Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মুখ খুলুন মোদী, দাবি জিগ্নেশের

এই দলিত আন্দোলনের পিছনে সরাসরি কংগ্রেসের কোনও ভূমিকা নেই। তবু সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলার সুযোগ ছাড়তে নারাজ রাহুল গাঁধীর দল।

সাংবাদিক বৈঠকে জিগ্নেশ। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

সাংবাদিক বৈঠকে জিগ্নেশ। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৯
Share: Save:

মহারাষ্ট্রে দলিত বিক্ষোভের আঁচ ছড়াচ্ছে অন্য রাজ্যেও। মহারাষ্ট্র থেকে গুজরাত হয়ে আপাতত তা এসে পৌঁছেছে দিল্লি। রাজধানীতে এসে গুজরাতের দলিত বিধায়ক জিগ্নেশ মেবাণী হুঙ্কার দিলেন, ‘‘দলিতদের উপরে লাগাতার হামলা হচ্ছে। উনা ও সহারানপুরের ঘটনা, রোহিত ভেমুলা পর্ব বা ভীমা কোরেগাঁওয়ে হিংসার পরে, এ বার তো অন্তত মুখ খুলুন প্রধানমন্ত্রী।’’ জিগ্নেশ ঘোযণা করলেন, ৯ জানুয়ারি তাঁরা যুব র‌্যালি করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। নিয়ে যাবেন দু’টি বই— মনুস্মৃতি ও দেশের সংবিধান। এ দু’টির যে কোনও একটি বেছে নিতে বলবেন মোদীকে। জানতে চাইবেন, দলিতেরা কেন বিপন্ন?

তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, এই দলিত আন্দোলনের পিছনে সরাসরি কংগ্রেসের কোনও ভূমিকা নেই। তবু সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলার সুযোগ ছাড়তে নারাজ রাহুল গাঁধীর দল। বিভিন্ন রাজ্যের দলিত সংগঠনকে একজোট করে দিল্লিতে সভা করার পরিকল্পনা রয়েছে কংগ্রেসের। দলীয় নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার কথায়, ‘‘এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে, বিজেপি ও মোদী দলিতবিরোধী। গুজরাতে মোদীর হিন্দুত্ব অভিযান আসলে দলিত-বিরোধী অভিযান।’’

পরশুর হাঙ্গামার পরে মহারাষ্ট্র সরকার গত কাল প্রায় শেষ মুহূর্তে জিগ্নেশ ও জেএনইউয়ের ছাত্র উমর খালিদদের মুম্বইয়ের অনুষ্ঠান বাতিল করে। ক্ষুব্ধ দলিত সংগঠনগুলি এ বার অনলাইনে তাঁদের বক্তব্য প্রচারের ব্যবস্থা করছে। দিল্লিতে জিগ্নেশ আজ জানতে চান, ‘‘প্রধানমন্ত্রীই বলুন, এ দেশে দলিতদের শান্তিপূর্ণ ভাবে সভা করা বা প্রতিবাদ জানানোর অধিকার আছে কি না।’’ মোদীকে তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্বও মনে করিয়ে দেন। বলেন, ‘‘প্রত্যেক দেশবাসীকে জাতপাত-ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ হত হবে। প্রধানমন্ত্রীকেও এটা বুঝতে হবে। মনুস্মৃতির পথে না হেঁটে তিনি সাংবিধানিক মূল্যবোধের কথা বলবেন, এটাই আশা।’’

পুণের কাছে ভীমা কোরেগাওঁয়ে সম্প্রতি প্ররোচনামূলক বক্তৃতা দেওয়ার জন্য তাঁর ও খালিদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। জিগ্নেশের মতে, এটা মহারাষ্ট্র সরকারের ‘ছেলেমানুষি’। তাঁর দাবি, পুণেতে একটিও উত্তেজক শব্দ বলেননি তিনি। দেশের লক্ষ লক্ষ দলিতকে বার্তা দিতেই এ ভাবে তাঁদের প্রতিষ্ঠিত নেতাদের নিশানা করছে বিজেপি ও সঙ্ঘ।

উত্তর গুজরাতের বডগাম কেন্দ্রের বিধায়ক জিগ্নেশের দাবি, তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়ছে দেখে ভয় পেয়েছে বিজেপি-সঙ্ঘ। ওরা ধরে নিয়েছিল গুজরাতে ১৫০ আসন পাবে। কিন্তু থামতে হয়েছে ৯৯-এ। এখন ২০১৯ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছে। সে কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে এমন উঠে পড়ে লেগেছে। এর পরেই জিগ্নেশের হুঁশিয়ারি, ‘‘দলিতদের যদি এ ভাবে লাগাতার নিশানা করা হয় ও আমার সুনাম কলঙ্কিত করার চেষ্টা হয়, তা হলে প্রধানমন্ত্রী জেনে রাখুন, ২০১৯-এ শিক্ষা পেতে হবে আপনাকে।’’

এরই সঙ্গে সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা বি আর অম্বেডকরের নীতির প্রতি মোদীর নিষ্ঠা নিয়েও প্রশ্ন ছোড়েন জিগ্নেশ। বলেন, ‘‘নিজেকে তো বি আর অম্বেডকরের অনুগামী হিসেবে প্রচার করেন। বাবাসাহেবের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল, জাতপাতের সম্পূর্ণ বিলোপ। প্রধানমন্ত্রী কি আদৌ তার প্রতি দায়বদ্ধ?’’

দলিত কাঁটায় অস্বস্তি বাড়ায় জিগ্নেশের আক্রমণের জবাবে দিতে বিজেপির মুখপাত্র প্রভাত ঝা বলেন, ‘‘জিগ্নেশ গোটা দেশে বিষ ছড়াচ্ছেন। অকারণেই দুষছেন বিজেপি-সঙ্ঘকে। এ ভাবে নিজের দুর্বলতা ও গলতি ঢাকতে পারবেন না তিনি।’’ বিজেপির শরিক মহারাষ্ট্রের আরপিআই-এর দলিত নেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আঠবালে বলেন, ‘‘জিগ্নেশ আমাদের সম্প্রদায়ের নবীন নেতা। প্ররোচনামূলক বক্তৃতা দেওয়া উচিত হয়নি তাঁর। তবে এফআইআরের পিছনে বিজেপির কোনও হাত নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE