Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিহার বুদ্ধিমান, মোদীর জবাব ডিএনএ বিতর্কে

বিহারের প্রাক্-নির্বাচনী ‘পরিবর্তন র‌্যালি’-র চতুর্থ ও শেষ প্রচার সভায় ‘উন্নয়ন’-এর বিষয়টিতেই জোর দিয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদী। আজ নতুন করে কোনও চমক ছিল না তাঁর বক্তৃতায়। তবে তিনি যে বিহারের নির্বাচনী প্রচারের অভিমুখকে ‘জাত-পাত ও সাম্প্রদায়িকতার’ পরিবর্তে উন্নয়নমুখী লড়াইয়ের খাতে বইয়ে দিতে পেরেছেন, তা জানিয়ে কার্যত নিজেই নিজের পিঠ চাপড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

যুদ্ধের মেজাজে। ভাগলপুরে দলের প্রচারে মোদী। মঙ্গলবার শ্যামলী দে-র তোলা ছবি।

যুদ্ধের মেজাজে। ভাগলপুরে দলের প্রচারে মোদী। মঙ্গলবার শ্যামলী দে-র তোলা ছবি।

দিবাকর রায়
ভাগলপুর শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

বিহারের প্রাক্-নির্বাচনী ‘পরিবর্তন র‌্যালি’-র চতুর্থ ও শেষ প্রচার সভায় ‘উন্নয়ন’-এর বিষয়টিতেই জোর দিয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদী। আজ নতুন করে কোনও চমক ছিল না তাঁর বক্তৃতায়। তবে তিনি যে বিহারের নির্বাচনী প্রচারের অভিমুখকে ‘জাত-পাত ও সাম্প্রদায়িকতার’ পরিবর্তে উন্নয়নমুখী লড়াইয়ের খাতে বইয়ে দিতে পেরেছেন, তা জানিয়ে কার্যত নিজেই নিজের পিঠ চাপড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
গত ২৫ বছর ধরে বিহার লালু-নীতীশের শাসনে রয়েছে। বিহার নির্বাচনের আগে গত আড়াই দশকের উন্নয়ন-বরাদ্দের হিসেব চান মোদী। গত রবিবার পটনার গাঁধী ময়দানে কংগ্রেস-আরজেডি-জেডিইউয়ের ‘স্বাভিমান সভায়’ মোদীর কাছে তাঁর শাসনকালের খতিয়ান চেয়েছিলেন লালু-নীতীশ-সনিয়া। সেই খতিয়ান দেওয়ার কোনও চেষ্টাই করেননি মোদী। বরং জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১৯ সালে, লোকসভা ভোটের আগে এ ব্যাপারে তাঁর যা বলার বলবেন। এখন বিহারের ভোটে বিহারের হিসেবটা তো লালু-নীতীশ দিক। বিহার রাজনীতিকদের একাংশ অবশ্য বলছেন, নীতীশের সঙ্গে জোট করে প্রায় ন’বছর রাজ্যে ক্ষমতা ভোগ করেছে বিজেপি। তাই সে সময়কার ভালমন্দের দায় তাদেরও কম নয়।
গত সফরেই তিনি বিহারের জন্য ১ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেন। বিহার রাজনীতিতে এই ঘোষণা স্বাভাবিক ভাবেই আলোড়ন তুলেছে। নীতীশ প্রথমে এই প্যাকেজকে ‘নতুন বোতলে পুরনো মদের’ মতো বলে খারিজ করতে চেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁকেও ভোটের আগে উন্নয়নের কথা বলতে হয়েছে। ক্ষমতায় এলে নীতীশ আগামী পাঁচ বছরের শাসনকালে ২ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা উন্নয়ন খাতে খরচ করবেন বলে জানিয়েছেন। মোদী আজ সেই ঘোষণাকেই বিহারবাসীর সঙ্গে ধোঁকাবাজি বলে বর্ণনা করেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ তো পাঁচটি বার্ষিক বাজেটেরই যোগফল। তা হলে নতুনটা কী বললেন নীতীশ?’’ এর পরেই মোদীর প্রশ্ন, ‘‘আগামী পাঁচ বছরে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিহার পাবে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। তা হলে বাকি টাকাটা কোথায় যাবে?’’ মোদীর কথায়, ‘‘উনি (পড়ুন নীতীশ) বিহারবাসীর সঙ্গে তঞ্চকতা করছেন। তাঁদের বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিহারবাসী অত্যন্ত বুদ্ধিমান। তাঁরা এই ধোঁকাবাজি ধরে ফেলবেন।’’

গয়ায় পরিবর্তন র‌্যালির প্রথম সভায় নীতীশের ডিএনএ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মোদী। ‘ডিএনএ বিতর্ক’-কে সামনে রেখে নীতীশ বিষয়টিকে অস্মিতার সঙ্গে জুড়ে বিহারবাসীর অপমান হিসেবে তুলে ধরতে উদ্যোগী হন। আজকের সভায় ডিএনএ প্রসঙ্গ না তুলেও কৌশলে নীতীশের থেকে বিহারবাসীকে আলাদা করেছেন মোদী। লালু-নীতীশ নিজেদের সমাজবাদী, রামমনোহর লোহিয়া-জয়প্রকাশ নারায়ণের শিষ্য বলে পরিচয় দেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘‘সনিয়ার সঙ্গে গাঁধী ময়দানের সভা তো ‘তিলাঞ্জলি সভা’।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিহারের রাজনীতিতে জয়প্রকাশ নারায়ণ, রামমনোহর লোহিয়া, কর্পূরি ঠাকুর গুরুত্বপূর্ণ।’’ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এঁরা জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব পেয়েছিলেন। ইন্দিরা গাঁধীর বিরোধিতা করার জন্য জরুরি অবস্থায় জেলে যেতে হয়েছিল জেপিকে। নরেন্দ্র মোদী বিহারবাসীর সেই স্মৃতিকে উসকে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE