বছর গড়ালে ভোট উত্তরপ্রদেশে। তার আগে সেঞ্চুরি হাঁকাতে চান নরেন্দ্র মোদী। তাই এখন থেকেই সেখানে ‘কার্পেট বম্বিং’-এ নেমে পড়েছেন মোদী-অমিত শাহরা। দু’জনে স্থির করেছেন, উত্তরপ্রদেশের ভোট পর্যন্ত প্রতি মাসে একটি করে সভা করবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। ভোট যত এগিয়ে আসবে, জনসভার সংখ্যাটিও তত বাড়বে। অমিত শাহ ও রাজনাথ সিংহও ফি-মাসে নিয়ম করে সভা করবেন। সব মিলিয়ে ভোটের আগে একশোটি জনসভা করতে চান বিজেপি নেতৃত্ব।
কেন এই কৌশল? গত লোকসভা নির্বাচনে আশিটির মধ্যে ৭৩টি আসন পেয়ে বাজি মেরেছিলেন অমিত। তাতে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’-এর শিরোপা জোটে মোদীর কাছ থেকে। ভোটের পরেই অমিতকে দলের সভাপতি করা হয়। কিন্তু রাজ্যটি থেকে এত জন সাংসদ পেলেও লখনউয়ের
তখ্ত দখল করাটা তত মসৃণ হবে বলে মনে করছে না বিজেপি। লোকসভা ভোটের পর যে সব রাজ্যে ভোট হয়েছে, তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভাল ফল করেনি বিজেপি। এর একটি কারণ অবশ্যই, মোদী-ঝড় উধাও হওয়া। সেই ঝড় ফিরিয়ে আনতে প্রতি মাসে মোদীকেই আসরে নামাচ্ছেন শাহ। লখনউয়ে তিনি আজ বলেন, ‘‘উন্নয়ন, উন্নয়ন ও উন্নয়নই প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র মন্ত্র। সেই মন্ত্র নিয়েই তিনি উত্তরপ্রদেশে
প্রচার করবেন।’’
মুখে এ কথা বললেও বিজেপি নেতৃত্ব জানেন, নিছক উন্নয়নের বুলি আউড়ে উত্তরপ্রদেশে ভোট হয় না। এখন অখিলেশ যাদবও উন্নয়নের সাইকেলে সওয়ার হয়েছেন। কিন্তু এর সঙ্গে জাত-পাত-ধর্মের সমীকরণও এখানে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। অমিত তাই উন্নয়নের হোতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে সামনে রেখেও ভরসা রাখছেন নিজের পুরনো ঘুঁটির উপরে। সেটি হল, সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ। বেশির ভাগ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক যখন বলছেন, এ বারে সরকার গড়ার দৌড়ে মায়াবতীই অনেকটা এগিয়ে, অমিত সেখানে বলছেন, ‘‘সমাজবাদী পার্টিই আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ।’’ বিজেপি-বিরোধীরা বলছেন, অখিলেশকে নিশানায় রেখে অমিত আসলে মেরুকরণের রাজনীতিই করতে চাইছেন। মায়াবতীর দলকে মাঝমাঠ থেকে সরিয়ে রেখে বলের দখল রাখতে পারে বিজেপি-সমাজবাদী অঘোষিত মিলিজুলি টিম। যাতে অমিত-অখিলেশ উভয়েই ফায়দা তুলতে পারে।
অখিলেশ সরকারের রিপোর্টের পর দাদরি নিয়ে উত্তাপ বাড়ছে। পরিস্থিতি উস্কে দিতে বিজেপি ফের সক্রিয় সেখানে। শুরু হয়ে গিয়েছে বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টির বাগ্যুদ্ধ। মায়াবতী বলেছেন, ভোট এলে এ ভাবেই সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলে বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টি।
সমাজবাদী পার্টিকে মূল প্রতিপক্ষ ঘোষণা করলেও অমিত তৎপর মায়াবতীর দলিত ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাতে। ইতিমধ্যেই দলিতের ঘরে খাবার খেয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন বিজেপি সভাপতি। আজও তিনি বলেছেন, ‘‘মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি ও মুলায়ম-অখিলেশদের সমাজবাদী পার্টি সব সময় দলিতদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে।’’ এরই সঙ্গে সুকৌশলে রামমন্দিরের প্রসঙ্গও হাওয়ায় ভাসিয়ে রাখতে চাইছে বিজেপি। জাত-পাত ও ধর্মের ভিত্তিতে দলের নানান মুখকেও কাজে লাগানোর পরিকল্পনা তৈরি রয়েছে। তবে সব ধর্ম ও জাতপাতের লোকের মধ্যেই উদার মনের একটি অংশ রয়েছে, যাঁদের উপরে অমিতের এই কৌশল না-ও কাজে আসতে পারে। বিশেষ করে যুবকদের কাছে টানতে তাই ব্যবহার করা হবে মোদীকে। যিনি ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর মন্ত্রবলে ফের লোকসভা ভোটের সময়কার জাদু-পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করবেন। সরকারের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষেও সভা করার জন্য উত্তরপ্রদেশের সহারনপুরকে বেছে নিয়েছিলেন মোদী। সেখানে বক্তৃতা শুরুই করেছিলেন নিজেকে ‘ইউপিওয়ালা’ বলে। আগামী সপ্তাহের গোড়ায় ইলাহাবাদে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক হবে। বৈঠক শেষে সভা করতে পারেন মোদী। তার পর থেকে প্রতি মাসেই গোবলয়ের সব থেকে বড় রাজ্যে গিয়ে মনের কথা মেলে ধরবেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy