রঙের বাজারে মন্দা যায়নি। রাজপথে মোটরসাইকেলের দাপাদাপিও ছিল একই রকম। তবু দু’দিন ধরে শিলচর শহরে সকাল থেকে একটা নেই-নেই ভাব। কোথাও বসন্ত উৎসবের শোভাযাত্রা দেখা যায়নি। শোনা যায়নি সেই গান— ‘ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল’।
এরই মধ্যে ফের মৃত্যু হানা দিল শিলচর সেন্ট্রাল রোডের ন্যায়পঞ্চানন বাড়িতে! সপ্তাহখানেক আগে এ বাড়ির ছেলে কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের পথ দুর্ঘটনায় জীবনাবসান হয়। আজ সকালে সেই বাড়িতেই প্রয়াত হলেন তাঁরই পিসি, মৃণালিনী ভট্টাচার্য। শিলচরে তিনি মঙ্গলা নামেই পরিচিত। তিন বছর ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন। বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। প্রাথমিক স্কুল, শিশুতীর্থের তিনিই ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা। শিলচর সঙ্গীত বিদ্যালয়ও তাঁরই হাতে গড়া। অবিবাহিতা মৃণালিনীদেবী সরকারি দফতরে চাকরি করতেন। বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তথা শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পাল, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের সৌরীন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য সেন্ট্রাল রোডের বাড়িতে গিয়ে মৃণালিনীদেবীকে শ্রদ্ধা জানান।
প্রতি বছর দোল-হোলির এই সময়ে নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মেতে ওঠে শিলচর শহর। কালিকাপ্রসাদের প্রয়াণে ব্যতিক্রম এ বার। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ প্রতি বছর দোলের সন্ধ্যায় আয়োজন করত ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়’। ৭ মার্চ প্রসাদের মৃত্যুর খবর পেয়েই সাত দিনের শোক পালনের কথা জানিয়ে দেয় তারা। স্থগিত হয়ে যায় দোলের সান্ধ্য অনুষ্ঠান। নৃত্যায়ন ছোট-বড় সমস্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে সকালে শোভাযাত্রা বের করত। একই কারণে এই বছর তাও বাতিল করা হয়েছে। নৃত্যায়নের অধ্যক্ষ চন্দন মজুমদার বলেন, ‘‘প্রসাদ-দার এমন ঘটনার পর শোভাযাত্রা করতে মন চাইছে না। তাই বাতিলই করা হল।’’ তিনি জানান, নাচের তালে তালে আবির ছড়ানোর এই অনুষ্ঠান পরে আর ভাল লাগবে না। তাই তাঁদের পরিকল্পনায় রয়েছে, আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষ্যে দু’দিনের কর্মসূচির প্রথম দিনের অনুষ্ঠান কালিকাপ্রসাদের নামে উৎসর্গ করা হবে। প্রসাদ-প্রয়াণে বসন্তোৎসব পিছিয়ে দিয়েছে মালুগ্রামের সর্বোদয় বিদ্যালয় ট্রাস্টও। প্রতি বছর দোলের সকালে স্কুলের কচি-কাঁচাদের নিয়ে মালুগ্রাম-ঘনিয়ালা এলাকা পরিক্রমা করা হয়। এ বার তা হয়নি। ট্রাস্টের সদস্য শান্তনু দাস জানিয়েছেন, ১৯ মার্চ হবে সেই বসন্ত উৎসব।
প্রসাদের মৃত্যু বহু সংস্কৃতিকর্মীর ব্যক্তিগত আনন্দ-উল্লাসও কেড়ে নিয়েছে। সুব্রত রায়, ঋষিকেশ চক্রবর্তী, রাজীব করদের মতো অনেকের পারিবারিক পরিমণ্ডলেও আজ রং খেলা হয়নি। রাজীববাবুর কথায়, ‘‘আমরা এখন ব্যস্ত ১৯ মার্চের প্রসাদ স্মরণসভার আয়োজনে। সে দিন তাঁকে নিয়েই আলোচনা হবে, হবে গান-বাজনা।’’ তাঁর মৃত্যুর ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য একটি প্রস্তাবও সে দিন গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy