Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাদামাঠা জীবন কই? অসন্তুষ্ট মোদী

গত বছরের মে মাস। নরেন্দ্র মোদী তখন ক্ষমতায় এসেছেন সদ্য। মন্ত্রিসভার একটি বৈঠকে নতুন প্রধানমন্ত্রী তাঁর সতীর্থদের কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁর সরকারে কোনও ‘ভিআইপি-তন্ত্র’ চলবে না। মন্ত্রীদের আচার-আচরণ হবে সাদামাটা, মাটির কাছাকাছি। প্রধামন্ত্রীর দফতর সূত্রে তখন বলা হয়েছিল, গোটা দেশেই সরকারি উচ্চপদে আসীন নেতাদের মধ্যে এই সহজ জীবনযাত্রার সংস্কৃতি গড়ে তোলাটাই এখন লক্ষ্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৪
Share: Save:

গত বছরের মে মাস। নরেন্দ্র মোদী তখন ক্ষমতায় এসেছেন সদ্য। মন্ত্রিসভার একটি বৈঠকে নতুন প্রধানমন্ত্রী তাঁর সতীর্থদের কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁর সরকারে কোনও ‘ভিআইপি-তন্ত্র’ চলবে না। মন্ত্রীদের আচার-আচরণ হবে সাদামাটা, মাটির কাছাকাছি। প্রধামন্ত্রীর দফতর সূত্রে তখন বলা হয়েছিল, গোটা দেশেই সরকারি উচ্চপদে আসীন নেতাদের মধ্যে এই সহজ জীবনযাত্রার সংস্কৃতি গড়ে তোলাটাই এখন লক্ষ্য।

সম্প্রতি তাঁর দলের মন্ত্রীদের ঘিরে একাধিক ঘটনায় মোদীর সেই প্রয়াসই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এয়ার ইন্ডিয়ার আমেরিকাগামী বিমান ছাড়তে দেরি করানোর অভিযোগ আগেই উঠেছে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের বিরুদ্ধে। এর পর প্রকাশ্যে এসেছে তার চেয়েও পুরনো একটি ঘটনা, যেখানে অভিযোগের তির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর দিকে। ফডণবীস অবশ্য আমেরিকা যাওয়া ইস্তক টুইট করে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে চলেছেন। এমনকী লিখেছেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে। ফিরে এসে মানহানির মামলা করব।’ কার বিরুদ্ধে, তা স্পষ্ট করেননি তরুণ প্রজন্মের এই বিজেপি নেতা। সেই তরুণ প্রজন্মেরই প্রতিনিধি রিজিজু। গত ২৪ জুন লেহ বিমানবন্দর থেকে দিল্লিগামী বিমানে রিজিজু ও জম্মু-কাশ্মীরের উপমুখ্যমন্ত্রী নির্মল সিংহকে জায়গা করে দিতে তিন জন যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিমানটি ছাড়তে অনেক দেরিও হয়।

এই দুই ঘটনাতেই অত্যন্ত ক্ষুব্ধ মোদী। বস্তুত, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশেই গত কাল গোটা বিষয়টি নিয়ে রিজিজু ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। তবে নির্মল সিংহ এখনও ঘটনার দায় এয়ার ইন্ডিয়ার উপরেই চাপাচ্ছেন। রিরিজু-ও আজ আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেছেন, ‘‘আমার জন্য কাউকে বিমান থেকে নেমে যেতে হয়নি। গোটা খবরটা ভুয়ো।’’ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দাবি, তাঁর জন্য বিমান তো দেরি হয়ইনি, উল্টে নির্ধারিত সময়ের আগেই বিমান ছাড়ার নোটিস এসে গিয়েছিল। কিন্তু লেহ বিমানবন্দর যারা রক্ষণাবেক্ষণ করে, সেই বিমানবাহিনী-সূত্রে খবর, তাদের রিপোর্টে ‘এক জন ভিআইপি-কে তোলার জন্যই বিমান ছাড়তে দেরি হয়’ বলে লেখা হয়েছে। সত্যিটা যা-ই হোক, এক বার ক্ষমা চেয়েও রিজিজু-র এ ভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনে মুখ খোলাটা অনভিপ্রত বলেই মনে করছেন দলীয় শীর্ষ নেতৃত্ব।

এ তো গেল বিজেপি নেতাদের কথা। মোদী চেয়েছিলেন, দল নির্বিশেষে গোটা দেশেই শীর্ষপদে আসীন রাজনীতিবিদরা ভিআইপি-মানসিকতা বর্জন করুন। কিন্তু কয়েক জন ব্যতিক্রম বাদ দিলে সে গুড়েও বালি। হাতে গরম উদাহরণ হিসেবে উঠে আসছে নবীনতম রাজ্য তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের একটি বাসের কথা। বুলেটপ্রুফ এই মার্সিজিড বেন্‌জ বাসটির দাম পাঁচ কোটি টাকা! সেই বাসের ভেতরটা নাকি পাঁচতারা হোটেলের ঘরের মতো। কী নেই তাতে! হায়দরাবাদে আজ সেই বাস পুজো করা হয়েছে। জনতার টাকায় পাঁচ কোটির গাড়ি চড়ার এমন নজির বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য পরিচিত জয়ললিতা বা মায়াবতীরও নেই। তবে মোদীর পক্ষে স্বস্তির কথা, তাঁর ঘোষিত বিরোধী দুই মুখ্যমন্ত্রী অনাড়ম্বর জীবনযাপনের জন্যই জনপ্রিয়। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের বিরুদ্ধে তা-ও বিলাসবহুল জীবনযাপনের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে কদাপি নয়।

বিজেপির মধ্যেও অবশ্য রবিশঙ্কর প্রসাদ, মনোহর পর্রীকরের মতো অনেক মন্ত্রী রয়েছেন, যাঁরা নিজেদের গাড়িতে লালবাতি পর্যন্ত ব্যবহার করেন না। নিজেরা হাতে ব্যাগ নিয়ে ঘোরেন।

এই দৃষ্টান্তই বাকিরা অনুসরণ করুন, চাইছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রিয়ঙ্কার সম্পত্তি নিয়ে তথ্য

হিমাচল প্রদেশে প্রিয়ঙ্কা বঢরার কেনা জমি নিয়ে সব তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দিল রাজ্য তথ্য কমিশন। সেই সঙ্গে এই বিষয়ে ফার্স্ট অ্যাপেলেট অথরিটির (ডেপুটি কমিশনার) সাম্প্রতিক নির্দেশের কড়া সমালোচনা করেছে কমিশন। তথ্যের অধিকার আইনে প্রিয়ঙ্কার হিমাচলের সম্পত্তি নিয়ে তথ্য চেয়েছিলেন তথ্যের অধিকার আন্দোলনের কর্মী দেবাশিস ভট্টাচার্য। এসপিজি নিরাপত্তায় থাকা প্রিয়ঙ্কার হিমাচলের ঠিকানা নিয়ে তথ্য দিলে তাঁর বিপদ হতে পারে, এই যুক্তিতে দেবাশিসবাবুর আর্জি খারিজ করেছিলেন ডেপুটি কমিশনার। তথ্য কমিশনের মতে, এসপিজি নিরাপত্তায় থাকা রাজনীতিকেরা ভোটের সময়ে হলফনামায় সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য দেন। প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত দাবি করেননি, এতে তাঁর বিপদ ঘটতে পারে। তথ্যের অধিকার আইনে কেউ ভিআইপি নন। ডেপুটি কমিশনারের নির্দেশ ভুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE