Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National News

দু’পক্ষকে আপ্রাণ মেলানোর চেষ্টা মুলায়মের, শেষরক্ষা হল কি?

মচকানো সম্পর্ক ভাঙতেই চলেছিল। কিন্তু, কোনও রকমে তা সামাল দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করলেন সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো মুলায়ম সিংহ যাদব। কিন্তু, এত কিছুর পরেও সম্পর্কের ফাটল একচুলও মেরামত হল কি? প্রশ্নটা উঠছেই।

পিটিআইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।

পিটিআইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৬ ১৬:২৩
Share: Save:

মচকানো সম্পর্ক ভাঙতেই চলেছিল। কিন্তু, কোনও রকমে তা সামাল দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করলেন সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো মুলায়ম সিংহ যাদব। কিন্তু, এত কিছুর পরেও সম্পর্কের ফাটল একচুলও মেরামত হল কি? প্রশ্নটা উঠছেই।

ছেলে অখিলেশকে প্রকাশ্যে ভর্ত্সনা করলেন। পাশে দাঁড়ালেন ভাই শিবপালের। এমনকী, অখিলেশ শিবিরের তোলা ‘অমর সিংহ হঠাও’ দাবিকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে জানিয়ে দিলেন, বিপদের দিনে পাশে থাকা বন্ধুকে তিনি ছাড়তে পারবেন না। শেষে অখিলেশকে বললেন কাকা শিবপালের গলা জড়িয়ে ধরতে। যুযুধান দু’জনকে মতপার্থক্য মিটিয়েও নিতে বলেন মুলায়ম। দলের দুর্বল দিকগুলি মেরামত করার বদলে এ ভাবে নিজেদের মধ্যে পারিবারিক লড়াই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া দু’পক্ষকেই সংযত থাকার নির্দেশ দেন।

বেশ কিছু দিন ধরেই বাবা-ছেলের সম্পর্ক ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে। তার মধ্যেই একের পর এক ঘটনা ঘটে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে। শেষে এমন একটা পর্যায়ে তা পৌঁছয়, অনেকেই মনে করেছিলেন দলের ভাঙন যেন অনিবার্য। যাদব বংশের সেই মুষলপর্বে সপা বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসতে একপ্রকার বাধ্য হন মুলায়ম। সোমবার সেই বৈঠক ঘিরে চূড়ান্ত নাটকীয় মুহূর্তের সাক্ষী থাকল লখনউ।

এ দিন সকালে দলের সদর দফতরে বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মুলায়ম। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব-সহ অন্য বিধায়কেরা হাজির হন। ছিলেন মুলায়মের ভাই শিবপাল যাদবও। বৈঠক শুরু হওয়ার আগে থেকেই দফতরের সামনে দলীয় সমর্থকদের ভিড় বাড়তে থাকে। মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। একটা সময় অখিলেশের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। শিবপাল এবং অমর সিংহের সমর্থকেরাও হাজির ছিলেন। তবে, সংখ্যায় অনেক কম। দফতরের ভিতরে বৈঠক শুরু হওয়ার আগে থেকেই বাইরের উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়।

আরও পড়ুন

অমর সিংহ আমার ভাই, কী যোগ্যতা তোমার? ছেলেকে ধমক মুলায়মের

বৈঠকের শুরুতেই অখিলেশ তাঁর বক্তব্য জানান। এত দিন ধরে জল্পনা চলছিল, তিনি নতুন দল গড়ছেন। কিন্তু, এ দিন শুরুতেই তিনি সেই সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকেই বলছেন একটা নতুন গঠন হচ্ছে। কে করছেন সেই দল? আমি নই।’’ এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। শিবপাল, অমর সিংহদের নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘কেউ কেউ দল ভাঙার চেষ্টা করছেন। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’’ মুলায়ম এবং দলের বিরুদ্ধাচরণ করা সেই সব ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে তিনি যে ব্যবস্থা নিয়েছেন সে কথা জানান। এমন পদক্ষেপ তিনি ভবিষ্যতেও নেবেন। এর পরেই আবেগে গলা বুজে আসে অখিলেশের। মুলায়মের দিকে তাকিয়ে জানান, নেতাজি চাইলে মুখ্যমন্ত্রিত্ব তো বটেই দল থেকেও পদত্যাগ করতে রাজি তিনি। বলেন, ‘‘রাজনৈতিক জীবনে যা পেয়েছি, সব আপনার জন্যই। দলে আমার কিছুই নেই। সবই আপনার। আপনি চাইলে দল থেকে সরে দাঁড়াতে পারি।’’

কিন্তু অখিলেশের পরেই বলতে উঠেন তাঁর সমস্ত বক্তব্য খণ্ডন করতে শুরু করেন শিবপাল। প্রকাশ্যেই বলেন, ‘‘গঙ্গাজলের দিব্যি দিয়ে বলছি, অখিলেশ আমাকে বলেছিলেন নির্বাচনের আগেই তিনি নতুন দল গড়ে অন্য কোনও দলের সঙ্গে জোট তৈরি করবেন।’’ এর পর ভাইপোর বিরুদ্ধে একের পর এক ধারাল অস্ত্র শানাতে শুরু করেন শিবপাল। দলকে যারা দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, যাঁরা দলের বিরুদ্ধে কাজ করছেন, তাঁদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নেতাজির ঘাম রক্ত দিয়ে আমরা ফের সরকার গঠন করছি।’’ তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে কেন সরানো হল সেই প্রশ্নও তোলেন শিবপাল। দলে অমর সিংহকে মান্যতা দিয়ে বলেন, ‘‘ওঁর পায়ের ধুলের যোগ্যও নই আমরা।’’ শেষে, মুলায়মকে অনুরোধ করেন তাঁর নেতৃত্বেই রাজ্যে এ বার নির্বাচন হোক। যা শুনে রাজনীতির কারবারিদের ধারণা, মুলায়মকেই ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার দাবি তুলেছেন শিবপাল।

এর পরেই বলতে শুরু করেন মুলায়ম সিংহ। শুরুতেই তিনি বলেন, ‘‘খুব খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে, আমার পরিবারেই ভাঙন!’’ তার পরেই জানিয়ে দেন ভাই শিবপাল এবং অমর সিংহের নামে তিনি কিছু শুনবেন না। কারণ শিবপাল দলের জন্য যা করেছেন, তা তিনি কখনও ভুলতে পারবেন না। পাশাপাশি অমর সিংহের সঙ্গেও সম্পর্ক ছাড়তে না পারার কথা জানিয়ে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘অমর সিংহ আমাকে জেলে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। আমার ভাই হন তিনি।’’ আক্ষেপ করে জানান, অনেক কষ্ট করে এই দল গড়া হয়েছে। দুর্বলতার সঙ্গে লড়াই করার বদলে নিজেদের মধ্যেই লড়াই কেন হচ্ছে, সেই প্রশ্নও তোলেন। বলেন, কিছু মন্ত্রী শুধু চাটুকারিতাই করে যাচ্ছেন। বড় ভাবনা না থাকলে মন্ত্রী হওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘‘আমি এই বৈঠক ডেকেছি, যাতে আমরা ২০১৭-র এই নির্বাচন জিততে পারি।’’

অখিলেশের ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুলায়ম। অভিযোগ তোলেন, মদ্যপ-গুন্ডাদের দলে জায়গা দেওয়া হয়েছে। অখিলেশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তিনি বলেন, ‘‘একটা পদ পেতেই তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। রামগোপালের দালালি চলবে না। সমাজবাদী পার্টি ভাঙতে পারে না।’’ এর পরেই অখিলেশকে তিনি শিবপালকে জড়িয়ে ধরার নির্দেশ দেন। নিজেদের মতপার্থক্য মেটানোর কথা বলে বলেন, ‘‘উনি তোমার কাকা।’’

সামনাসামনি এমনটা হলেও রাজনৈতিক শিবিরের একটা অংশের ধারণা, ফাটল যতটা ছিল ততটাই রয়ে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Akhilesh yadav Mulayam Singh Yadav
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE