কুলভূষণের মুখোমুখি তাঁর মা ও স্ত্রী। পিটিআইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।
কাচের পুরু পর্দার ওপার থেকে মাকে মঙ্গলসূত্র এবং টিপ ছাড়া অবস্থায় দেখে চমকে উঠেছিলেন কুলভূষণ যাদব। প্রথম প্রশ্নটাই করেছিলেন, ‘বাবা ঠিক আছেন তো?’
আজ সকালে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ফের কথা বলেন পাক জেলবন্দি কুলভূষণের মা অবন্তীর সঙ্গে। বিদেশমন্ত্রীকে এ দিন অবন্তী জানিয়েছেন, শুধু পুত্রবধূর নয়, তাঁরও মঙ্গলসূত্র খুলতে বাধ্য করেছে পাক প্রশাসন।
আজ সংসদের দুই কক্ষে কুলভূষণকে নিয়ে বিবৃতি দিতে গিয়ে এ কথা জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। লোকসভার অধিবেশন কক্ষে ট্রেজারি বেঞ্চে বারবার আওয়াজ উঠেছে, ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’। ক্ষুব্ধ বিদেশমন্ত্রীর অভিযোগ, গোটা বিষয়টিকে নিজেদের প্রচারের হাতিয়ার করার জন্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে ইসলামাবাদ। কুলভূষণের পরিবারকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলা হয়েছে।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু আজ সকালে সংসদ শুরু হওয়ার আগে সব দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, কারণ এর একটি আন্তর্জাতিক দিক রয়েছে। আজ সংসদে কী হচ্ছে, তার দিকে নজর রাখছে পাকিস্তান-সহ অনেক দেশই। সুষমার বিবৃতির পরে বিরোধী নেতারা উঠে দাঁড়িয়ে জানান, কুলভূষণের পরিবারকে যে অপমান পাকিস্তান করেছে, তা সামগ্রিক ভাবে গোটা দেশবাসীর অপমান। কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদের দাবি, কুলভূষণ যত দিন পাকিস্তানের জেলে থাকবেন, তত দিন তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ইসলামাবাদকে। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকার বিষয়টি নিয়ে কী করছে, সেটাও স্পষ্ট করে জানাক। শুধু কেঁদে লাভ নেই!’’ তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘আমরা এই বিষয়ে সরকারের বিবৃতি দেখেছি। আমার দল এই বিবৃতির প্রতিটি শব্দকে সমর্থন করে।’’
আরও খবর: তিন তালাক: লোকসভায় চুপ তৃণমূল, কারণ কি সংখ্যালঘু ভোট?
কুলভূষণের সঙ্গে তাঁর পরিবারের বৈঠকের পরের দিনই বিদেশ মন্ত্রক যে কড়া বিবৃতি প্রকাশ করেছিল, সেটি আজ নিজের বক্তব্যে ফের তুলে ধরেছেন সুষমা। বলেছেন, মা-ছেলে তাঁদের মধ্যে মাতৃভাষায় কথা বলবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যত বারই তাঁরা তা করতে গিয়েছেন, মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিদেশমন্ত্রী সরব হন, ‘জুতো-কাণ্ড’ নিয়েও। কুলভূষণের স্ত্রীর জুতোয় রেকর্ডার রয়েছে — পাকিস্তানের এই প্রচারকে ‘নির্জলা মিথ্যে’ দাবি করে সুষমার বিদ্রুপ, ‘‘তা-ও ভাল, ওরা বলেনি যে জুতোতে বোমা রাখা আছে!’’ তাঁর প্রশ্ন, কুলভূষণের স্ত্রী ওই জুতো পরেই এখান থেকে দুবাই যান এয়ার ইন্ডিয়ায়। তার পর এমিরেটস-এর বিমানে ইসলামাবাদ যান। তাঁর জুতোয় যদি কিছু লাগানো থাকত, তা হলে এতগুলো বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি কীভাবে গেলেন? এর পরে রাতেই পাক বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানায়, কুলভূষণের স্ত্রীর জুতো থেকে তারা একটি মেটাল চিপ পেয়েছে। জুতো-কাণ্ডে সর্বত্র কড়া সমালোচনার মুখে পড়ার পরে ও কুলভূষণের পরিবার ভারতে ফেরার পরে পাক বিদেশ মন্ত্রকের এই দাবি নেহাতই ‘হাস্যকর ও ভিত্তিহীন’ বলে জানিয়েছে দিল্লি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy