Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মুলায়মের সুখী পরিবারে এখন অখিলেশকে চোখের মণি বলছেন সত্‌মা!

যদুবংশের মুষল পর্ব এখন ইতিহাস। আপাতত ঐক্যের ছবি মুলায়ম পরিবারে।যার ক্ষমতালিপ্সার কারণে সম্প্রতি সমাজবাদী পার্টিতে তীব্র পরিবারিক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল বলে মনে করেন অখিলেশ যাদবের সমর্থকেরা, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সেই সৎমা সাধনা আজ জানিয়ে দিলেন, অখিলেশ তাঁর চোখের মণি।

অখিলেশ ও সাধনা

অখিলেশ ও সাধনা

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:১৯
Share: Save:

যদুবংশের মুষল পর্ব এখন ইতিহাস। আপাতত ঐক্যের ছবি মুলায়ম পরিবারে।

যার ক্ষমতালিপ্সার কারণে সম্প্রতি সমাজবাদী পার্টিতে তীব্র পরিবারিক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল বলে মনে করেন অখিলেশ যাদবের সমর্থকেরা, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সেই সৎমা সাধনা আজ জানিয়ে দিলেন, অখিলেশ তাঁর চোখের মণি। সতীনের ছেলে অখিলেশের সঙ্গে নিজের ছেলে প্রতীককে তিনি আলাদা করে দেখেন না। দু’জনেই তাঁর কাছে সমান। সাধনার কথায়, ‘‘অখিলেশকে যখন কেউ আমার সৎ ছেলে বলে, তখন মা হিসেবে খুব কষ্ট হয়। আসলে অখিলেশ ও প্রতীক— দু’ছেলে আমার দু’চোখের মণি। সব ঘরেই সদস্যদের মধ্যে লড়াই হয়। তার পর আবার ঠিকও হয়ে যায়। আমার সঙ্গে বড় ছেলের কোনও সমস্যা নেই।’’

আজ ছিল উত্তরপ্রদেশে তৃতীয় দফা নির্বাচন। পৈত্রিক ভিটে সাইফাই-তে ভোট দিতে গিয়েছিল গোটা মুলায়ম পরিবার। মুলায়ম ও সাধানা তো ছিলেনই, ছিলেন অখিলেশ-প্রতীক এবং তাঁদের স্ত্রী-রা। ভোট দিতে গিয়ে পারিবারিক এই ‘গেট-টুগেদার’-এ শুধু সৎমা নন, বাবা মুলায়ম, সৎ ভাই প্রতীক এবং তাঁর স্ত্রী অর্পণা— সকলেই আজ অখিলেশের প্রশংসায় দফায় দফায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন। তবে সাধনার মুখে অখিলেশের প্রশংসা শুনেই সবচেয়ে বেশি চমকে গিয়েছেন অখিলেশ সমর্থকেরা। তবে তাঁরা এ-ও মনে করছেন, আজ না হয় কাল এমন হওয়ারই ছিল। কারণ পার্টির সর্বময় কর্তৃত্ব অখিলেশের হাতে চলে যাওয়ার পর থেকেই বিরোধী গোষ্ঠীর মূল মাথা কাকা শিবপাল কার্যত এক ঘরে হয়ে পড়েছেন। বড় ছেলের নেতৃত্ব মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন মুলায়মও। এই পরিস্থিতিতে অন্তত পুত্রবধূ অপর্ণার রাজনৈতিক জীবনের কথা ভেবেই উচ্চাকাঙ্খী সাধনার সুর নরম করা ছাড়া কোনও রাস্তা নেই।

ভাঙা পরিবার জুড়তে অখিলেশের ভূমিকাও ছোট করে দেখছেন না মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থকেরা। হাতে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব আসার পরেই পারিবারিক দ্বন্দ্ব মেটাতে ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হন অখিলেশ। দলের রাশ হাতে পাওয়া সত্ত্বেও বাবাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মেনে বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধি ভ্রাতৃবধূ অর্পণার হাতে লখনউ ক্যান্টনমেন্ট আসনের টিকিট তুলে দিয়েছেন। শুধু এটুকুই নয়, অপর্ণা যাতে ওই আসনে রীতা বহুগুণা জোশীর মতো প্রভাবশালী নেত্রীকে হারাতে পারেন, সে জন্য স্ত্রী ডিম্পলকে সেখানে প্রচারে পাঠান। নিজেও পরে সেখানে গিয়ে একাধিক বার প্রচার করেছেন। ভোটারদের কাছে অখিলেশ ব্যক্তিগত ভাবে আবেদন করে বলেন, ওই আসনে জেতাটা তাঁর ও মুলায়মের কাছে পারিবারিক সম্মানের ব্যাপার। সব মিলিয়ে বরফ গলছিল গত ক’দিন ধরেই। আর আজ সাধনা প্রকাশ্যে অখিলেশের পিছনে দাঁড়ানোয় সপা’র অন্দরে জমা পারিবারিক অসূয়ার মেঘ আপাতত অনেকটাই কেটে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:

শ্বশুর-শাশুড়ির দিকেও সেবার হাত, পরিবারের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প

পারিবারিক এই টানাপোড়েনে নিয়মিত ভাবে ডিগবাজি খাওয়া ও বহু বার অখিলেশের সমালোচনায় সরব হওয়া মুলায়মও আজ উত্তরপ্রদেশের সরকারের কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ভোট দিয়ে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অখিলেশের নেতৃত্বেই ফের সরকার গঠন হবে। আমি সপা’র হয়ে প্রচার চালাব।’’ বাবার সঙ্গে তাঁর বিরোধের জল্পনা উড়িয়ে অখিলেশ বলেন, ‘‘মুলায়ম সিংহ যেখানে যাচ্ছেন, সেখানকার মানুষের কাছে সপা-কে ভোট দেওয়ারই অনুরোধ করছেন। আমার বিশ্বাস, সপা ও কংগ্রেস জোট সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন জিতবে।’’

বলতে হয় আরও একজনের কথা। গোটা পারিবারিক দ্বন্দ্বের সময়ে তাঁকে কেউ দেখেনি। এমনকী স্ত্রী অপর্ণা প্রার্থী হলেও তাঁর হয়ে প্রচারে সে ভাবে দেখা যায়নি মুলায়মের ছোট ছেলে প্রতীককে। কিন্তু আজ সাইফাইয়ের পৈত্রিক ভিটেয় ভোট দিতে এসে স্ত্রী-র জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী প্রতীক বলেন, ‘‘বিধায়ক না হলেও গত এক বছর ধরে ওই কেন্দ্রের জন্য কাজ করছেন আমার স্ত্রী। তা ছাড়া দাদা অখিলেশ ও বৌদি ডিম্পলও ওই আসনে জেতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।’’ পারিবারিক সুখী ছবি তুলে ধরার পাশাপাশি অখিলেশ প্রশাসন যে গত পাঁচ বছরে ভাল কাজ করেছে, তা-ও জানাতে ভোলেননি সাধনা যাদবের আরও এক চোখের মণি। প্রতীকের কথায়, ‘‘আমি আজ গাড়ি চালিয়ে গ্রামে আসার জন্য নতুন হওয়া এক্সপ্রেসওয়েকে বেছে নিয়েছিলাম। এক কথায় দুর্দান্ত রাস্তা। আসলে উত্তরপ্রদেশে ‘কাম বোলতা হ্যায়’। কাজ কথা বলে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE