সুষমা স্বরাজ
তিন বছরে তাঁর এমন প্রশংসা কেউ শোনেনি নরেন্দ্র মোদীর মুখে। এ বারে তা করলেন একেবারে প্রকাশ্য মঞ্চে। তা-ও বিদেশের মাটিতে!
আমেরিকা সফররত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত কাল উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের। ভার্জিনিয়ায় ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সঙ্গে বৈঠকে মোদী বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়া আজ খুবই শক্তিশালী এক মাধ্যম। আমিও এই মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ উদাহরণ স্থাপন করে দেখিয়েছেন কী ভাবে এই মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে মন্ত্রককে আরও শক্তিশালী করা যায়।’’ এখানেই না থেমে মোদী আরও বলেছেন, ‘‘বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে যে কোনও ভারতীয় যদি বিপদে পড়ে সুষমাকে টুইট করেন, তা হলে পনেরো মিনিটের মধ্যেই বিদেশমন্ত্রী তার জবাব দেন। তা সে রাত দু’টোর সময়ে হলেও। একেই বলে সুপ্রশাসন।’’ সুষমা বিদেশ মন্ত্রক তথা সরকারকে মানবিক মুখ দিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন মোদী।
এই ‘সুষমা বন্দনা’ কৌতূহলের ঝড় তুলেছে স্বদেশে। সুষমা এবং মোদী রাজনৈতিক জীবনে একে অন্যের ঘনিষ্ঠ— এমন কোনও অভিযোগ কেউ তুলতে পারেনি কখনও! অথচ সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড়ে সুষমার নামটি আলোচনার মধ্যে এমন ভাবে চলে আসে যে কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত বলেন সুষমা যদি প্রার্থী হন, তাঁরা সমর্থন করবেন। শুধু তাই-ই নয়, বিজেপির অভ্যন্তরেও তলে তলে চেষ্টা চলছিল সুষমাকে প্রার্থী করার। আরএসএস-এর একাংশের সমর্থনও ছিল তাতে। কিন্তু সেই খবর পেয়ে মোদী এবং অমিত প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে দেন বলে দলের একটি সূত্রের খবর। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, সুষমাকে নিজেই বিবৃতি দিয়ে বলতে হয় তিনি এই দৌড়ে নেই।
এমন পরিস্থিতিতে সুষমার প্রশংসা করে মোদী ক্ষতে কিছুটা কিছুটা প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করলেন বলেও মনে করা হচ্ছে। একে সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে দেখছেন বিজেপিরই কিছু নেতা। কূটনীতির লোকজন অবশ্য বলছেন, এই প্রংশসা সঙ্গত কারণেই। এবং কূটনীতির তাগিদে। এর আগে রাষ্ট্রপুঞ্জে গিয়ে পাক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান দৃঢ়তার সঙ্গে তুলে ধরার জন্য সুষমার প্রশংসা করেছিলেন মোদী। সেটাও সীমাবদ্ধ ছিল টুইটারে। যেন নেহাতই দায়িত্ব পালন করার মতো। এ বারে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন এমন সময়ে, যখন ভিসা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাব যথেষ্টই উদ্বেগে রেখেছে আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয় বা ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের। কয়েক ঘণ্টা পরেই ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম বার বৈঠকে বসতে চলেছেন— এমন অবস্থায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত বা আমেরিকায় কাজ করতে আসা ভারতীয়দের সুনির্দিষ্ট কোনও আশ্বাস দেওয়া সম্ভবই ছিল না মোদীর পক্ষে। অথচ একটা ভরসার মুখ অন্তত তুলে ধরার তাগিদ মোদীর ছিলই। সেই সূত্রেই তিনি মনে করিয়ে দেন, তিন বছরে বিদেশে বিপাকে পড়া ৮০ হাজার ভারতীয়কে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়েছে তাঁর সরকার। ভারতীয়রা যেখানেই বিপদে পড়বেন, ভারতের দূতাবাসগুলি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। শুধু স্যুট-টাই পরা হোমরাচোমরাদের সঙ্গে করমর্দনের জন্য নয়, বিদেশ মন্ত্রক এখন যে কোনও সাধারণ ভারতীয়ের পাশে রয়েছে। এবং এই বার্তাটি দিতে গিয়ে সুষমার তৎপরতার প্রশংসা করাটা অনিবার্যই ছিল। মোদী ঠিক সেই কাজটিই করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy