নরেন্দ্র মোদী
নীতীশ কুমার, জয়ললিতা, অখিলেশ যাদবদের নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার হুঙ্কার দিচ্ছেন, সেই সময় পাল্টা রণকৌশল তৈরি করতে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে একজোট করলেন নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চালালেন যাতে তাঁরা কেন্দ্রের প্রকল্পগুলির দ্রুত ও ঠিকঠাক রূপায়ণে তৎপর হন।
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে আজ দিনভর বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। বৈঠকের লক্ষ্য ছিল মূলত চারটি। l অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরা যখন বঞ্চনার অভিযোগ তুলছেন, সেই সময় বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি যেন ‘গরিব-মুখী’ কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি রূপায়ণে তৎপর থাকে। যাতে অ-বিজেপি দলগুলির অভিযোগ নস্যাৎ করা যায়। l অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো, চাইলে বর্তমান কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের গণ্ডিতেই মানুষের জন্য ভাল কাজ করা যায়। l অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সুশাসন নিশ্চিত করা। যাতে আগামী লোকসভা নির্বাচনে ও তার আগের সব ভোটে বিজেপি শাসিত রাজ্যের সঙ্গে অন্যদের ফারাক তুলে ধরে ভোট টানা যায়। l বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিই যে গরিব, কৃষক, দলিত ও পিছিয়ে পড়া মানুষের আসল দরদি, সেটিও তুলে ধরা।
প্রশ্ন হল, মোদী সরকারের দু’বছর পার হওয়ার পর দলের সব মুখ্যমন্ত্রীকে এ রকম একজোট করার প্রয়োজন হল কেন? বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, অ-বিজেপি শাসিত অনেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই লাগাতার কেন্দ্রের বঞ্চনা ও রাজ্যের অধিকার খর্ব করার অভিযোগ করে আসছেন। বিশেষ করে মমতা তো সম্প্রতি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রীতিমতো বিদ্রোহ করেছেন।
মমতার বক্তব্য, কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি রূপায়ণ করা কেন্দ্র বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। কিন্তু রাজ্যকেই যদি তার ৪০% অর্থ ঢালতে হয়, তবে ওই প্রকল্পগুলি কেন কেন্দ্রের নামে থাকবে? এই বিদ্রোহে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ, উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ, তামিলনাড়ুর জয়ললিতাকেও সঙ্গে নিতে চাইছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
শুধু অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরাই নন, নীতি আয়োগের বৈঠকে একই উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীরাও। আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠকে বিজেপির শরিক দল অকালির মুখ্যমন্ত্রীও খোলাখুলি বলেন, কেন্দ্রের সরকার রাজ্যগুলিকে ‘ভিখিরি’ বানিয়ে দিচ্ছে। প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাজ্যের অধিকার খর্ব করা উচিত নয়। কিন্তু কেন্দ্রের বক্তব্য, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে রাজস্বে রাজ্যের ভাগ বাড়িয়ে ৪২% করা হয়েছে। রাজ্যগুলিকে স্বাধীনতাও দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো কোনও রাজ্য যদি নিজেদের রাজস্ব না বাড়িয়ে খয়রাতিতে টাকা ঢালে, সেটা তবে কার দোষ? এই পরিস্থিতিতে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি যাতে বর্তমান প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই ভাল কাজ করে দেখাতে পারেন, সে জন্যই প্রধানমন্ত্রী আজ ‘মিশন মোড’-এ কাজ করতে বলেছেন। ‘রোটি-কাপড়া-মকান’-এর পাশাপাশি শিক্ষা, চিকিৎসা, আবাসনের মতো বিষয়ে গরিবের স্বার্থ পূরণের নির্দেশ দিয়েছেন। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের নেতৃত্বে একটি কমিটিও গড়ে দিয়েছেন। অন্য রাজ্যগুলিকেও এই মডেল অনুসরণ করতে বলতে পারবে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy