Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

এনডিএ-তে ফিরলেন নীতীশ, মোদী ভুললেন ডিএনএ-র সমস্যা

যে নীতীশ এক সময় মোদীর নাম শুনলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠতেন, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদীর ত্রাণের টাকাও ফেরত পাঠিয়েছিলেন, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করায় বিজেপি-জোট ছাড়লেন, সেই নীতীশ কী করে ‘মোদী-মুখী’ হলেন?

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩৫
Share: Save:

লড়াইটা ছিল ‘বিহারি’ নীতীশ কুমারের সঙ্গে ‘বাহারি’ (বাইরের লোক) নরেন্দ্র মোদীর।

২০১৫-য় বিধানসভা ভোটের সময় মোদী দেখেছিলেন নীতীশের ‘ডিএনএ’-তে সমস্যা! নিতিন গড়কড়ী তো বিহারের ডিএনএ-তেই সমস্যা দেখেছিলেন! এখন অবশ্য ডিএনএ-তিক্ততা ভুলেই এনডিএ-তে ফিরেছেন নীতীশ। মোদীও আর নীতীশের ডিএনএ-তে সমস্যা দেখছেন না। বুধবার রাত থেকে দু’জনের পারস্পরিক টুইট-মাধুর্যে স্পষ্ট, ‘বন্ধুত্বে’র সলতে পাকানো হয়েছে অনেক দিন ধরেই।

যে কথা ঘরোয়া মহলে বিজেপি অস্বীকারও করছে না। বরং বলছে, ভোটের সময় কাদা ছোড়াছুড়ি তো নতুন নয়। সেই তিক্ততা দূরও হয়েছে অনেক দিনই। ভিতরে ভিতরে ঘরে ফেরার প্রক্রিয়াও চলেছে। যে কারণে রাহুল গাঁধীও আজ জানিয়েছেন, ৩-৪ মাস ধরেই তিনি বুঝতে পারছিলেন যে বিরোধী জোট ছেড়ে মোদীর সঙ্গে হাত মেলাবেন নীতীশ।

যে নীতীশ এক সময় মোদীর নাম শুনলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠতেন, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদীর ত্রাণের টাকাও ফেরত পাঠিয়েছিলেন, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করায় বিজেপি-জোট ছাড়লেন, সেই নীতীশ কী করে ‘মোদী-মুখী’ হলেন?

বিজেপির এক সূত্রের মতে, দিল্লি বিধানসভা ভোটে বিজেপির হারের পরে সঙ্ঘ নেতৃত্ব বুঝতে পারেন, নীতীশের মতো পুরনো বন্ধুদের ফেরাতে হবে। তখন থেকেই মোদী শুরু করেন প্রক্রিয়া। ২০১৫ সালের মার্চে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ দেখা করতে আসেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে। তার পরে লালু-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। ডিএনএ-তিক্ততা তখন চরমে উঠলেও কয়েক মাসের মধ্যেই বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারেন, লালু ও তাঁর ছেলেদের ‘দাদাগিরি’ সামলে সরকার চালাতে নাজেহাল নীতীশ জোট ছাড়তে পারলে বাঁচেন।

আরও পড়ুন: তড়িঘড়ি শপথ নীতীশের

এই অস্বস্তিই লুফে নিল বিজেপি। এরই মধ্যে লালু ও তাঁর পরিবারের দুর্নীতি নিয়ে ফের সক্রিয় হল কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। সামনে এল উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে অভিযোগ। কাজে লাগানো হল সুশীল মোদীকে। লালুর দুর্নীতি নিয়ে লাগাতার সরব হলেন সুশীল। নীতীশও বিরোধী দলের সঙ্গে সুকৌশল দূরত্ব বাড়ালেন। সনিয়ার মধ্যাহ্নভোজে যোগ না দিয়ে মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মোদীর মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিলেন। সূত্রের খবর, সেখানেই বন্ধুত্বের হারানো সুরটি ফিরে এল। রাষ্ট্রপতি পদে সঙ্ঘের প্রার্থীকে সমর্থনের পাশাপাশিই নীতীশ দিলেন ‘ঘর ওয়াপসি’র আশ্বাসও।

বিজেপির এক নেতা আজ দিল্লিতে বলেন, ‘‘আসলে লালুর হাত থেকে মুক্তি চাইছিলেন নীতীশ। তেজস্বী তো বাহানা। তবুও দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছিলেন নীতীশ। কিন্তু যখন বুঝলেন রাহুল গাঁধীরা লালুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, তখনই সক্রিয়তা বাড়ল।’’

গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজেই তৈরি হয় চূড়ান্ত চিত্রনাট্য। গত কাল নীতীশের ইস্তফার পর থেকে যে ভাবে চিত্রনাট্য মেনে সব ঘটল, সেটি আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল মোদী-নীতীশের মধ্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE