মৃত নরেন্দ্র তোমর। ছবি: পিটিআই।
‘‘জন্মিলে মরিতে হবে...’’ ভায়াপম কেলেঙ্কারিতে একের পর এক সাক্ষী ও অভিযুক্তের মৃত্যু প্রসঙ্গে সোমবার এ কথাই শোনা গেল রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গলায়। ২০০৯ সালে মধ্যপ্রদেশে সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। একে ভায়াপম কেলেঙ্কারিও বলা হয়। এর পর বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) তাদের কাজে যত এগিয়েছে, রাজ্যপাল থেকে সরকারি আমলা— একের পর এক নাম জড়িয়েছে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের। শুধু তা-ই নয়, অভিযুক্ত পক্ষ হোক না সাক্ষী, বছর বছর দীর্ঘ হয়েছে রহস্যজনক মৃত্যুর তালিকাও।
রবিবারই এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত নরেন্দ্র তোমরের মৃত্যু হয়েছে ইনদওর জেলে। সরকারি হিসেব বলছে, তদন্ত শুরুর পর থেকে সাক্ষী ও অভিযুক্ত পক্ষের মোট ২৫ জনের মৃত্যু হল এই ক’বছরে। তোমরের রহস্যজনক মৃত্যুর পর তাই প্রশ্ন উঠছে, এ কি নিছকই সমাপতন? নাকি এর পিছনে রয়েছে আরও বড় কোনও দুর্নীতি?
রাজ্যের বিরোধী দল কংগ্রেসের অভিযোগ, তদন্তের নামে আসলে প্রহসন হচ্ছে। তাদের হিসেব মতো, এত দিনে শুধু অভিযুক্ত পক্ষেরই ৪১ জন মারা গিয়েছেন নানা ভাবে। আর এ সব জেনেও চুপ করে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান, অভিযোগ কংগ্রেস নেতৃত্বের।
তবে বিরোধীদের এই আক্রমণ গায়ে মাখতে নারাজ শাসক দল বিজেপি। লাগাতার মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবুলাল গৌড় এ দিন মন্তব্য করেন, ‘‘মৃত্যু তো প্রকৃতির নিয়ম। জন্মালে এক দিন না এক দিন তো মরতেই হয়।’’ হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত সিটের তদন্ত দিব্যি এগোচ্ছে বলে দাবি করে সিবিআই তদন্তের আর্জি উড়িয়ে দিয়েছেন গৌড়।
ভায়াপম দুর্নীতি নিয়ে দেশ জুড়ে সমালোচনার মুখে পড়লেও শিবরাজ সিংহ চৌহান সরকারের পাশেই দাঁড়িয়েছে কেন্দ্র। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর বলেন, বিশেষ তদন্তকারী দল নিয়ে কংগ্রেস যতই অসন্তোষ দেখাক, তারা নিরপেক্ষ ভাবেই এগোচ্ছে। বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তবে লাগাতার মৃত্যুমিছিল একেবারেই স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে পারছেন না প্রশান্ত পাণ্ডে। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতি সকলের সামনে ফাঁস করে দিয়েছিলেন এই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞই। তাঁর মতে, ‘‘২৫ জন সাক্ষী ও অভিযুক্ত যে ভাবে পর পর মারা গেলেন, তাদের মধ্যে কোনও সম্পর্ক বলে নেই মেনে নিতে পারছি না।’’ এতে রাজ্য সরকারের একাধিক কর্তার নাম জড়ানোয় তারা নানা ভাবে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন প্রশান্ত।
মধ্যপ্রদেশ সরকার গোটা বিষয়টি থেকে নানা ভাবে গা বাঁচানোর চেষ্টা করলেও তাদের অস্বস্তি সব চেয়ে বেড়েছিল রাজ্যপালের নাম প্রকাশ্যে আসার পর। রাজ্যপাল রামনরেশ যাদব টাকার বদলে চাকরিপ্রার্থীদের নাম সুপারিশ করেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন কিছু পরীক্ষার্থী। সে সময় কেন্দ্র তাঁকে পদ ছাড়তে নির্দেশ পাঠালে সোজা আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। পদে থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা যাবে না বলে নির্দেশ দেয় কোর্ট। কিন্তু তাঁর স্বস্তির মধ্যেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে ছেলে শৈলেশের বিরুদ্ধে। তদন্তের মাঝপথেই এ বছরের ২৫ মার্চ রাজ্যপালের বাসভবন থেকে উদ্ধার হয় শৈলেশের মৃতদেহ। তদন্তকারীদের দাবি, সাক্ষী ও অভিযুক্তদের মধ্যে যাঁরা মারা গিয়েছেন সেই তালিকায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম এই শৈলেশ যাদব। ভায়াপম কেলেঙ্কারির তদন্তের গতিপ্রকৃতি, দীর্ঘ মৃত্যুমিছিল— এ সব নিয়ে একের পর এক বিতর্ক দানা বাঁধলেও মুখ খুলতে নারাজ তদন্তকারীরা। সিটের প্রধান চন্দ্রেশ ভূষণ আজ সাফ জানিয়েছেন, এ নিয়ে কোনও কথাই বলবেন না তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy