Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হুলস্থূলই সার, বিমানবন্দরে মিলল না তেজস্ক্রিয়তার নমুনা

প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেই শুক্রবার সকালে চাঞ্চল্য ছড়াল দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এ দিন ন’টা নাগাদ পণ্য বিভাগে কয়েকটি ওষুধের পেটি ফুটো হয়ে হলুদ রঙের তরল বেরোতে দেখেন কিছু কর্মী। সঙ্গে চোখে জ্বালা ধরা অনুভূতি। তেজস্ক্রিয় বিকিরণের খবর ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল, ভাবা পরমাণু গবেষণা সংস্থা ও আণবিক শক্তি বিভাগের অফিসারের।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০৩:০৭
Share: Save:

প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেই শুক্রবার সকালে চাঞ্চল্য ছড়াল দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এ দিন ন’টা নাগাদ পণ্য বিভাগে কয়েকটি ওষুধের পেটি ফুটো হয়ে হলুদ রঙের তরল বেরোতে দেখেন কিছু কর্মী। সঙ্গে চোখে জ্বালা ধরা অনুভূতি। তেজস্ক্রিয় বিকিরণের খবর ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল, ভাবা পরমাণু গবেষণা সংস্থা ও আণবিক শক্তি বিভাগের অফিসারের। কর্মীদের সরিয়ে দিয়ে গোটা এলাকা ঘিরে ফেলেন তাঁরা। আপৎকালীন তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে মুখ খোলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ স্বয়ং। যাত্রীদের উপর এর রেশ না পড়লেও বেশ কিছু ক্ষণের জন্য বিঘ্নিত হয় বিমান থেকে পণ্য খালাসের কাজ।

কিন্তু দিনভর এত হূলস্থূলের পর বিকেলের দিকে আণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এইআরবি) জানিয়ে দেয়, ওই তরলে তেজস্ক্রিয়ের নমুনা মেলেনি। ফলে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই।

ঘটনার সূত্রপাত এ দিন সকালে। ভোর ৪টে ৩৫-এ দিল্লিতে এসে নামে তুরস্ক এয়ারলাইন্সের একটি বিমান। ইস্তানবুল থেকে আসা ওই পণ্যবাহী বিমানে রাজধানীরই এক হাসপাতালের জন্য নিউক্লিয়ার মেডিসিন (রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় পদার্থ দিয়ে তৈরি ওষুধ)-এর দশটি পেটি ছিল। যার এক-একটির ওজন প্রায় ১৩ কেজি। সকাল ৯টা নাগাদ কিছু কর্মী দেখেন, তারই মধ্যে চারটে থেকে তরল চুঁইয়ে পড়ছে। পেটি থেকে কী বেরোচ্ছে তা জানার জন্য ডেকে পাঠানো হয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে (এনডিআরএফ)। তারা এসে ফাঁকা করে দেয় পণ্য বিভাগের ওই চত্বর। কিছু ক্ষণ পরে জানানো হয়, যেখান থেকে ওই তরল বেরোচ্ছিল, তা আটকানো সম্ভব হয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, হলুদ রঙের ওই পদার্থটি আসলে তরল সোডিয়াম আয়োডাইড ক্লাস সেভেন। মূলত থাইরয়েড ও ক্যানসার চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই তরল।

তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়ালেও যাত্রী পরিষেবায় এর কোনও ছাপ পড়েনি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, যেখানে এই গণ্ডগোল সেই পণ্য বিভাগের থেকে যাত্রী টার্মিনাল প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে। ফলে যাত্রীদের এর সংস্পর্শে আসার সুযোগই ছিল না। কী ভাবে এমন কাণ্ড ঘটল তা খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ডিজিসিএ)। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ বোর্ডও (এইআরবি)। বিকেলের দিকে তারাই দাবি করে, আশঙ্কা পুরোপুরি অমূলক। কারণ, নমুনা পরীক্ষা করে তেজস্ক্রিয়তার কোনও আভাসই মেলেনি।

তদন্তকারীরা আরও জানান, সকালে যা চুঁইয়ে পড়তে দেখা গিয়েছিল, তা আসলে এক রকমের জৈব তরল। ওষুধের পেটির উপরে এক পাত্রে সেটি রাখা ছিল। সেখান থেকেই কোনও ভাবে ফুটো হয়ে তা গড়িয়ে পড়ে ওষুধের বাক্সগুলির উপর। তা হলে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের আতঙ্ক ছড়াল কী ভাবে?

তদন্তকারীদের দাবি, ওষুধের পেটিগুলিতে তেজস্ক্রিয় সোডিয়াম আয়োডাইড তরল অবস্থায় ছিল। কৌটগুলির গা ভেজা দেখে প্রথমে মনে হয়েছিল, তরল বোধ হয় বেরিয়ে আসছে সেখান থেকেই। কিন্তু পরে দেখা যায়, তার উপরে রাখা অন্য পাত্র ফুটো হয়ে যাওয়াতেই যত বিপত্তি। ২০১০ সালে তেজস্ক্রিয় বিকিরণে মৃত্যু হয়েছিল রাজধানীরই এক সাফাইকর্মীর। অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন আরও সাত জন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE