কাল চোখে চোখ মেলাননি। আজ আবেগ চোখেমুখে।
কাল ছিল শ্লেষ, কটাক্ষ। আজ প্রশস্তিমালা।
কাল যেন গুণছিলেন বিদায়ের ঘণ্টা। আর আজ এলেন বুক চিতিয়ে।
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বদলে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই রাজ্যসভায়, একই আসনে দাঁড়িয়ে পাল্টে গেল মুখ ও শরীরের ভাষা। কারণ, কাল রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের আসনে ছিলেন হামিদ আনসারি।
আর আজ তাঁর ‘নিজের লোক’ বেঙ্কাইয়া নায়ডু।
গত কাল উপরাষ্ট্রপতি পদে বিদায়ের আগেই হামিদ আনসারি শুনিয়ে গিয়েছিলেন সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার অভাব বোধের কথা। পরে আনসারিকে নিশানা করে মোদী বলেছিলেন, পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে পশ্চিম এশিয়াতেই সীমাবদ্ধ থেকেছেন আনসারি। অবসরের পরেও সংখ্যালঘু কমিশন বা আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়েছেন। ফলে উপরাষ্ট্রপতি পদে সংবিধানের আওতায় তাঁর অনেক ছটফটানি হয়ে থাকবে, অবশ্য অবসরের পরে এ বার মুক্ত হবেন তিনি। মোদী যে আক্রমণ পরোক্ষে করেছেন, সেটিই তাঁর দলের নেতারা এমনকী বেঙ্কাইয়া নায়ডুও করেছেন আরও খোলাখুলি। আর আনসারির জবাব হিসেবে মোদীর বক্তব্যকে নিয়ে প্রচারও শুরু করে দিয়েছিল বিজেপি। বেঙ্কাইয়া যখন সভায় আসেন, বিজেপি সদস্যরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বণিতে তাঁকে স্বাগত জানান।
তবে আজ সকালে বেঙ্কাইয়ার শপথের সঙ্গে সঙ্গেই রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারের মতো পদে চলে এলেন সঙ্ঘের মতাদর্শের লোক। ফলে আজ মোদীও এলেন দাপটের সঙ্গে। গত কাল আনসারিকে বলেছিলেন, তাঁকে ভাল চেনেন না। আজ বেঙ্কাইয়াকে বললেন, ‘‘কত বছরের চেনা।’’ তার পরেই বললেন, এই প্রথম স্বাধীনতার পর জন্ম নেওয়া কেউ উপরাষ্ট্রপতি হলেন। এই প্রথম সংসদ পরিসরে লালিত হয়ে কেউ এই পদে বসলেন। আর এই প্রথম
সব সাংবিধানিক পদে এলেন গ্রাম, কৃষক ও গরিব পরিবারের লোক। বেঙ্কাইয়াকে ‘চাষির ছেলে’ হিসেবে তুলে ধরলেন মোদী।
এ বার কিন্তু মোদীকে চেপে ধরলেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, সব বিষয়ে ‘গরিব’ টেনে আনার কী অর্থ? গুলাম নবি আজাদ বলেন, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী, জওহরলাল নেহরু, সর্দার পটেল, সুভাষচন্দ্র বসুদের মতো ব্যক্তিদের অবদান কি কম? তাঁরা কেউই গরিব পরিবার থেকে আসেননি। তবু দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন।
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মোদীর এই দাপট দেখে বিরোধীরা একযোগে বলে, বেঙ্কাইয়া যেন নিরপেক্ষতা না হারান। এত দিন আনসারি হট্টগোলের মধ্যে কোনও বিল পাশ করানোর অনুমতি দেননি। সেই ধারাই যেন বজায় রাখেন নতুন চেয়ারম্যান। কিন্তু নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বেঙ্কাইয়া প্রথম দিনেই বিরোধীদের স্মরণ করালেন জনমতকে ‘শ্রদ্ধা’ করার কথা। টেনে আনলেন দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ‘অন্ত্যোদয়’ প্রকল্পের প্রসঙ্গ। সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদবকে এত দিন ‘প্রফেসর’
বলে ডাকতেন সকলে, বেঙ্কাইয়া বললেন ‘আচার্য’।
তবে বিরোধীদের প্রশ্ন, লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতে এসেছেন মোদী। তা হলে রাজ্যসভায় কোন ‘জনমত’কে শ্রদ্ধা করার কথা বলছেন নতুন উপরাষ্ট্রপতি? সেখানে তো সরকার সংখ্যালঘু! আজ থেকেই কি অযথা দাপট দেখানো শুরু করলেন মোদী আর তাঁর উপরাষ্ট্রপতি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy