Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

দই-চিঁড়ে পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে নীতীশ, খোঁচা লালুর

কথাবার্তার মধ্যে গোলাপি পাঞ্জাবির পকেট থেকে একগোছা কাগজ বের করলেন লালু। গলা চড়িয়ে বললেন, ‘‘সীতারাম সিংহ নামে এক জনকে খুনের অভিযোগে নীতীশের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই এফআইআর-টা গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে দেব।

মেজাজে: সাংবাদিকদের  মুখোমুখি লালুুপ্রসাদ। বৃহস্পতিবার রাঁচীতে। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

মেজাজে: সাংবাদিকদের মুখোমুখি লালুুপ্রসাদ। বৃহস্পতিবার রাঁচীতে। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

আর্যভট্ট খান
রাঁচী শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪১
Share: Save:

একগাল খৈনি ছিল মুখে। তাঁর ইশারায় পিক্‌দানি এগিয়ে দিলেন এক অনুগামী। গাল খালি করে লালুপ্রসাদ বললেন— ‘‘এটা এখানে থাক। অনেক কিছু বলার রয়েছে। নীতীশের হাঁড়ি আজ হাটে ভাঙব।’’

গত সন্ধেয় ভেঙেছে বিহারের মহাজোট। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলার শুনানির জন্য সারা রাত সড়কপথে ‘ভ্যানিটি ভ্যানে’ চেপে সকালে পৌঁছেছেন রাঁচী। লালুর মেজাজ তা-ই ছিল তিরিক্ষি।

সিবিআই আদালতে হাজিরা দিয়ে দুপুরে সরকারি অতিথিশালায় ঢুকেই ডেকে নিলেন সাংবাদিকদের। একের পর এক তোপ দাগলেন নীতীশের দিকে। ভোজপুরিতে ছড়া কাটলেন, ‘‘এগো ছোড়ি বুলকি/ হেনে দেখে দহি চূড়া হুলকি।’’ অর্থাৎ, ‘‘বুলকি নামে মেয়েটার মতো দই-চিঁড়ে দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে নীতীশ।’’

কথাবার্তার মধ্যে গোলাপি পাঞ্জাবির পকেট থেকে একগোছা কাগজ বের করলেন লালু। গলা চড়িয়ে বললেন, ‘‘সীতারাম সিংহ নামে এক জনকে খুনের অভিযোগে নীতীশের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই এফআইআর-টা গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে দেব। অনেক দিন চুপ করেছিলাম। এ বার হাটে হাঁড়ি ভাঙার সময় হয়েছে।’’

রাঁচী পৌঁছনোর পর দু’দণ্ড বিশ্রাম নিয়েই টেলিভিশনে চোখ রেখেছিলেন লালু। সকাল ১০টা নাগাদ রাজ্য অতিথিশালার ৪০১ নম্বর ঘরে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, পর্দায় এনডিএ-র মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন নীতীশ। দর্শক লালু। বলে উঠছেন, ‘‘অউর কিতনে রং বদলেঙ্গে। কিতনোকা গোদ মে বৈঠেঙ্গে।’’ এক মুহূর্ত চুপ থেকে ফুঁসে উঠলেন, ‘‘ধোঁকাবাজ।’’ হাজিরার সময় হয়ে যাচ্ছে দেখে তাড়া দিয়ে তাঁকে উঠিয়ে দিলেন দলীয় বিধায়ক ভোলা যাদব।

আরও পড়ুন:

গত চার বছরে বিজেপি ও মোদী সম্পর্কে ঠিক কী কী বলেছিলেন নীতীশ

হাজিরা দিয়ে ফিরেও নীতীশের প্রতি সমান খড়্গহস্ত লালু। বললেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীকে জবাব দিতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য বিহারের অনেকের নখ, চুল দিল্লি পাঠিয়েছিল নীতীশ। অব সব ভুজিয়া বনাকে খা লিয়ে উনলোগ।’’ পরিচিত ভঙ্গিতে মাথা চুলকোতে থাকেন লালু। ঘরে হাসির রোল ওঠে। একটু থেমে বলে ওঠেন, ‘‘বলেছিল মাটিতে মিশে যাব, কিন্তু বিজেপির হাত ধরব না। শেষে ওদেরই কোলে উঠে বসল।’’

মদ নিষেধ নিয়েও নীতীশকে নিশানা করে লালু বলেন, ‘‘মদ বন্ধ হল কোথায়! এখন তো হোম ডেলিভারি মিলছে।’’ কথা বলতে বলতেই অন্যমনস্ক হয়ে যান লালু। বলে ওঠেন, ‘‘পুরো ম্যাচফিক্সিং করল জেডিইউ, বিজেপি।’’ তার পরই সাংবাদিকদের বললেন, ‘‘ব্যস অনেক কথা হল। এ বার আপনারা আসুন।’’ পাশে দাঁড়ানো এক দলীয় কর্মীর দিকে হাত বাড়ালেন লালু। খৈনি মুখে দিয়ে অতিথিশালার ঘরের দিকে এগোলেন একদা মহাজোটের ‘কিং-মেকার’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE