Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

জাল নোটের চাঁইকে পেতে অস্ত্র প্রত্যর্পণ চুক্তি

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৩-র ২৮ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী হাবিলকে যাতে হাতে পাওয়া যায়, এনআইএ সেই পথে এগোচ্ছে। জাল নোটের মামলায় কোনও বাংলাদেশির ক্ষেত্রে ভারতের এমন উদ্যোগ এই প্রথম।

হাবিল শেখ

হাবিল শেখ

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০৩:২২
Share: Save:

গত এপ্রিলে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়েছে কলকাতার এনআইএ আদালতে। বছরের গোড়াতেই ভারত থেকে গোয়েন্দারা গিয়ে তার বাংলাদেশের বাড়িতে দেখে এসেছেন ভারতীয় টাকার জাল নোট থরে থরে সাজিয়ে রাখার পাতালঘর। বাংলাদেশ পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন তার সঙ্গে কথাও বলে এসেছেন এ-পারের গোয়েন্দারা।

ভারতে জাল নোট পাচার চক্রের সেই চাঁই, বাংলাদেশের নাগরিক হাবিল শেখ ওরফে হাবিবুর রহমানকে পেতে এ বার প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু করে দিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৩-র ২৮ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী হাবিলকে যাতে হাতে পাওয়া যায়, এনআইএ সেই পথে এগোচ্ছে। জাল নোটের মামলায় কোনও বাংলাদেশির ক্ষেত্রে ভারতের এমন উদ্যোগ এই প্রথম।

হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিল বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাহাপাড়ার এক জন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (এখানকার গ্রাম পঞ্চায়েতের মতো)। সাহাপাড়ায় তার একতলা বাড়ি, রাজশাহিতে বহুতল। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এ বছরই চোরাচালানের একটি মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে হাবিলকে গ্রেফতার করেছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার পুলিশ। এখন সে জামিনে মুক্ত।

এনআইএ-র কৌঁসুলি শ্যামল ঘোষ বলেন, ‘‘হাবিল শেখের বিরুদ্ধে জাল নোটের একটি মামলায় আমরা চার্জশিট পেশ করেছি। কিন্তু হাবিল সশরীর আদালতে হাজির না-হলে ওর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা যাবে না। সেই জন্য ওকে এ দেশে এনে বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি দাঁড় করানো জরুরি।’’ এনআইএ-র মতে, হাবিলকে হাতে পাওয়ার একমাত্র হাতিয়ার বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি।

এনআইএ-র এক কর্তার বক্তব্য, হাবিলকে কেবল একটি মামলায় চার্জশিট দেওয়া গিয়েছে। তবে জাল নোটের আরও তিন-চারটি মামলার ধৃতেরা চক্রের চাঁই হিসেবে হাবিলের নাম বলেছে। অথচ ওই সব মামলায় তার বিরুদ্ধে যথেষ্ট আদালতগ্রাহ্য প্রমাণ এখনও হাতে আসেনি। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত, অন্য সব মামলাতেও হাবিলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া যাবে। সেই জন্য আমাদের হেফাজতে নিয়ে তাকে টানা জেরা করা জরুরি।’’ ওই অফিসারের বক্তব্য, এখানকার মামলার কোনও অভিযুক্ত যদি অন্য দেশের পুলিশের হেফাজতে থাকে, সে-ক্ষেত্রে সেখানে গিয়ে তাকে ঠিকঠাক জেরা করা যায় না। বড়জোর কিছু কথা বলা যায়। তাই হাবিলকে হাতে পাওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

এনআইএ জেনেছে, গত সাত-আট বছর ধরে হাবিলই মালদহের দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে জাল নোট পাচারের নিয়ন্ত্রক। দৌলতপুর দিয়ে মাসে গড়ে কোটি টাকার জাল নোট পাচার করাই ছিল তার ‘টার্গেট’ বা লক্ষ্যমাত্রা।

শুধু পুরনো মামলার জন্য নয়, হাবিলকে অন্য কারণেও পেতে চায় এনআইএ। গত নভেম্বরে দু’হাজার টাকা ও নতুন পাঁচশো টাকার নোট চালু হয়েছে ভারতে। ওই দু’ধরনের জাল নোট ছাপা ও পাচারে বাংলাদেশে কারা সক্রিয়, কী ভাবে তারা কাজ করছে, সেই ব্যাপারেও হাবিল তথ্য দিতে পারে বলে গোয়েন্দাদের আশা। মঙ্গলবারেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ১১ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় টাকার জাল নোট উদ্ধার এবং সাত জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে। ওই অভিযুক্তদের সঙ্গে হাবিলের যোগসূত্র আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে চায় এনআইএ। তবে এই দফায় বাজেয়াপ্ত করা জাল নোট নতুন পাঁচশো বা দু’হাজার টাকার, নাকি নভেম্বরে বাতিল হওয়া টাকার, তা জানা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE