Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মোদী-যোগীর মুখে রামের সঙ্গে গাঁধীও

স্বাধীনতার সত্তর বছরে মোদীর শপথ, আগামী পাঁচ বছরে, ২০২২-এ স্বাধীনতার ৭৫ বছরে ভারতকে ‘নতুন ভারত’ করে তুলবেন। যে ভারত হবে শক্তিশালী, সমৃদ্ধ ও সুরক্ষিত।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
লখনউ শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৭ ০১:২৮
Share: Save:

উনি উপদেশ দিলেন, রামায়ণের কাঠবিড়ালি হও। ইনি বললেন, শ্রী রাম ভারতের আস্থার প্রতীক। রামায়ণের প্রবচন থেকে অনুপ্রেরণা নাও।

উনি মনে করিয়ে দিলেন, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, যেমন মনের ভাব, তেমনই কাজ। ইনি শোনালেন মথুরা-বৃন্দাবনে কৃষ্ণলীলা। ওঁর মাথায় লাল-গেরুয়া পাগড়ি। এঁর পাগড়ির রং শুধুই গেরুয়া। উনি দিল্লির দরবারে। ইনি লখনউয়ের তখতে। স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় নরেন্দ্র মোদী ও যোগী আদিত্যনাথ, দুজনেই মিলেমিশে রইলেন শ্রী রাম ও কৃষ্ণে।

স্বাধীনতার সত্তর বছরে মোদীর শপথ, আগামী পাঁচ বছরে, ২০২২-এ স্বাধীনতার ৭৫ বছরে ভারতকে ‘নতুন ভারত’ করে তুলবেন। যে ভারত হবে শক্তিশালী, সমৃদ্ধ ও সুরক্ষিত। সেই কাজে দেশের প্রতিটি নাগরিক রামায়ণের কাঠবিড়ালি হতে পারে। রামসেতু তৈরির সময় বানরসেনার সঙ্গে রামায়ণের কাঠবিড়ালি শরীরে সমুদ্রতটের বালি মেখে সেতুতে ছড়িয়ে দিয়েছিল। সেতু তৈরিতে সেটাই তার অবদান। মোদীর বাণী, দেশের ভোলবদলের প্রক্রিয়ায় ১২৫ কোটি মানুষের প্রত্যেকে নিজের মতো অংশ নিতে পারে। দেশের কাজে কেউ ছোট, বড় নয়।

আরও পড়ুন: লালকেল্লার মঞ্চ থেকে সকলকে নিয়ে চলার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

লালকেল্লা থেকে মোদীর এই কথার পরে লখনউয়ের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগী আদিত্যনাথ বুঝিয়েছেন, তিনি নিছক কাঠবিড়ালি নন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী যে দেশের সমৃদ্ধির কথা বলছেন, সেই সমৃদ্ধির পথ উত্তরপ্রদেশের মধ্যে দিয়েই যায়।

আগামী দিনে যোগী মোদীর চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠবেন বলে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা। মোদী ও যোগী একে অপরের পরিপূরক হবেন না প্রতিযোগী— তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। আজ যেমন যোগী বললেন, “প্রধানমন্ত্রী ৫ বছরে দেশের ভোলবদলের যে সঙ্কল্প নিচ্ছেন, তাতে উত্তরপ্রদেশের ভূমিকা নিয়ে কারও মনে সংশয় থাকা উচিত নয়।” যা শুনে রাজনৈতিক শিবিরের কৌতূহলী প্রশ্ন, ‘সংশয় কি তা হলে ছিল’!

মোদী ও যোগী দু’জনেই আজ দেশের উন্নয়নের জন্য সকলের যোগদানের উপরে জোর দিয়েছেন। সেটা করতে গিয়ে এসেছে রাম ও কৃষ্ণের প্রসঙ্গ। দুজনেই বলেছেন, এর মধ্যেই ভারতের ঐতিহ্য গাঁথা। মোদী বলেন, রামসেতু তৈরিতে যেমন ছোট ছোট বানরসেনা থেকে কাঠবিড়ালিও যোগ দিয়েছিল, তেমনই কৃষ্ণের সঙ্গে গোয়ালারা নিজেদের লাঠি উঁচিয়েই তুলে ধরেছিল গোবর্ধন। যোগী বলেছেন, তিনি বৃন্দাবন-মথুরার “কৃষ্ণ সার্কিট”-এর সঙ্গে অযোধ্যা-চিত্রকূটের “রামায়ণ সার্কিট”-কেও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চান। দুজনেই রাম ও কৃষ্ণকে ছুঁয়ে পৌঁছেছেন গাঁধীতে। বলেছেন, গাঁধীর সঙ্গে দেশের মানুষ চরকা-সুতো নিয়ে স্বদেশি আন্দোলনে যোগ দেওয়াতেই স্বাধীনতা এসেছিল। গত কাল গোরক্ষপুরের হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর পরেও যোগী ধুমধাম করে জন্মাষ্টমী পালনের কথা বলায় সমালোচনা হয়। আজ মোদী লালকেল্লা থেকেই জন্মাষ্টমী পর্বের প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, সুদর্শন চক্রধারী মোহন থেকে চরকাধারী মোহন— এটাই ভারতের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্য।

পুরাণের রাম ও কৃষ্ণ, ইতিহাসের গাঁধী— মোদী ও যোগী দুইকেই মিশিয়ে দিয়েছেন। পুরাণ ও ইতিহাসে বিশেষ ফারাক রাখেননি কেউই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE