মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল দাবি করছেন— নোট বাতিলের পর অনলাইনে বেতন ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার কাজে আশাতীত সাড়া মিলেছে অসমের চা বাগানে। ‘মন কি বাত’-এ অসমের চা বাগানের কথা উল্লেখ করে গর্বপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু চা বাগানগুলিতে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কমছে না। অনলাইন বেতন বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন জেলার চা শ্রমিকরা নামলেন আন্দোলনে।
সরকারের রাশ হারালেও, রাজ্য অর্থনীতির শিরদাঁড়া চা বাগানগুলিতে এখনও ক্ষমতাবান কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন অসম চা মাজদুর সঙ্ঘ। তাই প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় নীতিগুলির বিরুদ্ধে চা শ্রমিকদের একজোট করতে পেরেছে কংগ্রেস। অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার দাবি, রাজ্যের চা বাগানে নথিভুক্ত সাত লক্ষ ৭৯ হাজার চা শ্রমিকের মধ্যে ছ'লক্ষ ৪২ হাজার শ্রমিকের অ্যাকাউন্ট ইতিমধ্যে খোলা হয়েছে। এর ফলে ভুয়ো শ্রমিকদের হিসেবও সামনে আসবে। সরকার জানিয়েছে, চা বাগানের যে সব শ্রমিকের বেতন ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হবে তাঁদের সরকার ১০০ টাকা করে ভাতা দেবে। শর্মার মতে, নোট বাতিলের পর অসমের চা বাগানগুলিই সরকারি নীতির সফলতম উদাহরণ।
কিন্তু ব্রহ্মপুত্র উপত্যাকার চা শ্রমিকরা ‘চা মজদুর সঙ্ঘ’-এর নেতৃত্বে শুরু করেছেন আন্দোলন। গত কাল উজানি অসমের বিভিন্ন স্থানে চা শ্রমিকরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি ছিল, আগের মতোই চা শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে হাতে-হাতে। শ্রমিকদের রেশন বন্ধ করা চলবে না। বর্ধিত হারে মজুরি দিতে হবে।
সরকার দাবি করেছিল, সব চা বাগানে এটিএম বসানো হবে। কিন্তু তা কার্যকর হতে অনেক দেরি। শ্রমিকদের দাবি, টাকা তোলার জন্য এটিএমে যেতে কর্মদিবস নষ্ট হচ্ছে। খরচ হচ্ছে অনেক টাকা। বেশিরভাগ চা শ্রমিক নিরক্ষর। তাঁরা অনলাইন বেতন বা এটিএমে টাকা তোলার পদ্ধতি বুঝতে পারেননি। চা মালিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, চা শ্রমিকরা পয়লা জানুয়ারি থেকে ১৩৭ টাকা করে বেতন পাবেন। কিন্তু এখনও বেতন মিলছে দিনপ্রতি আগের
মতোই ১২৬ টাকা। তা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাগানগুলিতে।
পাশাপাশি, কেন্দ্র চা শ্রমিকদের রেশন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেস আমল থেকেই চলছে বিক্ষোভ। কংগ্রেস আমলেই চা মজদুর সঙ্ঘের আবেদনে সাড়া দিয়ে হাইকোর্ট কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। কিন্তু কয়েকটি বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২১ জানুয়ারি থেকে চা শ্রমিকদের রেশন দেওয়া বন্ধ হবে। গত ছ’দশক ধরে চলা নিয়মমতো চা বাগান কর্তৃপক্ষ আগে সরকারের কাছ থেকে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কুইন্টলপ্রতি দরে চাল কিনত। তা শ্রমিকদের দেওয়া হতো। কিন্তু কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে, খাদ্য ও গণবন্টন ব্যবস্থার ওই চাল ভর্তুকিমূল্য
চা শ্রমিকদের দেওয়া হবে না। তাই বাগান মালিকদের ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় খোলা বাজার থেকে চাল কিনতে হচ্ছে। প্রতি মাসে রাজ্যে চা শ্রমিকদের ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়। চা শ্রমিকরা বেতন ছাড়াও সপ্তাহে ৬ কিলো ৯২ গ্রাম রেশন পেতেন। কেন্দ্র জানিয়েছে, খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় চা শ্রমিকরাও পড়ছেন। তাই তাঁদের আলাদা করে রেশন দেওয়া হবে না।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, চা শ্রমিকদের রেশন বন্ধ করার তীব্র প্রতিবাদ করেন। জানান, কেন্দ্র প্রথম থেকেই রাজ্যের চা শ্রমিকদের প্রতি বৈমাত্রেয় মনোভাব নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘চা শ্রমিকদের জোর করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে অনলাইনে বেতন দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি উন্নত হলে তাঁরা নিজেরাই অ্যাকাউন্ট খুলবেন। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন কম, রেশন নেই, ভার ঘর নেই। এটিএম নিয়ে কী করবেন?’’ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘ইন্দিরা আবাস যোজনার নাম বদলে কেন্দ্র হাস্যকর ভাবে নতুন প্রকল্প উদ্বোধন করছে।’’
শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী পল্লবলোচন দাস জানান, কোনও বাগানে এখনও রেশন বন্ধ হয়নি। এ নিয়ে কেন্দ্রের কোনও নির্দেশ জারি করা হয়নি। রেশনের নামে রাজনীতি করছে চা মজদুর সঙ্ঘ। মন্ত্রীর দাবি, সঙ্ঘের সঙ্গে মালিক পক্ষের গোপন আঁতাত রয়েছে। রেশন বন্ধ করা চা বাগানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy