নরেন্দ্র মোদী।— ফাইল চিত্র।
চোদ্দ বছর পর কোনও ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আসছেন নয়াদিল্লি। দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করতে জানুয়ারির গোড়ায় রাজধানীতে পা রাখবেন বেঞ্জামিন নেতানইয়াহু। তার ঠিক আগে ‘ম্যান পোর্টেবল অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল’ চুক্তি নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তি তৈরি হল দু’দেশের মধ্যে। প্রায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তিটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সরকারি প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-র তত্ত্বাবধানে দেশেই এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হবে। সাউথ ব্লকের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ইজরায়েল। ঘরোয়া ভাবে সে দেশের একটি অংশের অভিযোগ, হাতে গোনা কয়েকটি ব্যবসায়িক সংস্থা তথা দালালতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে বিদেশি বিনিয়োগের পথ জটিল করে দেওয়া হচ্ছে। রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে যখন বিরোধীরা অভিযোগে উত্তাল, ঠিক সেই সময়ে ইজরায়েলের সঙ্গে এই মতান্তর মোদী সরকারকে আরও কিছুটা কোণঠাসা করতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরির ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ইজরায়েলকে। সেই অনুযায়ী চুক্তিও হয়। স্থির হয়েছিল, ভারতেই এর উৎপাদন হবে ইজরায়েলের কাছ থেকে উন্নত প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে। নয়াদিল্লির বক্তব্য, ইজরায়েলের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রস্তাব দেওয়া হয় যে, এই ক্ষেপণাস্ত্র তারা ভারতকে সরাসরি বিক্রি করতে ইচ্ছুক। এই প্রস্তাবেই পিছিয়ে আসে ভারত। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘ইজরায়েল কেন, বিশ্বের কোনও দেশের থেকেই এটি কেনার কোনও পরিকল্পনা নেই আমাদের। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করার মতো পরিকাঠামো এবং আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা আমাদের রয়েছে। এর আগেও সফল ভাবে আমরা এই ক্ষেত্রে কাজ করেছি।’’
ইজরায়েলের পক্ষ থেকে কিন্তু ভারতের দেওয়া এই যৌথ উদ্যোগের মডেলটি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। তাদের বক্তব্য, সরাসরি বিক্রি নয়, ভারতেই ওই ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের জন্য তারা ১০০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল। ইজরায়েল দূতাবাস সূত্রের ক্ষোভ, এই যৌথ উদ্যোগের নামে আসলে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে হাতে গোনা কিছু ভারতীয় বাণিজ্যিক সংস্থাকে। তারা যৌথ প্রকল্পে মাত্র ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করে অনেকটাই লাভের গুড় খেয়ে চলে যাবে, এটাই ভারতের পরিকল্পনা। ঘরোয়া ভাবে সে দেশের একটি অংশের অভিযোগ, এর ফলে ভারতের দালালতন্ত্র শক্তিশালী হতে পারে, কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে বিনিয়োগকারী দেশের। অম্বানী এবং আদানির মতো হাতে গোনা কয়েকটি সংস্থাকে এই ধরনের যৌথ উদ্যোগে সামিল করা হয় বলে এর আগেও অভিযোগ করেছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।
ইজরায়েলের সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র বিতর্ক এমন একটি সময়ে দানা পাকাচ্ছে, যখন ফ্রান্স থেকে কেনা রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বা মন্ত্রিসভার অনুমোদন মেলার আগেই ২০১৫-র এপ্রিলে ফ্রান্স সফরে গিয়ে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার কথা ঘোষণা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেসের অভিযোগ, মনমোহন সিংহের আমলে এই রাফাল যুদ্ধবিমানের জন্য যে দাম ঠিক হয়েছিল, তার থেকে তিনগুণ বেশি দাম দিয়ে এখন কেনা হচ্ছে। মনমোহনের আমলে
এই যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তি রাষ্ট্রায়ত্ত হ্যাল (হিন্দুস্থান এরোনটিক্স লিমিটেড)-কে হস্তান্তরের কথা থাকলেও নয়া চুক্তিতে তা নেই। এই প্রক্রিয়ায় অনিল অম্বানীর প্রতিরক্ষা সংস্থা লাভবান হবে বলেও অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy