Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
বোর্ডের সিদ্ধান্তে বিতর্ক

দু’লক্ষের মধ্যে মাত্র এক হাজার খাতাই কেন

শুরু থেকেই পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একটি বড় অংশ দ্বিতীয় বার অঙ্ক পরীক্ষার বিরুদ্ধে ছিলেন। সে কথা জানিয়ে কয়েক হাজার ফোনও আসে সিবিএসই-র দফতরে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:৩৯
Share: Save:

দু’লক্ষের মধ্যে মাত্র হাজারটি উত্তরপত্র। যা খতিয়ে দেখেই ঠিক হয় নতুন করে অঙ্ক পরীক্ষা নেওয়া হবে না দশম শ্রেণিতে। কেন্দ্রীয় বোর্ডের ওই সিদ্ধান্ত কতটা ঠিক, তা নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকেই। পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে এতে মন্ত্রক নিমরাজি হলেও, ভবিষ্যতে প্রশ্ন ফাঁসের অস্বস্তি এড়াতে আজ প্রাক্তন উচ্চশিক্ষা সচিব বিনয় ওবেরয়ের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রক। বর্তমান ব্যবস্থায় কী ত্রুটি রয়েছে এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে কী ভাবে প্রশ্ন ফাঁস রোখা সম্ভব, তা খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি।

শুরু থেকেই পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একটি বড় অংশ দ্বিতীয় বার অঙ্ক পরীক্ষার বিরুদ্ধে ছিলেন। সে কথা জানিয়ে কয়েক হাজার ফোনও আসে সিবিএসই-র দফতরে। একে জনতার চাপ, অন্য দিকে রাজনৈতিক ভাবেও শাসক বিজেপির একটি বড় অংশ দ্বিতীয় বার পরীক্ষার বিপক্ষে ছিলেন। সেই বার্তা যায় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের কাছেও। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা না নেওয়ার প্রশ্নে চাপ বাড়ছিল সিবিএসই-র উপরে।

সিবিএসই তাই শুরুতেই জানায়, পরীক্ষা নেওয়া হলে শুধু দিল্লি ও হরিয়ানার ছাত্রছাত্রীদের জন্যই হবে। বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চলতি সপ্তাহের শুরুতে মন্ত্রক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বোর্ডের প্রতিনিধিরা।
সিবিএসই যুক্তিতে জানায়, দশম শ্রেণির পরীক্ষা স্রেফ নতুন ক্লাসে ওঠার জন্য। এই নম্বর পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনে সেই অর্থে কোনও প্রভাব ফেলে না। বিষয়টিকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং পরীক্ষা নিলে উল্টে সমস্যা বাড়বে। ফল খারাপ হলে দোষ এসে পড়বে সিবিএসই-র ঘাড়ে। অন্য রাজ্যের পরীক্ষার্থীরা বৈষম্যের প্রশ্ন তুলে আদালতে যেতে পারে। তাই বাধ্য হয়েই পুনর্পরীক্ষার প্রশ্নে সম্মতি জানায় মন্ত্রকও।

মুখরক্ষার উপায় খুঁজতে ঠিক হয়, এক দিকে পুলিশের রিপোর্টকে হাতিয়ার করা হবে। অন্য দিকে, হাজারখানেক উত্তরপত্র দেখে বোঝার চেষ্টা করা হবে— ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র কতটা ছড়িয়ে পড়েছিল। পুলিশ রিপোর্টে জানায়, দিল্লি, হরিয়ানা ও ঝাড়খণ্ডের কিছু অংশেই ওই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তাই ওই এলাকাগুলির বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে হাজারটি অঙ্কের উত্তরপত্র খতিয়ে দেখে বোর্ডের শিক্ষকেরা। কেন্দ্রের বক্তব্য, উত্তরপত্র দেখে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কোনও প্রবণতাই লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু মন্ত্রকের এক কর্তার প্রশ্ন, ‘‘কীসের ভিত্তিতে ওই খাতাগুলিকে বেছে নেওয়া হল?
কোন যুক্তিতে একটি কেন্দ্রকে বাছা হল আর তার পাশেরটিকে ছেড়ে দেওয়া হল? এমন তো হতেই পারে, যেখানকার উত্তরপত্র নেওয়া হয়েছে সেখানে প্রশ্ন ফাঁসের আঁচ পড়েনি। গোটাটাই ধোঁয়াশা।’’

সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও সিদ্ধান্তের ফলাফলে খুশি সিবিএসই বোর্ড। সংস্থার একটি সূত্র বলছে, গতকাল ঘোষণার পরে উদ্বিগ্ন পরীক্ষার্থীদের ফোন আসা একেবারে কমে গিয়েছে। পাশে দাঁড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টও। দশম শ্রেণিতে অঙ্ক ও দ্বাদশ শ্রেণিতে অর্থনীতির পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আজ পাঁচটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে।
কিন্তু শীর্ষ আদালত ওই পাঁচটি মামলাই খারিজ করে দিয়ে জানায়, বোর্ডের সিদ্ধান্তে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। খারিজ হয়ে গিয়েছে সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানোর আর্জিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CBSE সিবিএসই Maths
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE