Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

চিনা বাণিজ্যলক্ষ্মীকে টেনেও সীমান্ত-বিবাদ নিয়ে সরব মোদী

সীমান্ত বিবাদ নিয়ে সুর যথেষ্ট চড়া রেখেই আজ বেজিং-এর সঙ্গে এক দীর্ঘমেয়াদি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের যাত্রা শুরু করল নয়াদিল্লি। আজ হায়দরাবাদ ভবনে শীর্ষ বৈঠকের পর চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-কে পাশে বসিয়ে বাণিজ্য সম্পর্কে অগ্রগতির খতিয়ান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি কিছুটা অভূতপূর্ব ভাবেই সীমান্ত প্রসঙ্গে কড়া ভাষায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।

হায়দরাবাদ হাউসে শি চিনফিংয়ের সঙ্গে মোদী। ছবি: পিটিআই।

হায়দরাবাদ হাউসে শি চিনফিংয়ের সঙ্গে মোদী। ছবি: পিটিআই।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৫
Share: Save:

সীমান্ত বিবাদ নিয়ে সুর যথেষ্ট চড়া রেখেই আজ বেজিং-এর সঙ্গে এক দীর্ঘমেয়াদি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের যাত্রা শুরু করল নয়াদিল্লি।

আজ হায়দরাবাদ ভবনে শীর্ষ বৈঠকের পর চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-কে পাশে বসিয়ে বাণিজ্য সম্পর্কে অগ্রগতির খতিয়ান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি কিছুটা অভূতপূর্ব ভাবেই সীমান্ত প্রসঙ্গে কড়া ভাষায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। এবং তা প্রকাশ্যে, চিনা প্রেসিডেন্ট ও তাঁর মন্ত্রিসভার নেতাদের সামনে। এক দিকে পরিকাঠামো, রেল-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের বাজার খুলে বিপুল অঙ্কের (প্রায় এক লক্ষ কুড়ি হাজার কোটি টাকা) চিনা বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন মোদী। অন্য দিকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন, সীমান্তের ঘটনায় ভারত অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। চিনা প্রেসিডেন্টের সামনেই মোদীর বক্তব্য, বহু দিন ধরে ঝুলে রয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার জট ছাড়ানোর বিষয়টি। তার সমাধান না-হলে দু’দেশের সম্পর্কে রাজনৈতিক আস্থা তৈরি হবে না। কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, শত্রুতা এবং নিঃশর্ত বন্ধুত্ব এই দুই চরম অবস্থানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ড্রাগনের চোখে চোখ রেখে আজ বাণিজ্য সম্পর্ককে মজবুত করতে চেয়েছেন মোদী। দেড় ঘণ্টা একান্ত বৈঠক করেছেন শি-র সঙ্গে। সেই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারতের বিশাল ঘাটতির প্রসঙ্গ তুলে চিনা প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে তাঁদের বাজারে ভারতীয় সংস্থাগুলির প্রবেশের বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস আদায়ও করে নিয়েছেন। তবে শুধু বাণিজ্য নয়। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, আজকের এই শীর্ষ বৈঠকের একটি বড় সময় ব্যয় হয়েছে সীমান্তের সাম্প্রতিক অশান্তি নির্মূল করা নিয়ে। মোদীর বক্তব্য, দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের সম্ভাব্য সমস্ত দিকগুলিকে তখনই সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, যখন বকেয়া বিবাদগুলির শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।

দু’দেশের শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে এ দিন মোট ষোলটি চুক্তিপত্রে সই করলেন ভারত এবং চিনের মন্ত্রী-আমলারা। কৈলাস যাত্রার জন্য নতুন যাত্রা পথের ঘোষণা হল। আমদাবাদ-গুয়াংঝাও এবং মুম্বই-বেজিং-এর মধ্যে সমঝোতা মৈত্রী স্বাক্ষরিত হল। হাই স্পিড ট্রেন চালানোর লক্ষ্যে ভারতকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল বেজিং। জাপান যেখানে মুম্বই-আমদাবাদ বুলেট ট্রেন চালানোর লক্ষ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছে, তখন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চিন এগিয়ে এল চেন্নাই-বেঙ্গালুরু-মহীশূর শাখায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে সেমি হাই স্পিড ট্রেন চালানোর ব্যাপারে সাহায্য করতে। ভারতীয় রেল সংক্রান্ত পড়াশুনোর জন্য কেন্দ্র যে বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতেও প্রযুক্তিগত সাহায্য দিতে রাজি হয়েছেন চিনা কর্তৃপক্ষ। চিন ওষুধ-সহ বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রে তাদের বাজারে ভারতের সংস্থাগুলিকে প্রবেশাধিকার দেয় নাএই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু আজ চিনফিং নিজেই বলেছেন, “চিনের বাজারে ভারতীয় ওষুধ এবং জ্বালানি সংস্থাগুলিকে আরও বেশি করে প্রবেশাধিকারের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।”

আজকের দিনটিকে বাণিজ্য ক্ষেত্রে এক ‘নতুন অধ্যায়ের সূচনা’ হিসাবেই বর্ণনা করেছেন মোদী। তাঁর কথায়, “চিনের উদ্যোগে ভারতে দু’টি শিল্প পার্ক গঠন এবং আগামী পাঁচ বছরে দু’হাজার কোটি ডলার চিনা বিনিয়োগের বিষয়টিতে আমি অত্যম্ত আনন্দিত। এর ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। পাঁচ বছরের আর্থিক এবং বাণিজ্যিক উন্নয়ন পরিকল্পনা আমাদের আর্থিক সম্পর্ককে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবে।”

বাণিজ্যে চিনা লক্ষ্মীকে আবাহনের সঙ্গে সঙ্গেই সে দেশের প্রেসিডেন্টকে পাশে বসিয়ে মোদী আজ যে ভাবে সীমান্তের মতো ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় নিয়ে সরব হয়েছেন, তেমনটা সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি। একই মঞ্চে বসে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায়, সীমান্তের সমস্ত ঘটনাবলী আমি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে তুলে ধরেছি। আমরা একমত হয়েছি যে, সীমান্ত এলাকায় শান্তি এবং সুস্থিতিই দু’দেশের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় স্তম্ভ। এই বিষয়টিকে অক্ষরে অক্ষরে মান্য করা উচিত।” এখানেই না থেমে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার প্রসঙ্গটিতেও সরব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “আমি শি কে এই অনুরোধও করেছি যে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নিরূপণ করার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে। সীমান্ত সমস্যার আশু সমাধান করা প্রয়োজন।” অরুণাচলের বাসিন্দাদের চিন বিশেষ ভিসা দিচ্ছে এই অভিযোগ নিয়ে গত সরকারের সময় থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে সাউথ ব্লক। আজকের বৈঠকে মোদী যে এই প্রসঙ্গটি তুলে চাপ দিয়েছেন, তা তিনি নিজেই জানিয়েছেন। শি-র সামনেই মোদী বলেন, “চিনের ভিসা-নীতি এবং আন্তর্দেশীয় নদী সমস্যা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি।”

মোদীর পরে মুখ খোলেন শি। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিতর্কিত বিষয়গুলি এড়িয়ে কিছুটা ভারতীয় নেতৃত্বের সুরে সুর মিলিয়ে বলেছেন, “খুব শীঘ্রই বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা মেটানোর জন্য আমরা কাজ শুরু করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সীমান্ত সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেখানে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখার জন্য ভারতের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে আমরাও আগ্রহী।” সম্প্রতি ডেমচক এবং চুমার এলাকায় চিনা সেনার অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আজকের বড় প্রেক্ষাপটটিকে লঘু করতে চাননি শি। শুধু বলেছেন, “দু’দেশই সীমান্তের কোনও ঘটনার মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট পারদর্শী। তার জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনও ছায়াপাত হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE