Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

চাতকের মতো মোদীর ‘অচ্ছে দিন’ এ বার বৃষ্টির প্রতীক্ষায়

নরেন্দ্র মোদীর ‘অচ্ছে দিন’-এর হাওয়ায় এ বার বাধ সাধল ‘এল নিনো’। গত সোমবারই প্রধানমন্ত্রী মোদী দাবি করেছিলেন ‘অচ্ছে দিন এসে গিয়েছে’। কিন্তু, মঙ্গলবার বর্ষা নিয়ে মৌসম ভবনের দেওয়া চূড়ান্ত পূর্বাভাস কিন্তু সেই দাবিকে ওলোট-পালোট করে দিতে পারে। ওই পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই মরসুমে গোটা দেশে বর্ষা হবে স্বাভাবিকের ৮৮%-৯০%। স্বাভাবিকের ৯৬ শতাংশের কম হলে তাকে ঘাটতি হিসেবে ধরা হয়। কাজেই এই পূর্বাভাস এবং বাস্তব এক হয়ে গেলে দেশে খরা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দেবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ১২:২৮
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর ‘অচ্ছে দিন’-এর হাওয়ায় এ বার বাধ সাধল ‘এল নিনো’।

গত সোমবারই প্রধানমন্ত্রী মোদী দাবি করেছিলেন ‘অচ্ছে দিন এসে গিয়েছে’। কিন্তু, মঙ্গলবার বর্ষা নিয়ে মৌসম ভবনের দেওয়া চূড়ান্ত পূর্বাভাস কিন্তু সেই দাবিকে ওলোট-পালোট করে দিতে পারে। ওই পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই মরসুমে গোটা দেশে বর্ষা হবে স্বাভাবিকের ৮৮%-৯০%। স্বাভাবিকের ৯৬ শতাংশের কম হলে তাকে ঘাটতি হিসেবে ধরা হয়। কাজেই এই পূর্বাভাস এবং বাস্তব এক হয়ে গেলে দেশে খরা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দেবে। ওই পূর্বাভাস প্রকাশ্যে আসার পর কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন-ও সেই আভাস দিয়েছেন। দেশে খরা পরিস্থিতি তৈরি হলে, তার প্রভাব পড়বে সমাজের সর্ব স্তরে। কাজেই মোদীর ‘অচ্ছে দিন’ আপাতত চাতক পাখির মতো বৃষ্টির প্রতীক্ষায়।

কিন্তু, কী এমন হল যার জেরে বৃষ্টির ঘাটতি দেখা দেবে?

মৌসম ভবন জানিয়েছে, এর কারণ এল নিনো। তারই দাপটে এ বার বর্ষা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই কম হবে। ফলে ভরা বর্ষাকালেও বৃষ্টি না হওয়ার আশঙ্কা। আর সেই আশঙ্কাকে সত্যি করেছে কেরল। গত ১০ বছর ধরে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মেনে ১ জুন সে রাজ্যে বর্ষা ঢুকে পড়ে। কিন্তু, ‘এল নিনো’ সেই হিসেব গুলিয়ে দিয়েছে। রোজ একটু একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছে বর্ষা আসার দিন। কেরলে বর্ষা পিছিয়ে যাওয়া মানে গোটা দেশ-সহ পশ্চিমবঙ্গেও দেরিতে আসবে বর্ষা। একে দেরিতে শুরু হবে, তায় আবার ঘাটতি— এই দুয়ের কোপে দেশের আর্থিক হাল ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর খরা পরিস্থিতি তৈরি হলে সবচেয়ে আগে তার প্রভাব পড়বে কৃষকদের উপর।

কেন?

এ দেশের জনসংখ্যার প্রায় তিন-পঞ্চমাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উত্পাদনের প্রায় ১৫ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। অথচ মোট কৃষিজমির অর্ধেকেরও বেশিতে উন্নত সেচ পরিষেবা নেই। কাজেই খরা হলে ফসলের ক্ষতি হবে ভয়ানক ভাবে। কিছু দিন আগেই অনাবৃষ্টির চোখরাঙানি দেখেছেন কৃষকেরা। এর পরেই অকালবর্ষণ হয় দেশে। ফলে, পর পর দু’মরসুমে প্রচুর পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। অনাবৃষ্টির সময়ে মজুত খাদ্যশস্য জোগান দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে সরকার। কিন্তু, গত মার্চ-এপ্রিলের অকালবর্ষণ গোটা ভারতেই প্রভাব ফেলে। উত্তর বা উত্তর-পূর্ব ভারতে ওই দুই মাসে স্বাভাবিকের থেকে ৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়। আবার মধ্য ভারত বা উত্তর-পশ্চিম ভারতে স্বাভাবিকের থেকে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল কোথাও ১৫০ শতাংশ, কোথাও ২০০ শতাংশের বেশি। সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার আগেই ফের খরার ভ্রুকুটি কৃষকদের বেশ চাপে রেখেছে। একেই ঋণ মেটাতে নাজেহাল অবস্থা তাঁদের। তার উপর ফসল নষ্ট হওয়ার ফলে তাঁদের আয় কমবে। এমনিতেই দেশে কৃষক আত্মহত্যার পরিসংখ্যানে জেরবার সরকার। তার মধ্যে এ হেন পরিস্থিতি মোদী সরকারকে মোটেও স্বস্তিতে রাখছে না।

সরকারের সাফল্য নিয়ে মোদী সরকার যে ভাবে সরব হয়েছে, তার ঠিক উল্টো চিত্র এনে দিতে পারে এই অনাবৃষ্টি। একেই চাষি-বিরোধী তকমা রয়েছে এই সরকারের গায়ে। বোঝার উপর শাঁকের আটির মতো এই বৃষ্টিহীন দিন মোদীর ‘অচ্ছে দিন’কে রুখে দিতে পারে বলে অর্থনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা।

মৌসম ভবনের পূর্বাভাস যাতে সত্যি না হয়, সে জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার কথা বলেছেন হর্ষ বর্ধন। সে প্রার্থনা কি শুধু খরার হাত থেকে বাঁচতে, নাকি এল নিনোর হাত থেকে ‘অচ্ছে দিন’কে বাঁচাতেও!

—ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE