ে দিয়ে রমেশ টপার হলেন এই পরীক্ষায়। মোট এক হাজার আটশো নম্বরের মধ্যে রামুর সংগ্রহে ছিল ১,২৪৪ নম্বর। ২০১২ সালে সে নিজের গ্রামে ফেরে, তবে রামু হয়ে নয়, রমেশ ঘোলাপ আইএএস অফিসার হয়ে।


গ্রামের লোকজনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় আইএএস রমেশ ঘোলাপ।

বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের এনার্জি ডিপার্টমেন্টের জয়েন্ট সেক্রেটারি রমেশ ঘোলাপ। ইউপিএসসি এবং এমপিএসসির ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দিতে বিশেষ সেশনও করেন তিনি। পাশাপাশি গরিব দুঃস্থদের স্বপ্নপূরণেও যথেষ্ট সাহায্য করে থাকেন রমেশ ঘোলাপ। করবেন নাই বা কেন! নিজের অতীতটা তো ভুলে যাননি তিনি। ভুলতে চানও না।

আরও পড়ুন: রাজ্যের দুই-সহ দেশের ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ভুয়ো! বিবৃতি দিয়ে জানালো ইউজিসি

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ramesh Gholap IAS Officer Life Struggle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE