করুণানিধিকে কাছে টানাই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’-এর মূল উদ্দেশ্য। রাজনৈতিক শিবির তেমনই বলছে। ছবি: পিটিআই।
জোটসঙ্গী বদলাতে চলেছে বিজেপি। জোর জল্পনা তামিলনাড়ুতে। সোমবার একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে চেন্নাই সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শেষ মুহূর্তে সফরসূচি বদলে দেখা করে এসেছেন ডিএমকে প্রধান করুণানিধির সঙ্গে। বিজেপি এবং ডিএমকে— দুই দলই বলছে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। কিন্তু তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার করে বিশ্লেষকদের মধ্যে জোর জল্পনা, মোদী এখন এআইএডিএমকে-র হাত ছেড়ে ডিএমকে-র সঙ্গে হাত মেলাতে চান। সেই কারণেই আচমকা করুণানিধির সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি।
করুণানিধির ছেলে তথা ডিএমকের কার্যকরী সভাপতি এম কে স্ট্যালিন কিন্তু সোমবারই জানিয়েছিলেন, জল্পনার কোনও কারণ নেই। দীর্ঘ অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠা কালাইগনারকে দেখতেই মোদী এসেছিলেন তাঁর বাড়িতে। মোদীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তও তেমনই জানায়। কিন্তু জল্পনা তাও রোখা যায়নি। এতটাই ব্যস্ত সফরসূচি নিয়ে চেন্নাই গিয়েছিলেন মোদী যে, মুখ্যমন্ত্রী পলানীস্বামীর সঙ্গে বৈঠক করার মতো সময়ও তাঁর ছিল না। মোদীর কপ্টারে তাঁর সহযাত্রী হয়ে শেষ পর্যন্ত পলানী রাজ্যের দাবি-দাওয়া পেশ করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কিন্তু এমন ব্যস্ত সূচির মাঝেও করুণানিধির বাড়ি যাওয়ার জন্য সময় বার করে নিতে মোদীর অসুবিধা হয়নি। রাজনৈতিক শিবির একে মোটেই শুধুমাত্র ‘সৌজন্য’ হিসেবে দেখতে রাজি নয়।
জল্পনার আগুনে কিন্তু অক্সিজেন জোগাচ্ছেন বিজেপি নেতারাই। ডিএমকে-র সঙ্গে জোট করতে চায় বিজেপি— এমন কথা সরাসরি বলছেন না তামিলনাড়ুর বিজেপি নেতারা। কিন্তু আকারে-ইঙ্গিতে বেশ স্পষ্ট করেই তাঁরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন, ডিএমকে-র সঙ্গে বিজেপি-র জোট অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আরও পড়ুন: দল ভাঙাচ্ছে বিজেপি, ক্ষোভ মমতার
১৯৯৬ এবং ১৯৯৮-এর লোকসভা নির্বাচনে ডিএমকে লড়েছিল বিজেপি-র বিরুদ্ধেই। কিন্তু সে সময়ে বিজেপির জোটসঙ্গী জয়ললিতার দল এআইএডিএমকে বাজপেয়ী সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে মন্ত্রিসভার পতন ঘটিয়ে দেওয়ার পর দ্রুত কাছাকাছি এসেছিল বিজেপি এবং ডিএমকে। ১৯৯৯ সালে ফের বাজপেয়ীই ক্ষমতায় আসেন এবং ডিএমকে সেই মন্ত্রিসভায় যোগও দেয়।
স্ট্যালিন ও কানিমোঝির সঙ্গে মোদীর আন্তরিক আলাপচারিতার এই ছবি শুধু ‘সৌজন্যমূলক’ নয়, মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ছবি: পিটিআই।
বিজেপি এখন ১৯৯৯ সালের দৃষ্টান্তই তুলে ধরছে। কেন্দ্রে অকংগ্রেসি সরকার গঠনের স্বার্থে ডিএমকে ১৯৯৯ সালে বিজেপির হাত ধরেছিল। তার আগেও একাধিক বার কংগ্রেস বিরোধী অবস্থানে দাঁড়িয়ে ডিএমকে এমন জোটের অংশ হয়েছে, যে জোটে বিজেপির পূর্বসূরি জনসঙ্ঘও ছিল। তাই ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ডিএমকে-বিজেপি হাত মিলিয়ে লড়লে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এমন সব কথাই এখন হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিজেপির তরফে।
তামিলনাড়ুতে বিজেপি-র শক্তি উল্লেখযোগ্য নয়। কংগ্রেসের অবস্থাও তথৈবচ। মূলত জোটসঙ্গীদের উপর নির্ভর করেই তামিল তালুকে ভোটে লড়ে এই দুই জাতীয় দল। বিরোধী দল ডিএমকে-এখন কংগ্রেস শিবিরে। আর শাসক দল এআইএডিএমকে বিজেপি-র সঙ্গে। কিন্তু একাধিক জনমত সমীক্ষার ইঙ্গিত, এআইএডিএমকে পরবর্তী নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের মুখ দেখবে তামিলনাড়ুতে। বড়সড় জয় পাবে ডিএমকে। এই আভাস অবশ্যই কংগ্রেসের পক্ষে স্বস্তিদায়ক এবং বিজেপির পক্ষে দুশ্চিন্তার। সমীক্ষার ইঙ্গিত এবং দেওয়ালের লিখন পড়ে বিজেপি তাই জোটসঙ্গী বদলাতে চায় এখন। ২০১৯-র নির্বাচনে ডিএমকে-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তামিলনাড়ুতে বিজেপি লড়তে চায়। বিশ্লেষকরা তেমনই বলছেন।
আরও পড়ুন: বর্ষপূর্তিতে মোদী কই!
সোমবার করুণানিধির বাড়ি গিয়ে নরেন্দ্র মোদী যে ডিএমকে-কে হাত মেলানোর বার্তা দিয়ে এসেছেন, সে বিষয়ে রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেই নিশ্চিত। কিন্তু ডিএমকে নাকি মাথা নত করেনি এখনও। করুণানিধি এবং স্ট্যালিন খুব ভালই জানেন, পরবর্তী নির্বাচনে দলের সম্ভাবনা কতটা উজ্জ্বল তামিলনাড়ুতে। বিজেপির সঙ্গে হাত না মেলালেও ডিএমকে-র খুব ক্ষতি হবে না, সে কথা স্ট্যালিনরা ভালই জানেন। এ-ও জানেন যে, তাগিদটা বিজেপি-রই বেশি। তাই রাজনৈতিক দর কষাকষিতে বরাবরের ওস্তাদ হিসেবে পরিচিত করুণানিধি সহজে চোখের পলক ফেলবেন না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। করুণানিধির মেয়ে কানিমোঝি-সহ ডিএমকে-র একাধিক নেতার বিরুদ্ধে যে সব মামলার তদন্ত সিবিআই করছে, সে সব থেকে রেহাই পাওয়া নিশ্চিত না করে করুণানিধি কোনও ভাবেই বিজেপির দিকে ঝুঁকবেন না বলে রাজনৈতিক শিবিরের মত। তাই অদূর ভবিষ্যতে ২জি কেলেঙ্কারি থেকে কানিমোঝিরা রেহাই পেয়ে গেলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, গুঞ্জন চেন্নাই থেকে দিল্লি পর্যন্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy