Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পাখা না চললেই গোসা নশুবালার

হলোই বা সে ছাগল। কিন্তু যা-তা খাবার মুখে তোলে না। প্রাতঃরাশে তার চাই আনাজ। তা-ও একেবারে টাটকা। শুধু খোসা দিলে শুঁকেও দেখবে না। পরিবেশনে তাচ্ছিল্য টের পেলেও তুমুল গোসা।

আদর: দূর্বা দেবের সঙ্গে নশুবালা। শিলচরে। নিজস্ব চিত্র

আদর: দূর্বা দেবের সঙ্গে নশুবালা। শিলচরে। নিজস্ব চিত্র

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫১
Share: Save:

প্রবাদ একটুও মানে না নশুবালা।

হলোই বা সে ছাগল। কিন্তু যা-তা খাবার মুখে তোলে না। প্রাতঃরাশে তার চাই আনাজ। তা-ও একেবারে টাটকা। শুধু খোসা দিলে শুঁকেও দেখবে না। পরিবেশনে তাচ্ছিল্য টের পেলেও তুমুল গোসা।

যেমন খাওয়া, তেমনই ঘুম। শীতে সে কাবু হয় না। গায়ে লেপ-কাথা তুলতে অনীহা। কিন্তু গরমে তার জন্য ফ্যান চালাতেই হবে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে সে দেখে নেবে— পাখা ঠিকমতো ঘুরছে কিনা। বিছানার চাদরও থাকতে হবে টানটান। না হলে অপেক্ষায় থাকবে গৃহকর্ত্রীর। দু’জনের যে একই বিছানা!

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপিকা দূর্বা দেব মশারির ভিতরে ঘুমোন। নশুবালা মশারির বাইরে। তাই মশারির তিন দিক টাঙাতে পারেন দূর্বাদেবী। পোষ্য ছাগলের জন্য মশারির অন্য দিক থাকে খোলা। সাড়ে তিন বছর ধরে এমনই চলছে।

নশুবালার মা-দিদিমাও ছিল দেব পরিবারের বাড়িতেই। কিন্তু তাদের সঙ্গে এত ভাব ছিল না দূর্বাদেবীর। তিনি জানান, নশুবালার দিদিমা কোথা থেকে পথ ভুলে তাঁদের বাড়ি ঢুকে পড়েছিল। ফিরতে পারেনি। কিছু দিন পরই নশুর মায়ের জন্ম। তার পর মাস চারেকের মধ্যে মারা যায় নশুর দিদিমা। একই ভাবে নশুবালার মা তাকে জন্ম দিয়ে চার মাসই বেঁচে ছিল। দূর্বাদেবী নশুবালাকে অন্য ছাগলের সঙ্গে মিশতে দেননি। দোতলা থেকে নামারই অনুমতি নেই তার। নীচে কখনও ঘাস খেতে গেলে দূর্বাদেবী সঙ্গে থাকেন। এমনই কড়া শাসন, সাড়ে তিন বছরে নশুবালা নিজের প্রজাতির অন্য কাউকেই দেখতে পায়নি!

প্রাকৃতিক নিয়মেই এখন আর তার মা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এতে স্বস্তিবোধ করেন বাংলার দিদিমণি। মা-বাবা মারা যাওয়ার পর বাড়িতে একাই থাকেন। নশুবালা তাঁর যোগ্য সঙ্গী। আর আছে তিনটে বিড়াল।

২০১৩ সালে শিলচরে এসে দূর্বাদেবীর ‘সংসার’ দেখে গিয়েছেন ভাষাবিদ পবিত্র সরকার। ফিরে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘… সে (নশু) তার জায়গায় চলে গেল, গিয়ে তার নিজস্ব চেয়ারে উঠে বসল। হ্যাঁ, চেয়ারেই বসল সে। কারণ সে চেয়ার ছাড়া বসে না। … নশু নামে এই পোষ্যটি (জানি না, কে কার পোষ্য, দূর্বা-র সে, না সে দূর্বার) দূর্বার জীবনকে ভরে রেখেছে।’

বাস্তবেও যে তা-ই ঘটছে তা মানেন দূর্বাদেবীও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Goat Assam University Fan নশুবালা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE